ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২২ ১১:০৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৪৬ বার
কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিস ঘুষের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আবেদন জমা থেকে শুরু করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙুলের ছাপা) দিতে গুনতে হচ্ছে টাকা। কোনো ভুল থাকলে টাকার অঙ্ক বেড়ে যায়। তখন সেবাপ্রত্যাশীদের গুনতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর এ অর্থ প্রকাশ্যেই আদায় করছেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, পিয়ন ও আনসার সদস্যরা।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর গ্রামের বাসিন্দা লালন হক। তিনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। গত রোববার (৩ জুলাই) ছিল ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার নির্ধারিত দিন। তিনি জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার রুমে ঢোকার পর কম্পিউটার অপারেটর বলেন, তিনতলায় স্যারের রুমে দেখা করে আসেন। তিনি তিনতলায় সহকারী পরিচালক মুসফিকুর রহমানের কক্ষে যান। সেখানে নানা অজুহাত দেখিয়ে ৫০০ টাকা নেওয়া হয় তাঁর কাছ থেকে।
একই গ্রামের আসাদুল ইসলামের কাছ থেকেও নেওয়া হয় ৫০০ টাকা। এভাবে যাঁরাই এ কক্ষে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে ৫০০ খেকে ১৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য। এ দুই যুবক সহকারী পরিচালকের রুমে থাকতেই এক নারী প্রবেশ করেন। তাঁর আবেদনে কিছু ত্রুটি থাকায় পাসপোর্ট হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। পরে তাঁর সঙ্গে রফা হয় ৫ হাজার টাকায়।
সরেজমিন পাসপোর্ট অফিস ঘুরে অনিয়ম ও দুর্নীতির এ রকম চিত্র পাওয়া গেছে। পাসপোর্ট অফিসের পিয়ন, আনসার ও দালালের মাধ্যমে আবেদন জমা না দিলে সেই সেবাপ্রত্যাশীকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। বিশেষ করে যাঁদের পুরোনো পাসপোর্ট আছে, তাঁদের ঠিকানা ও নামের কোনো অংশ যদি পরিবর্তন করতে চান, তাহলে তাঁকে পড়তে হয় হয়রানির মুখে। সব ডকুমেন্ট থাকার পরও নির্ধারিত অর্থ না দিলে আবেদন মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়।
কুষ্টিয়ার একটি পরিবহনের এক কর্মকর্তা জানান, তাঁর ছেলের জন্য গত বছরের শেষ দিকে পাসপোর্টের আবেদন করেন। প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট সরবরাহ করেন কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী। তার পরও আবেদন ফেলে রেখে ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে তিনি কয়েকজনকে দিয়ে তদবির করানোর ৬ মাস পর হাতে পান ছেলের পাসপোর্ট। এ সময় তাঁকে ২০ বার ঘুরতে হয়েছে অফিসে।
হয়রানির শিকার আসাদুল হক বলেন, আমাদের আবদনে সব ঠিকঠাক থাকলেও ফিঙ্গার দিতে যাব, এমন সময় তিনতলায় কর্মকর্তার রুমে পাঠানো হয়। এ সময় সহকারী পরিচালক নিজে আমাদের দু'জনের কাছ থেকে এক হাজার টাকা চেয়ে নেন। আমাদের সামনেই এক নারীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার টাকা। এভাবে প্রকাশ্যে সবার কাছ থেকে অফিসের কম্পিউটার অপারেটর থেকে শুরু করে, পিয়ন ও আনসার সদস্যরা জিম্মি করে টাকা আদায় করছেন।
শহরের মজমপুর এলাকার বাড়ি আসাদুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী নিজের ও স্ত্রীর জন্য পাসপোর্টের আবেদন করেন। তাঁর নিজেরটা ২০ দিনের মধ্যে পেলেও স্ত্রীর পাসপোর্টের আবেদনে সমস্যা আছে বলে আটকে রাখেন। পরে ১৫ হাজার টাকা দালালের মাধ্যমে দিলে হাতে পান পাসপোর্ট।
জানা গেছে, প্রতিদিন কুষ্টিয়া পাসপোর্ট অফিসে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে কিছু আবেদন দালাল ও ভিসা এজেন্টদের মাধ্যমে জমা হয়। তাঁদের মাধ্যমে জমা হওয়া প্রতিটি বইতে নেওয়া হয় এক হাজার ৫০০ টাকা। আর কোনো সমস্যা হলে নেওয়া হয় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের ভিসা এজেন্টের মালিক জানান, প্রতিদিন তাঁদের মাধ্যমে অফিসে ১০ থেকে ১৫টি আবেদন জমা পড়ে। এ জন্য অফিস তাঁদের কাছ থেকে প্রতিটি আবেদনের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা নেয়।
অর্থ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক মুসফিকুর রহমান দাবি করেন, তিনি কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। অভিযোগ সঠিক নয়।
কুষ্টিয়া দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল বলেন, 'আমরা এর আগে দুই দিন অভিযান পরিচালনা করেছি। তারা বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অচিরেই তদন্তে নামা হবে।'