ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ জুলাই, ২০২২ ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৪৬ বার
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভরাডুবির’ পর সারা দেশে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে বিএনপি।
৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬০টিতে আহ্বায়ক কমিটি করেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন না হওয়ায় এসব কমিটি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে দলটি।
তিন মাস মেয়াদ দেওয়া হলেও বছরের পর বছর পার করছে জেলা শাখাগুলো। এর মধ্যে অনেক জেলা করোনাসহ নানা অজুহাতে মেয়াদও বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি থানা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সব পর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব গঠন করবে।
কিন্তু এসব কমিটি গঠনের ৩০ ভাগও কাজ শেষ হয়নি। বেশ কয়েকটি জেলা ও ইউনিট কমিটি গঠনে ত্যাগী ও যোগ্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গণপদত্যাগ, অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক ত্যাগী নেতা স্বেচ্ছায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। এতে তৃণমূলে আরও কোন্দল ও বিভক্তি বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি নরসিংদী ও কুমিল্লা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এসব কমিটিতে বিতর্কিত, মাদক সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত, সরকারের সঙ্গে আঁতাতকারীদের পদায়ন করা হয়েছে বলে গণপদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।
নরসিংদী জেলা নতুন কমিটি গঠনে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের কেন্দ্রের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়ন ছাড়াও ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থি এক নেতাকে সিনিয়র সদস্য করা হয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত ও একজন প্রবাসীকেও সদস্য করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পর ওই প্রবাসী দেশে ফেরেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি হয়েছে। যারা কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি তারা এখন কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলছেন, যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কমিটিতে বিতর্কিত, মাদক সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে পদ দেওয়া হয়নি। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন এমন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দিয়েই কমিটি হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার রাতেই নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় ঘোষিত কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমিরসহ ৪১ সদস্যের কমিটির অধিকাংশ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলন করে আমিরুজ্জামান আমির বলেন, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কমিটিতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। বিগত সময়ে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে যারা সুযোগ সুবিধা নিয়েছে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে।
অবশ্য কমিটি ঘোষণার এক সপ্তাহ পর দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে আমিরুজ্জামানকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার স্থলে কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আলীকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
একইভাবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি নিয়েও নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যোগসাজশ করে বিতর্কিত কমিটি করেছেন। যার সঙ্গে তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়ার কোনো হিসাব নেই, সামঞ্জস্য নেই। এর জের ধরে কমিটি ঘোষণার রাতেই কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার বাসভবনে ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধরা।
এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া জানান, কমিটি গঠন হলেই যার বিপক্ষে যায় তিনি বিভিন্ন কথা বলেন। কমিটি থেকে কেউ পদত্যাগ করেননি। যোগ্যদেরই নেতৃত্বে আনা হয়েছে। যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নেবেন তাদের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র।
এ ছাড়াও জেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দুই বছর পর কয়েকটি জেলায় আবারও আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাবনা জেলার সদস্য সচিব, বগুড়ার আহ্বায়ক ও নওগাঁ জেলার গুরুত্বপূর্ণ তিনজনকে বাদ দিয়ে ফের আহ্বায়ক কমিটি করেছে।
মাগুরায়ও এখন আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে আবারও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে। এসব নিয়ে তৃণমূলের নেতারা ক্ষুব্ধ। জয়পুরহাট জেলার আহ্বায়ক শামসুল হক ও সাবেক এমপি মোজাহার আলী প্রধানের পরিবার ও স্বজনদের দিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে শামসুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলজার হোসেন বলেন, তাদের স্বজনদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়টি সত্য নয়।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও চূয়াডাঙ্গা জেলা কমিটি নিষ্ক্রিয়। এসব জেলার নেতারা অধিকাংশ সময়ই ঢাকায় অবস্থান করেন। টাঙ্গাইলেও ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে কোন্দল চরমে। দুটি থানা কমিটি গঠনের পর বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটে।
পঞ্চগড়ে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের দ্বন্দ্বে কমিটি গঠনের কাজ স্থবির হয়ে আছে। অবশ্য সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালনসহ কমিটি গঠনের বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আহ্বায়কের সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, একক চেষ্টায় সব ইউনিয়নের কমিটিগুলো দিতে পেরেছি। এখন থানা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিষ্ক্রিয়। এ জেলার কমিটিতে দুই এমপি হারুনুর রশীদ ও আমিনুল ইসলামের কোনো অনুসারী রাখা হয়নি। কমিটি ঘোষণার পর অনেকে পদত্যাগও করেছেন। বরগুনা জেলা কমিটিও একটি বড় গ্রুপকে বাদ দিয়ে করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা প্রভাব খাটিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে একপেশে কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ কমিটিতে তাকেও সিনিয়র সদস্য করা হয়েছে। জানতে চাইলে ফিরোজ উজ জামান মামুন মোল্লা বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো সুযোগই নেই। সূত্র জানায়, জেলার আহ্বায়ক কমিটিগুলোর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানা-উপজেলা-ইউনিয়নসহ সব পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব শেষ হবে।
জানা গেছে, পঞ্চগড়, সৈয়দপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরসহ আরও কয়েকটি সাংগঠনিক জেলা শাখার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
এর মধ্যে অনেক জেলা করোনাসহ বিভিন্ন অজুহাতে মেয়াদ বাড়িয়েছে। কিন্তু সাত জেলা বাদে সবই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেছে। নির্ধারিত সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি তারা। এর মধ্যে যশোর, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর মহানগর, ঢাকা জেলা, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ কিছু জেলা ইউনিট পর্যায়ের অধিকাংশ কমিটি করেছে।