ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২২ ১০:৩২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৩৫ বার
রংপুর নগর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের পথ। বদরগঞ্জের যমুনেশ্বরী নদীর কোলে সরগরম পশুর হাট। সোমবার রাত; ঘড়ির কাঁটা ৯টার ঘর পেরোল কেবল। তুমুল হাঁকডাক, চারদিকে হৈ-হুল্লোড়। ব্যস্ততার চোটে কারও নেই অবসর। রাজধানী ঢাকা আর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাইকাররা হাট থেকে পশু কিনছেন আর ট্রাকে তুলছেন। ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত চাটগাঁইয়া চালক জসিম মিয়া। ছোট-বড় মিলিয়ে ১৯ গরুর ঠাঁই তাঁর ট্রাকে।
প্রতিবেদনের প্রয়োজনে গরুর ব্যাপারী সেজে ট্রাকে সওয়ার চালকের পাশে। পান চিবুতে চিবুতে জসিম মিয়াকে প্রশ্ন ছুড়লাম- মামা, রাস্তার অবস্থা কী? চান্দাবাজ-টান্দাবাজ আছে নাকি? চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষায় চালক উত্তরে বললেন, '১০০ আঁর ৫০ টিয়ার নোডর বান্ডিল লইয়েরে বইয়ুন। টের পাইবেন, ট্যায়া কেনে নামি যারগুই।'
বদরগঞ্জের যমুনেশ্বরী হাট থেকে বের হয়ে শুধু উঠেছে ট্রাকের গতি। ট্রাকের সামনের কাচ গলে দূর থেকে মনে হলো আঁধারের বুকে জোনাক পোকা। খানিকটা এগোতেই কাটল ঘোর। খেলছে আলোর বিচ্ছুরণ। কিঞ্চিৎ ভয়ে চালক জসিমের কাছে জিজ্ঞাসা- কী হয়েছে? জানলাম, এটা বদরগঞ্জের নারিরহাট এলাকার চাঁদাবাজদের কাজ। ট্রাক দেখলেই শুরু হয় টর্চের আলোর খেলা। ওরা সংখ্যায় ১০ থেকে ১২; হাতে হাতে লাঠি। ট্রাক থামিয়েই মোটা গোঁফওয়ালা একজন শুরু করলেন গরু গণনা। ট্রাকে ১৯ গরু নিশ্চিত হয়ে দাবি করলেন গরুপ্রতি ৩০০ টাকা। সে হিসাবে টাকার অঙ্কটা ৫ হাজার ৭০০। চালক জসিমের সঙ্গে কথাযুদ্ধের একপর্যায়ে ১ হাজার টাকায় রফা। চাঁদাবাজদের এ রকম দাপট দেখা গেল পথে পথে। টর্চের আলো আর লাঠির ইশারায় রংপুর সদরের কারুপল্লি, কারুরহাট ও ছিলকাবাজারেও থেমে যায় ট্রাক। তবে এসব স্থানে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় থামে দুর্বৃত্তদের রংবাজি।
পশুবাহী ট্রাক ছুটছে। রংপুর নগর বাইপাস রোড পেরিয়ে মডার্ন মোড়। সেখানে বেশ কিছু গাড়ির জটলা। ট্রাকগুলো সড়কের একপাশে। দূর থেকে দুই যুবকের ইশারা। চালক গাড়ি না থামিয়ে জানালা দিয়ে দুটি ১০০ টাকার নোট পেঁচিয়ে ছুড়ে দিলেন। সাধারণ চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই, কী হলো! এরপর ভাঙা সড়ক পেরিয়ে রংপুরের পীরগঞ্জে এসে আবারও একই ছবি। কথা হচ্ছে টর্চলাইটের ইশারায়। দেখলে মনে হবে, হাইওয়ে রেস্তোরাঁয় নৈশভোজের জন্য ডাকা হচ্ছে। আসলে তারা চাঁদাবাজ। সেখানে দিতে হলো ৩০০ টাকা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ট্রাকের সামনে লাঠি হাতে তেড়ে এলো তিনজন। জনপ্রতি ১০০ টাকা দিয়ে গাড়ি ছুটল। বগুড়া সীমান্তের মাটিডালি মোড়ে চালকের চোখ-বরাবর পড়ল টর্চের আলো। গাড়ির গতি কিছুটা কমিয়ে দিতে হলো ৫০০ টাকা। ট্রাকে বসা ব্যাপারী রফিক বললেন, এখানকার চাঁদাবাজরা বেশ ভদ্র। গাড়ির কাছে আসে না। ইশারায় সব চলে। তবে টাকা না দিয়ে পার হওয়ার সুযোগ নেই।
রাত দেড়টার দিকে গাড়ি যখন বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পার হয়, তখন ধুনট মোড়ে ২০০ টাকা দিতে হলো। এরপর মহাসড়কে আর কাউকে দেখা যায়নি। জেলার শেষ প্রান্ত চান্দাইকোনা গিয়ে যানজটে আটকে যায় ট্রাকটি। সেখানে খালি গায়ে দেখা গেল চার-পাঁচ যুবককে। তারা নাকি টোকাই চাঁদাবাজ, এমনটাই বললেন চালক জসিম। এই যুবকরা ৫০ টাকা নিয়ে যেতে দিল। যানজট পেরিয়ে ট্রাক যখন সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়ে, সেখানে দেখা মিলল চেকারের মোড়কে চাঁদাবাজ। দিতে হলো ৫০০ টাকা। এরপর যমুনা সেতু পার হয়ে টাঙ্গাইলে ঢোকার মুখে আবারও ৩০০ টাকা দিতে হলো বাঁশ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা চার-পাঁচ যুবককে। জানাল, তারা মহাসড়কে নিরাপত্তা দেয়। গাড়িটি চন্দ্রার মোড় হয়ে বাইপাইল সড়কে ঢুকে গেলে সেখানে ছুড়ে মারতে হলো ২০০ টাকা। বাইপাইল হয়ে এবার গন্তব্য আবদুল্লাহপুরের দিকে।
