ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৯৯ বার
বাংলাদেশের প্রতি এক হাজার বয়স্কের মধ্যে ১১.৩৯ শতাংশের স্ট্রোক হয়ে থাকে। স্ট্রোক হলে এক মিনিট সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক মিনিট আগে নির্দিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছতে পারলে জীবন বেঁচে যাবে। স্ট্রোক হলে ব্রেইনের কোষগুলো এবং লাখ লাখ নিউরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের (ব্রেইনে) কিছু অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে অথবা ব্রেইনের রক্তনালী ফেটে গেলে (বার্স্ট) অথবা উভয় ক্ষেত্রেই ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, সে অবস্থাকে ব্রেইন স্ট্রোক বা ব্রেইন অ্যাটাক বলা হয়ে থাকে। স্ট্রোক প্রতিরোধ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর পালন করা হয় বিশ্ব স্ট্রোক দিবস।
২০১৮ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৪০ বছর অথবা এর চেয়ে বেশি বয়সীদের ২৬ শতাংশ হাইপারটেনশনে (উচ্চ রক্তচাপ) ভুগছে এবং এদের ২১.৫ শতাংশ ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর যথাক্রমে ১১ এবং ১০ শতাংশ ব্্েরইন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই তিন দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে। স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু বাংলাদেশে তৃতীয় অবস্থানে। স্ট্রোকের কারণে অসংখ্য মানুষ শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায় এবং যা দুর্ঘটনার কারণে পঙ্গুত্ববরণকারীদের সমান। পৃথিবীর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রতি হাজারে যথাক্রমে ৫.৩৯ এবং ১০.৪০ জন বয়স্কের স্ট্রোক হয়।
চলতি বছর বদরুল আলম মণ্ডল এবং অন্যান্য গবেষক মিলে যে গবেষণাটি করেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ময়মনসিংহে এক হাজার ২০ জনের মধ্যে ১৫ জন, চট্টগ্রামে চার হাজার ৮০১ জনের মধ্যে ৫৩ জন, রংপুরের দুই হাজার ৭৮৯ জনের মধ্যে ২৫ জন, সিলেটের এক হাজার ৭৬৭ জনের মধ্যে ২১ জন, ঢাকায় সাত হাজার ৬৭৭ জনের মধ্যে ৯৩ জন, বরিশালে এক হাজার ২৬৮ জনের মধ্যে ১৭ জন, খুলনায় দুই হাজার ৭৮৩ জনের মধ্যে ৩৯ জন এবং তিন হাজার ২৮২ জনের মধ্যে ২৫ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত পাওয়া গেছে এই সমীক্ষায়। বদরুল আলম মণ্ডল এবং অন্যান্য গবেষকরা বাংলাদেশের উল্লেখিত আট বিভাগের মোট ২৫ হাজার ২৮৭ জনকে জিজ্ঞাসা করে ২৮৮ জনকে পেয়েছে স্ট্রোক আক্রান্ত। এই গবেষণাটি চলতি বছর করা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মো: সুমন রানা জানিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গত তিন দশকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীতে স্ট্রোক বেড়েছে ৫৬ থেকে ১১৭তে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ স্ট্রোক ঘটবে পৃথিবীর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। ডা: মো: সুমন রানা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে বলেন, বিশ্বে মৃত্যুর দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে স্ট্রোক এবং বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮ বছর অথবা এর চেয়ে কম বয়সীদের স্ট্রোকের হার শূন্য। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রোকের হারও বাড়ে। অপরদিকে ৬০ বছর অথবা এর চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতি হাজার ৩০ জনের স্ট্রোক হয়ে থাকে। নারীর চেয়ে (হাজারে আটজন) পুরুষের স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি (হাজারে ১৪ জন)। বিবাহিতদের মধ্যে ১২ শতাংশ এবং অবিবাহিতদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ। তবে তালাকপ্রাপ্তদের (ডিভোর্সী) মধ্যে আরো বেশি। অপরদিকে বাংলাদেশের পুরুষদের ৭১ শতাংশ এবং নারীদের ২৯ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে।
সাভারের সিআরপির মোয়াজ্জেম হোসেনের গবেষণা অনুসারে, ব্যবসায়ীদের ২৬ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে। এ ছাড়া চাকরিজীবীদের ২০ শতাংশ, গৃহিণীদের ১৭ শতাংশ, শিক্ষক ও কৃষকদের ১৩ শতাংশ, দৈনিক মজুরি করেন এবং ড্রাইভারদের মধ্যে ৩ শতাংশ, ছাত্রছাত্রীদের ১ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার ৪ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সিআরপির মোয়াজ্জেম হোসেনের গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে গ্রামের ৪৭ শতাংশ এবং শহরের ৫৩ শতাংশ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে।
ডা: মো: সুমন রানা বলছেন, বাংলাদেশে যত স্ট্রোক হচ্ছে, এর ৮০ শতাংশ ইস্কেমিক স্ট্রোক (রক্তনালীতে ব্লক হলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত না গেলে) এবং ২০ শতাংশের হেমোরেজিক (রক্তনালীতে ফেটে গিয়ে ব্রেইনে রক্তপাত) হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ব্রেইন স্ট্রোকের ক্ষেত্রে এক মিনিট সময়ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি নির্দিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছা যাবে তত তাড়াতাড়ি রোগীর বেঁচে থাকার হার বাড়ে।