ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১০:৩১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩২০ বার
রাজধানীতে গণশৌচাগার সংকটের কারণে ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্যতম চালকরা। দীর্ঘপথে জ্যাম ও অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে মহানগরীর গাড়ি চালকদের বিপাকে পড়তে হয়। পর্যাপ্ত নাগরিক শৌচাগারের অভাবে অনেক চালক অসুস্থও হয়ে পড়েন।
চিকিৎসকেরা বলছেন, দীর্ঘক্ষণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনীয়তা আটকে রাখলে শারীরিকভাবে রোগে আক্রান্ত হন।
সরেজমিন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগরিক শৌচাগারের অভাবে প্রতিনিয়তই তারা সমস্যার সম্মুখীন হন। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বিভিন্ন পরিবহন চালকের।
চালকরা জানান, ঢাকার রাস্তায় পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতার কারণে জরুরি কাজ সারতে বেগ পোহাতে হয়। পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বেশিরভাগ চালক টয়লেটের বিষয়টি চেপে যান। কেউ বা আবার বাসায় ফেরার অপেক্ষায় থাকেন।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন আব্দুর রহিম। বয়স ৬০-এর কাছাকাছি। ভোলায় গ্রামের বাড়ি হলেও ঢাকায় রিকশা চালান প্রায় ৩ যুগ ধরে। তিনি জানান, টয়লেট সাধারণত বাসা থেকেই সেরে আসেন। তারপরও যদি পায় তাহলে রাস্তার ধারে কিংবা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে করেন।
পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন কিনা এমন প্রশ্নে আব্দুর রহিমের উত্তর, ‘চলতি পথে সব জায়গায় তো টয়লেট থাকে না। আর রিকশা রেখে পাবলিক টয়লেটে যেতে রিস্ক থাকে। তাই বেশিরভাগ সময়ই চেপে রেখে দুপুরে আর রাতে গ্যারেজে গিয়ে করতে হয়।’
রাস্তার ধারে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে নারাজ জিয়াউল ইসলাম (৩০)। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে রিকশা চালান। রাস্তায় হঠাৎ বাথরুম পেলে কি করেন জানতে চাইলে তার ভাষ্য, ‘আশপাশে পাবলিক টয়লেট খুঁজি। রাস্তাঘাটে তো করার সুযোগ থাকে না। লজ্জার একটা ব্যাপার আছে। পাবলিক টয়লেটে ১০ টাকা করে নেয়। তাও সবখানে থাকে না। একান্তই না পেলে চেপে যেতে হয়।’ এই ‘চেপে যাওয়াটা কষ্টকর এবং শরীরের জন্য ক্ষতি’ বলেও মনে করেন তিনি।
এ নিয়ে ভিন্ন কথা জানান লেগুনাচালক রায়হান হোসেন। তার কথায়, ‘আমি ঢাকার রাস্তায় লেগুনা চালাই ১০ বছর ধরে। আমাদের গন্তব্য বেশি দূরে না। টয়লেটের ঝামেলা কম। টয়লেট পেলে এই মাথায়, নয়তো শেষ মাথায় গিয়ে করি। নীলক্ষেত থেকে চকবাজার পর্যন্ত আমরা লেগুনা চালাই। কোথায় কোন জায়গায় টয়লেট আছে সেগুলো চিনি, ফলে জরুরি কাজ সারতে সমস্যা হয় না।’
প্রায় ৪০ বছর ধরে গাড়ি চালান মোহাম্মদ আলম খান (৫২)। এখন ঢাকার রাস্তায় বিকাশ পরিবহন লি:-এর বাস চালান। তিনি বলেন, ‘আজিমপুর থেকে বের হওয়ার সময় টয়লেট করে বের হই। আবার শেষ মাথা নবীনগর গিয়ে টয়লেট করি। মাঝ রাস্তায় টয়লেট পেলে চেপে রাখতে হয়। অথবা সহকারী চালাতে পারলে তাকে দিয়ে সামনে কোথাও সারতে হয়।’
মোহাম্মদ আলম খান বলেন, ‘বেশিরভাগ চেপে রাখতে হয়। রাস্তায় প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা থাকতে হয়। সারা দিন গাড়িতে থাকায় পানি বেশি না খাওয়ায় চাপ কম থাকে বলেও জানান তিনি।
ইচ্ছাকৃত মল আটকে রাখার ফলে নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মলত্যাগ এড়ানোর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যখন এটি ঘটে, তখন নিচের অন্ত্রটি মল থেকে পানি শোষণ করে, যা মলদ্বারে জমা হয়। কম জলে মল পাস করা আরও কঠিন, কারণ এটি শক্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘আরও গুরুতর পরিস্থিতিতে, এই আচরণটি ইনকনটিন্যান্স (অনিয়ন্ত্রিত মলত্যাগ) বা গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন মল জমে বড় চাকার মতো হয়ে যেতে পারে (যখন একটি শক্ত, শুষ্ক মল কোলন বা মলদ্বারে আটকে যায়) বা গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল পারফোরেশন’ (খাদ্যনালির দেয়ালে ছিদ্র) তৈরি হতে পারে।’
ডা. আসাদুজ্জামান আরও যোগ করেন, ‘মল আটকে রাখার ফলে মলদ্বার প্রসারিত হয়ে যেতে পারে। এতে মলদ্বারের সংবেদনশীলতা কমে ইনকনটিন্যান্স বা অনিয়ন্ত্রিত মলত্যাগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।’
২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোলনে মলের লোড বেড়ে গেলে সেটি কোলনে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে পারে উল্লেখ করে ডা. আসাদ বলছেন, ‘এর ফলে কোলনের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ তৈরি করতে পারে। এই প্রদাহ কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়াও মল আটকে রাখার সঙ্গে অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং হেমোরয়েড বা পাইলসের সংযোগ আছে বলেও জানান তিনি।