পথে পথে যানজটের ধকল আর চাঁদাবাজদের বাড়াবাড়িতে ভোরে বিষণ্ণতা ভর করেছে চালক জসিমের চোখেমুখে। ঘড়ির কাঁটা ৬টা ছুঁল। ট্রাক উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে। সামনে যুবকদের আনাগোনা। জানাল, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গায় একটি হাট বসেছে। হাটের ইজারাদার নুর হোসেন। তিনি তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। যুবকদের একজন বলল, 'মহাজন ১ কোটি ২০ লাখে হাট ডাকছে। হয় এখানে গরু ঢোকাও, না হলে ১০ হাজার টাকা দাও।' চালক জসিমের সঙ্গে ঠিক কত টাকায় আপস হলো, টের পাওয়া গেল না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর এলাকার ফাঁকা মহাসড়ক পেরিয়ে খিলক্ষেত এলাকায় গাড়ির জট। সড়কজুড়ে এলোমেলো দাঁড়ানো পশুবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকের সামনে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে অর্ধশত যুবক। ট্রাক থেকে এক ব্যক্তিকে নামিয়ে জবরদস্তি করে নিয়ে যাচ্ছিল তাদেরই কয়েকজন। ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গরুবোঝাই ট্রাকগুলো জোর করে তাদের হাটে ঢোকানোর চেষ্টা-তদবির চলছিল। আর ট্রাক না ঢোকালে দিতে হচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা।
জসিমের ট্রাক ৩০০ ফিট হয়ে যাবে চট্টগ্রামের পথে। খিলক্ষেতে নেমে প্রতিবেদনের প্রয়োজনে এবার রাজধানীর হাটে হাটে অনুসন্ধানী চোখ।
চাঁদার 'ভূত' ঢাকা মহানগরেই বেশি :মহাসড়কে চাঁদা কিংবা নানা ভোগান্তি হলেও সেটা সহনীয় মনে করেন ট্রাকচালক ও ব্যাপারীরা। পথে চাঁদাবাজরা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় গাড়ি ছেড়ে দেয়। তবে মূল সমস্যা ঢাকা মহানগরের ভেতরে। এখানে চাঁদা আদায় হচ্ছে নতুন পদ্ধতিতে। ট্রাক আটকে যে যার হাটে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। কখনও করা হয় চালককে মারধর। হাটে ঢুকতে না চাইলে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা।
চালক ও ব্যাপারীদের তথ্য বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর, খিলগাঁও রেলগেট বাজার, মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের এলাকা এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় হাট বসছে। এসব এলাকায় লাঠি হাতে ২০ থেকে ৫০ যুবক পশুবাহী ট্রাকের অপেক্ষায় দিন-রাত বসে থাকে।
এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) গাবতলী (স্থায়ী), বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত এলাকার খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গাসংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ ফিট সড়কসংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল ও যমুনা হাউজিং কোম্পানির ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীনের খালি জায়গা এবং মোহাম্মদপুর বছিলায় ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গায়ও পশুর হাট বসছে। হাট ঘিরে সেখানেও চলছে সরব চাঁদাবাজি।
ট্রাকচালক মনিরুল বলেন, 'আমি গরু নিয়ে যাব চট্টগ্রাম, উপায় নেই। ঢাকা পার হতেই দিন পার। পদে পদে বাধা আর চাঁদা দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছি।' কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হওয়া ট্রাকচালক আমির আলী মণ্ডল বলেন, 'আমি ধারণা করেছিলাম, দুপুরের মধ্যে কক্সবাজার পৌঁছাব। দুপুর হয়ে গেল ঢাকাতেই। এখন দেখছি, ভোর হবে গন্তব্যে পৌঁছাতে।'
চাঁদাবাজদের পেছনে ছায়া হয়ে আছে পুলিশ :চাঁদাবাজির ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও ট্রাকচালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। চাঁদাবাজদের সঙ্গে ছায়া হিসেবে থাকে পুলিশ। দেখা যায়, মহাসড়কের হাটিকুমরুল মোড়ে চাঁদাবাজ যুবকদের টাকা না দিলেই চলে আসে পুলিশ। তারা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে নানা হয়রানি করে। ট্রাকচালক জসিম বলেন, 'আমরা দূরপাল্লার গাড়ি চালানোর সময় লুঙ্গি পরি। পুলিশ এসে কাগজপত্র ঠিক থাকলেও কেন লুঙ্গি পরেছেন, কেন সিটবেল্ট বাঁধেননি, কেন হেডলাইটের আলো কম, কেন জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন- এসব নানা ফন্দিফিকির করে মামলা দেয়। মামলা এড়াতেই আমরা চাঁদা দিয়ে দিই।'
