ঢাকা, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

শিশুর নামে অসত্য লিখে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা কি অপরাধ নয় : তথ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৩০ মার্চ, ২০২৩ ২০:০১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৮২ বার


শিশুর নামে অসত্য লিখে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা কি অপরাধ নয় : তথ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন

বাসন্তীকে জাল পরিয়ে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের মতো একটি শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে তার নাম ব্যবহার করে, অসত্য লিখে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা কি অপরাধ নয় প্রশ্ন রেখেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি আজ  দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ও ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ প্রশ্ন রাখেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, গ্রন্থকার ও গবেষক পপি দেবী থাপা প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 
সাংবাদিকরা এ সময় ‘২০১৩ সালে রানা প্নাজা ধসে হাজার হাজার মানুষ যে দিন নিহত হয়, সে দিন সন্ধ্যায় প্রথম আলো-মেরিল পুরস্কারে নাচ-গান করা, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে প্রথম আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ছাত্রকে নিকটবর্তী উন্নত হাসপাতালে ভর্তি না করে, দূরের এক হাসপাতালে ভর্তি করা ও তার মৃত্যু ঘটা এবং এখন স্বাধীনতা দিবসে শিশুর নাম দিয়ে মিথ্যা লিখে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা -এ সবের কি বিচার’ এ প্রশ্ন করে। জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন- স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে এভাবে কটাক্ষ করে যে সংবাদ প্রচার করা এবং একটা শিশুকে ১০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে যেটি বলানোর চেষ্টা করা, সে না বললেও সেটিকে ছাপানো -এটি কি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি নয় ? সে জন্যই এটার প্রচন্ড সমালোচনা হয়েছে, এটি ঠিক নয় বিধায় আপলোড হওয়ার পরে সেটি তারা সরিয়েও ফেলেছিলো। কিন্তু সেটির ‘স্ক্রিনশট’ তো বিভিন্ন জায়গায় ছিলো, অনেকে শেয়ার করেছে, সেগুলো রয়েও গেছে। সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়িয়েছে, ঘুরছে। এতদপ্রেক্ষিতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা মামলা করেছে, মামলার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তেসব বেরিয়ে আসবে এবং আইনের গতিতে আইন চলবে।’ 
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার আগে বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে সেটি প্রকাশ করা হয়েছিল। তখন জালের দাম কিন্তু কাপড়ের দামের চেয়ে বেশি ছিলো, এখনো জালের অনেক দাম। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে প্রকাশ করা হয়েছিল। অনেকে বলছে, ২৬ মার্চে প্রথম আলোর এ ঘটনাটি বাসন্তীকে জাল পরানোর মতোই। রাষ্ট্র, সমাজ, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এ ধরণের অসত্য  পরিবেশন সর্বমহলের মতে একটি অপরাধ, ডিজিটাল অপরাধ।’ অপরাধ আর সাংবাদিকতা এক জিনিস নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ করে, তার কি শাস্তি হবে না ? কেউ যদি অপসাংবাদিকতা করে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে এবং একটি ছেলের হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তার নামে অসত্য লেখে, চাইল্ড এক্সপ্লয়টেশন করে, সেটার কি বিচার হবে না ? আমরা কি কেউ বিচারের উর্ধ্বে, আইনের উর্ধ্বে ? তা তো নয়।’
এ বিষয়ে বিএনপি’র বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো কিছু পেলেই বিএনপি’র বিবৃতি দেওয়ার অপচেষ্টা ছাড়া সেটি অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা সেটি অনেক উন্নয়নশীল দেশে নাই। আপনারা যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে সমগ্র দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য, সাংবাদিকদেরও ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে অনেক সাংবাদিকও মামলা করেছে। ক’দিন আগে একজন নারী সাংবাদিক বিদেশ থেকে চরিত্র হননের দায়ে আরেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।’
বিশ্বের দেশে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদাহরণ দিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘এ ধরনের আইন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সাইবার সিকিউরিটি ল’জ এন্ড রেগুলেশন ২০২২, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার ল’ এন্ড পানিশমেন্ট এবং এ ধরণের আইন বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের অপরাধের শাস্তি হচ্ছে ২০ বছর কারাদন্ড  এবং ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কারণে যদি কারো মৃত্যু হয়, তবে সেই ডিজিটাল অপরাধের শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আমাদের দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য অনেক দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনেক বেশি কঠিন।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এ ঘটনায় অবশ্যই মিথ্যা বলে রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে আঘাত হানা হয়েছে, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধ যেটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সেখানে একটা ছেলেকে ১০ টাকা দিয়ে ফুসলিয়ে তাকে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং সে যেটি বলেনি সেটা প্রচার করা হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি বলেই তারা সরিয়েছে। সুতরাং অবশ্যই এখানে রাষ্ট্রের ওপর আঘাত হানা হয়েছে।’ 
এর আগে ‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকালে বঙ্গবন্ধুর কর্ম, বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনকে সমর্থন করে ১৯৭১ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের সংকলন প্রকাশ করার জন্য পিআইবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে হাছান মাহমুদ  আশা করেন, এই সংকলনের মাধ্যমে সবাই বঙ্গবন্ধুর অজানা আরো অনেক তথ্য জানতে পারবে। এই সংকলন প্রকাশিত না হলে, এই কথাগুলো হারিয়ে যেতো। স্বাধীনতার পূর্বেও বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ বিজ্ঞাপনের সংকলন একটি অসাধারণ প্রকাশনা।


   আরও সংবাদ