ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ জুলাই, ২০২২ ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৮৭ বার
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিন বছর আগের এই দিনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সাবেক এ রাষ্ট্রপতির মৃত্যুবার্ষিকী পালনে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে ঢাকাসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
ঢাকায় জাতীয় পার্টির কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সকাল ৮টায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে হবে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত। বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এরশাদের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। স্মরণ সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পরে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।
রাজধানীর শ্যামপুর জুরাইন রেলগেটে আগামীকাল বিকাল ৩টায় এরশাদের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করবেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় স্মরণ সভায় উপস্থিত থাকবেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপিসহ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা।
অনুষ্ঠান শেষে ৩ হাজার সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্র“য়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জš§গ্রহণ করেন। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসে। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে øাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৭৫ সালের ফেব্র“য়ারিতে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি। ওই বছরের আগস্টে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনাবাহিনীর প্রধান হন। ১৯৭৯ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি।
দেশের একটি ঐতিহাসিক সংকটময় মুহূর্তে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দীর্ঘ নয় বছর দেশ পরিচালনা শেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। ১৯৯১ সালে গ্রেফতার হন তিনি। অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ওই বছরই রংপুরে জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসনে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। কারাগারে থেকেই ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিয়ে তিনি পাঁচটি আসনে জয়ী হন।
১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন এরশাদ। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে জয়ী হয়। এরপর দশম ও চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালনের মধ্যেই অসুস্থ হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নেন তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। কিন্তু রওশন এরশাদও গুরুতর অসুস্থ। বিরোধীদলীয় উপনেতা নির্বাচিত হন জিএম কাদের। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের এখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
রংপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি : রংপুর ব্যুরো জানায়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দিনভর রংপুরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি।
কর্মসূচির মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় নগরীর সেন্ট্রাল রোডে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিকাল ৪টায় দর্শনা পলী নিবাসে এরশাদের সমাধিতে পুষ্পমাল্য দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন ও কবর জিয়ারত, বাদ আসর এরশাদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া নগরীর ২০টি পয়েন্টে এরশাদের ভাষণ ও কুরআন তেলাওয়াত মাইকে প্রচার করা হবে। এসব অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপিসহ জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয়, বিভাগ, মহানগর ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।