ব্যাপারীদের শঙ্কা :গরু ব্যবসায়ী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পথে পথে এভাবে চাঁদা আদায়ের কারণে পশুর দাম অনেকটাই বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। সে সঙ্গে সাম্প্রতিক বন্যা এবং পশুখাদ্যের দর বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও যোগ হতে পারে। গত ২৩ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়, পশু পরিবহনে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি হয়; স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটের মালিকরা অযৌক্তিক হাসিল নেন। এসব বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, 'অনেক ইজারাদার জোর করে তাঁদের হাটে খামারিদের ট্রাক নিয়ে যান। আমাদের দাবি, আমরা যে হাটে পশু নিতে চাইব, সেখানে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পশুবাহী ট্রাকগুলো টোলমুক্ত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।'
এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ পরিবহন মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকার বলেন, 'বিভিন্ন সংগঠনের নামে-বেনামে পশুবোঝাই ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রাক আটকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা হলেও কাজ হচ্ছে না। আমরা শ্রমিকদের সতর্ক করেছি। তারা চাঁদা তুলছে না। কারা চাঁদা তুলছে, তা প্রশাসন খুঁজে বের করুক।'
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, 'চাঁদাবাজিসহ হাটগুলোতে অতিরিক্ত মাশুল নেওয়ার বিষয়ে আমরা সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। পশুবাহী পরিবহন যেন পথে কোনো বাধার মুখে না পড়ে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।'
গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, 'প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে এবার পশু সংকট হবে না, সেটা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আগেই বলা হয়েছে। অন্যগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা হবে, সেগুলো আমরা দেখছি। পাশাপাশি চাঁদাবাজিসহ অন্য বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে।'
মনে শান্তি নেই :ব্যাপারীরা জানান, চাঁদা না দিলে নামে নির্যাতনের খÿ। এ কারণে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গাবতলী হাটে ট্রাকমালিক আবিদুর রহমানের সঙ্গে দেখা। রংপুরের আবিদুর জানালেন, পঞ্চগড় থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায়ই চলে তাঁর গাড়ি। একগাদা চাঁদার স্লিপ বের করে দেখিয়ে বলেন, 'কোনো উপায় নেই। আমাদের এগুলোই ভরসা। স্লিপ নিন, টাকা দিন। এটা মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজদের স্লোগান। গোপনে এই স্লিপ দেওয়া-নেওয়া হয়। আমরা বাধ্য হই চাঁদা দিতে। তা না হলে ইট মেরে গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়।'
একই সুরে কথা বললেন ব্যাপারী শরিফুল। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আটটি গরু নিয়ে রোববার সকালে ঢাকার এই হাটে এসেছেন তিনি। গত বছর ১৫টি গরু নিয়ে এসেছিলেন। সেবার ১ লাখ টাকারও বেশি লোকসান গুনেছেন। এ কারণে এ বছর গরুর সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। পথে-ঘাটে চাঁদা দিতে হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শরিফুল বলেন, 'ড্রাইভার-হেলপারকে বিভিন্ন স্থানে ট্রাক থামিয়ে টাকা দিতে দেখেছি।'
সেখানে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী গফুর মোল্লা জানান, তিনি ২২টি গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। গরুবোঝাই ট্রাক সাভার হয়ে গাবতলী হাটে পৌঁছাতে পারলেও পার হতে পারেনি। বাধার মুখে তাঁর গরু এই হাটে নামিয়েছেন। চট্টগ্রামে তাঁর পার্টি ঠিক করা ছিল। এখন এই হাটে কীভাবে গরু বিক্রি করবেন, তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
পুলিশ যা বলছে :হাইওয়ে পশ্চিমাঞ্চল পুলিশের সুপার মুন্সি শাহাবুদ্দিন বলেন, 'মহাসড়কে পশুবোঝাই ট্রাক আটকে কোনো পুলিশ সদস্য চাঁদাবাজি করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের আগেই সতর্ক করা হয়েছে। মহাসড়কের যে কোনো স্থানে পশুবোঝাই ট্রাক থেকে স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও চাঁদাবাজি করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। প্রতিটি মহাসড়কে পুলিশের বিশেষ দল মোতায়েন ও টহলে রয়েছে।'
ঢাকার ভেতরের চাঁদাবাজির ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, 'আমরা কঠোরভাবে নজরদারি করছি। কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। হাটগুলোর সামনে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। তার পরও পুলিশের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।'
সূত্র : সমকাল