ঢাকা, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

'সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে'

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৮ মার্চ, ২০২৩ ১৯:৩০ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৩৩ বার


'সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে'

সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার বিকালে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ ভারতে একটা শ্লোগান ছিলো- অলি-গলি ম্যায় শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হ্যায়, নাম বললাম না। আজকে আমাদের শ্লোগান হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ভোট চোরের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি। একমত আছেন আপনারা।”

‘‘ আওয়ামী লীগের দুর্নীতি গোটা বাংলাদেশকে একটা ফোকলা অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, গোটা দেশ ফোকলা হয়ে গেছে। এরা ভোট চোর, বাংলাদেশের অর্থনীতির চোর… এদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের কথা পরিস্কার, আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে।”

‘‘ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নিরপেক্ষ  নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনে সকল দলের একটি নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট হবে, একটি জনপ্রতিনিধির সরকার হবে। তারাই দেশ চালাবে।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই সরকার যারা বিনা নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অন্যায়ভাবে তাদেরকে জনগনের শক্তি দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। আজকে তাই সমস্ত দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে।’’

‘‘ আমরা আগস্ট মাস থেকে আন্দোলন শুরু করেছি। ১৭ জন নিরহ ভাই প্রাণ দিয়েছে, অসংখ্যা মানুষ আহত হয়েছেন,অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে গেছেন, এখনো কারাগারে আছেন তাদের যে ঋণ সেই ঋণ শোক করতে, জনগনের দাবি আদায় করতে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেঁচে থাকতে হয় এই সরকারকে অবশ্যই সরাতে হবে। সেজন্য আমাদের সকলকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।”

শনিবার বিকালে সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনের যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। 

এতে ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত নয়া পল্টন সড়কজুড়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর প্রখর রোদ্র উপেক্ষা করে এই সমাবেশে অংশ নেয়। 

যুগপত আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিএনপি ছাড়াও পুরানা পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে ১২ দলীয় জোট, আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং পূর্ব পান্থপথে তেজগাঁওয়ে দলের কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আলাদা আলাদা সমাবেশ করেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর জানায়, ঢাকা ছাড়াও সকল মহানগরে বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা নেন।
‘দুর্নীতির মুলে আওয়ামী লীগ’

টিআইবিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে যত সমস্যা দেখতে পান, এই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-লবন-রসুনের দাম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং খাত, অবকঠামো খাত.. সব কিছুর মূ্লে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি।”

‘‘ এগুলো আমাদের কথা নয়, একথা গু্লো কিছুদিন আগে পশ্চিমা বিশ্বের একটি বিখ্যাত পত্রিকা দি ইকোনোমিক্সটের। সেই পত্রিকা বলেছে যে, বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও পশ্চিমা রাজনীতি-অর্থনীতিবিদরা খুব জোরেশোরে বলতেন যে, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে একটা মডেল-মডেল অব ডেভেলপমেন্ট। সেই পত্রিকা এখন বলছে যে, এই মডেল অব ডেভেলপমেন্টের যে ফানুস, যে বেলুন উড়ছিলো আকাশে তা দুর্নীতির কারণে চুপসে পড়ে গেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এদেশ আর নেই্, এদেশের কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এই রাষ্ট্রকে ওরা ধবংস করে ফেলেছে। গত দুইদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। তারা রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধবংস করে ফেলেছে। এদেশে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলে্ছে।”

‘‘ আজকে আমাদের প্রধান কথা-এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে এই সরকারকে সরাতে হবে, তাদের রেখে এদেশ টিকে না। এক সাথে আওয়াজ তুলতে হবে-আওয়ামী লীগের মূলনীতি- মুদ্রাপাচার, টাকা পাচার আর দুর্নীতি, অলি-গলি ম্যায় শোর হ্যায়…, কোন চোর হ্যায়।”

এ সময়ে নেতা-কর্মীরা সমস্বরে শ্লোগান দিতে থাকে ‘শেখ হাসিনা চোর হ্যায়’, ‘আওয়ামী লীগে চোর হ্যায়’।

তিনি বলেন, ‘‘ ওরা শুধূ ভোট চুরি না.. প্রতিটি ওরা জনগনের পকেট কেটে বিদেশে টাকা পাচার করছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সেটাও তাদের দুর্নীতির জন্য। এভাবে তারা সব কিছু খেয়ে ফেলেছে।” 

৮০ দশকের মুস্তাসির মানুষের লেখা চোরের নাটকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ আজকে আওয়ামী লীগ ওই জায়গায় গেছে তারা মানচিত্রটাও খেলে ফলতে শুরু করেছে। 

‘হজ্বের প্যাকেজ এতো কেনো?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেখুন আপনারা হজ্বের ব্যাপারে দুষ্টামী করা ওদের পুরনো অভ্যাস। আজকে সাধারণ মানুষ যারা হজ্বে যেতে চান তাদেরকে  ৭ লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লক্ষ টাকা আর পাকিস্তানে ৪ লক্ষ টাকা। তাহলে বাংলাদেশে কেনো ৭ লক্ষ টাকা হবে?”

‘‘ওই যে চুরি করেছে। বাংলাদেশ বিমান থেকে চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে লোপাট করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে।”    

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনে সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু‘র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাসির উদ্দিন অসীম, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রওনাকুল ইসলাম টিপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সাঈদ সোহরাব প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। 

এছাড়া মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শফিকুল ইসলাম বাবুল, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাসের হেলাল খান, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ড্যাবের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী ও অধ্যাপক লুতফর রহমান বক্তব্য রাখেন।

এই সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


   আরও সংবাদ