ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২ জুন, ২০২৩ ১৬:৪২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৯৩ বার
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ পূণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটে মোটাদাগে চ্যালেঞ্জ ছিল- উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা, রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো, টাকার বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রাখা, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের আস্থা প্রতিষ্ঠা, শিল্পের সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রভৃতি। কভিড পরবর্তী ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণের ফলে গোটা বিশ্ব পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে গেছে। খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর ধাক্কা লেগেছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন প্রেক্ষাপটে কেমন হলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে কালবেলা। তাদের মতামত ও বিশ্লেষণ কালবেলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
সাধারণভাবে আমাদের সাম্প্রতিককালের বাজেটগুলোর বড় দুর্বলতা হলো রাজস্ব আয় কম। বাজেটের রাজস্ব আয়-ব্যয় কাঠামো দুর্বল। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাস্তবায়নের বড় ধরনের পার্থক্য থাকে। কিন্তু এবার যে রাজস্ব আয়-ব্যয়ের কাঠামো দেওয়া হয়েছে, এটা একদমই বাস্তবতা-বিবর্জিত।
এটার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার অনুমিতিগুলো বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আহরণ, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ইত্যাদি তার সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু মেলে না। এর ফলে যে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন হয়েছে, সেটা বাস্তবতা-বিবর্জিত। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হয়েছে, যেটা গত দুই বছরের চেয়ে কম। আগামী অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি দেখাতে হবে, এটি একটি রাজনৈতিক প্রয়োজন। সে হিসাবে সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে জানাচ্ছে। সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে নিঃসন্দেহে উচ্চ পরিমাণে বিনিয়োগ দরকার। উচ্চ পরিমাণে বিনিয়োগ হতে গেলে সরকারি খাতের বিনিয়োগ দিয়ে খুব বেশি দূর যাওয়া যাবে না। ফলে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এটি ২১ শতাংশের ঘরে। আরেকটা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বর্ধিতভাবে ব্যক্তি খাত করবে। এটা তো একটা অসম্ভব বিষয়। এটা কোনো ধরনের প্রবণতার সঙ্গে মেলেই না, উপরন্তু এটা অপেশাদারভবে করা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য যে অর্থ দরকার, সেটি কোথা থেকে আসবে—তার কোনো হিসাব নেই। কারণ সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অর্থ নেবে। সরকার যদি ব্যাংক থেকে অর্থ নেয়, ব্যক্তি খাত কোথা থেকে অর্থ পাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে। ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধিও কমেছে।
পুরো বাজেটটি অত্যন্ত অপেশাদারিভাবে করা হয়েছে। আরও পরিতাপের ব্যাপার হলো, নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকার সাধারণত জনতুষ্টিমূলক বাজেট করে। সেই জনতুষ্টিমূলক করার চিন্তাও এই বাজেটে নেই। পারি বা না পারি লোকরঞ্জন হওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ থাকে, রাজনৈতিক পদক্ষেপ থাকে, এটাকে একদম রাজনৈতিক-বিবর্জিত বাজেট মনে হয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে এর কোনো সমন্বয় নেই। আরেকদিকে আইএমএফের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল। সেটিও খুব বেশি পূরণ হয়েছে বলে মনে হয় না। এই দুটির ফলে এমন একটি বাজেট হয়েছে, যেটি ১৪ বছর শাসন করা একটা সরকারের প্রতি ন্যায্য হয়নি।
(সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি)