ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৮:৩৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৬১ বার
বাংলাদেশকে দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার এবং আর্থিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন ভিনদেশি আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, স্টিভেন কে কিউসি ও জন ক্যামেগ। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউসহ বিশ্বশক্তির কাছে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন তারা। তবে এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করাসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের আইনজীবীরা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওই সময়ে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে শুরু থেকেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে এসেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং তাদের দোসররা। তাদের সব চক্রান্ত মোকাবেলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাজা কার্যকর করে যাচ্ছে সরকার। যখন জাতির ওপর থেকে ঋণের বোঝা ক্রমশ কমে আসছে, তখন আবারও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন করে অপপ্রচার ও বিদ্বেষের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্র।
২০১০ সালে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশিম আলীর স্বার্থরক্ষায় মার্কিন লবিস্ট ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে ২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করা হয়। এরপর সক্রিয় হন এই তিন আইনজীবী এবং ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তির দোসর ডেভিড বার্গম্যান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে কুৎসা রটাতেন তারা। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসেনি এই বিদেশিদের।
সম্প্রতি ডেভিড বার্গম্যান ও টবি ক্যাডম্যানরা নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে কাজ শুরু করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে তাদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক-সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে চালাচ্ছেন জোর তৎপরতা।
তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রথম নয়, নিজেদের মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেওয়া টবি ক্যাডম্যান, স্টিভেন কে কিউসি, জন ক্যামেগ আগেও টাকার বিনিময়ে সিয়েরা লিওন, বসনিয়া-হার্জেগোভানিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করেছেন।
সিয়েরা লিওনে জাতিগত নিধনে অভিযুক্ত অগাস্টিন গাবাওয়ের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জন ক্যামেগ। এরপর গণহত্যায় ২৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত গাবাওয়ের শাস্তি কমাতেও প্রচেষ্টা চালান তিনি। এ ছাড়া বসনিয়া হার্জেগোভেনিয়া গণহত্যার বিচারে অভিযুক্তদের উকিল ছিলেন টবি ক্যাডম্যান।
বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য কাজ করছেন বলে স্বীকার করেছেন টবি ক্যাডম্যান। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
২০১০ থেকে বিদেশের মাটিতে সভা-সেমিনারে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করে বক্তৃতা করছেন স্টিভেন কে কিউসিসহ এ তিন কুশীলব। গত ৬ ডিসেম্বর ব্রাসেলসে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া সব সুবিধা প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ দেন টবি ক্যাডম্যান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ যেন গড়ে উঠতে না পারে, সেজন্য দেশে-বিদেশে সব ধরনের চক্রান্ত এবং তা কার্যকরের চেষ্টা করছে বার্গম্যান-টবি ক্যাডম্যানরা। ভাবমূর্তি নষ্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর বিদেশি শক্তির খড়গ আনতে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তারা।
এ ছাড়া গত ২৫ জানুয়ারি সাংবাদিকদের কাছে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের কথা স্বীকার করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালনে সাহস জুগিয়েছে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। এজন্যই সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির জনসভা ও রাজপথের কর্মসূচি সফল হয়েছে।
বার্গম্যান-টবি ক্যাডম্যানদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বিকৃত প্রচারণা করছেন তারা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করা উচিত।