ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মহানবীকে (সা.) কটূক্তি: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব পাস

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২১ জুন, ২০২২ ১০:০১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৪৬ বার


মহানবীকে (সা.) কটূক্তি: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব পাস

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব পাস করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা। সোমবার (২০ জুন) রাজ্যটির বিধানসভায় এই প্রস্তাব পাস হয়।

তবে মহানবী (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়টি বর্তমানে বিচারাধীন হওয়ায় পাস হওয়া নিন্দা প্রস্তাবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। মঙ্গলবার (২১ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রমাগত ব্যর্থতা থেকে মানুষের মনোযোগ সরানোর জন্য বিভাজনমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্ররোচিত না হওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার রাজ্যের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্য সম্পর্কে প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এসময় তিনি বলেন, ‘রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছি। কিন্তু সারা দেশে যেভাবে সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা হয়েছে, তা আসলে মূল বিষয় কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা। ধর্মের নামে, বিজেপির এক মুখপাত্রের মন্তব্যের জেরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা চলছে। এ ধরনের মন্তব্য করা এবং তাকে ঘিরে উসকানি দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’

এরপর সকলের কাছে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রস্তাব হাত তুলে সমর্থন করার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে সেই নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বিধানসভার অধিবেশনে সোমবার মমতা বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাইদের কাছে আমার আবেদন, আপনারা রাস্তা ও রেলপথ অবরোধ করবেন না, দয়া করে দোকান ভাংচুর করবেন না। বিজেপিকে কোনো সুবিধা দেবেন না। সময় এসেছে সংযম ও ধৈর্য দেখানোর।

‘হাওড়া, ডোমকল এবং রেজিনগরে কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি তাদের ক্ষতিপূরণ দেবো। যারা এ ধরনের সহিংসতা ঘটিয়েছে তাদের প্রতি আমার কোনো সহানুভূতি নেই। আমি পুলিশকে বলেছি ওই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজ্যে সহিংসতা হলে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু এই মহিলা (নুপুর শর্মা) কীভাবে এখনও গ্রেপ্তার হলেন না? আমি জানি তাকে গ্রেপ্তার করা হবে না। তিনি কলকাতা পুলিশের কাছে চার সপ্তাহের জন্য সময় চেয়েছিলেন। আজ তাকে পুলিশের সামনে হাজির হতে হবে।’

অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রতিবাদ জানান এবং পরে ওয়াকআউট করেন।

উল্লেখ্য, নুপুর শর্মার বিরুদ্ধে কলকাতার নারকেলডাঙা থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। এফআইআর অনুযায়ী, ২০ জুনের মধ্যে তাকে হাজিরা দিতে হতো। কিন্তু সোমবার সময়সীমা শেষ হলেও হাজিরা দিতে পৌঁছাননি নুপুর। কলকাতায় প্রাণের আশঙ্কা থাকার দাবি করে ৪ সপ্তাহ সময় চেয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত ওই মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন।

তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি অভিযুক্তদের মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। আর এর রেশ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করে। পরে বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।


   আরও সংবাদ