ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

এমটিএফইতে শতকোটি টাকা খুইয়েছেন কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৯ অগাস্ট, ২০২৩ ১৩:৩৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৪১ বার


এমটিএফইতে শতকোটি টাকা খুইয়েছেন কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের নামে এমটিএফই নামক বিদেশি অ্যাপের খপ্পরে পড়ে প্রায় শতকোটি টাকা খুইয়েছেন কুমিল্লার কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী। দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করত। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে লাভ পাওয়া যাবে, এমন লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে প্রতারিত হয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, ৭ বছর ধরে এমটিএফই নামক বিদেশি অ্যাপেটি বাংলাদেশে চলছে। সপ্তাহখানেক ধরে সফটওয়্যার আপডেটের নামে টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছিল না। গতরাত থেকে হঠাৎ করেই সবার অ্যাপের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ডলারের সমপরিমাণ উল্টো দেনা দেখাচ্ছে। এরপর থেকেই কুমিল্লা শহরে এমটিএফই গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, এই অ্যাপের স্থানীয় টিম লিডারদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেও বিনিয়োগের টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। উলটো টিম লিডাররা বলছে, সব ব্যবসায় লাভ-লোকসান রয়েছে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, শুরুতে গ্রাহকদের তিন হাজার টাকায় এমটিএফই প্ল্যাটফর্মে খুলে দিচ্ছে একটি অ্যাকাউন্ট। আর প্রতিটি অ্যাকাউন্টে ‘রেফার’ হিসেবে ব্যবহার করছে টিম লিডারের হিসাব। এরপর গ্রাহকরা এই অ্যাপে ডলার ডিপোজিট করেন। এরপরই তিনি দেখতে পান যে লাভের বদলে তার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে গেছে। রাতারাতি ধনী হতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন তারা। মূলত এমটিএফই নামক অ্যাপটিতে কাজ করতো সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এই চক্রটি গ্রাহকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নানা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে অ্যাপটি পরিচালনা করত। চলতি বছর এই অ্যাপটি যুবসমাজের মধ্যে ঝড় তুলেছিল। টিম লিডার নামধারী একটি চক্র বিভিন্ন মার্কেটে অফিস নিয়েও এই অ্যাপের কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন।


ভুক্তভোগী মো. মিজান বলেন, আমরা এই অ্যাপ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমাদের এই অ্যাপের সঙ্গে পরিচয় করায় টিমলিডার আহম্মেদ বিন শামীম। তখন তিনি বলেন, এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা লাভ থাকবে। তার কথামতো এই অ্যাপে বিনিয়োগ করি লাখ টাকা। কিন্তু মাস না যেতেই আমার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়।

খায়ের নামে আরও এক ভুক্তভোগী বলেন, চলতি বছরের শুরুতে এই অ্যাপের সঙ্গে পরিচিত হই। প্রথমে কিছু টাকা লাভ হয়েছিল। তখন আমরা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করতাম। টিম লিডার গোলাম মাওলা টিটু হোয়টসঅ্যাপ গ্রুপে পরামর্শ দেন অটো ট্রেড করার জন্য। এ পদ্ধতিতে ট্রেড করে কয়েক দিনের মধ্যেই আমার ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। আমি মনে করছি, এটা তাদের একটি পরিকল্পিত ফাঁদ ছিল। আমার প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন পরিবারের চাপে আছি। টাকার কোনো হিসাব দিতে পাচ্ছি না।

অ্যাপটির টিম লিডার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর গ্রামের আহম্মেদ বিন শামীম বলেন, আমরা কাউকে লাভের নিশ্চয়তা দিয়ে কিংবা লোভ দেখিয়ে এখানে বিনিয়োগে উৎসাহিত করিনি। আমরা অ্যাপস সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষিত করেছি। সবাই যারযার ইচ্ছামতো এখানে বিনিয়োগ করেছে এবং লাভও পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কুমিল্লা শহরে বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের বুঝিয়েছি। এখন আমাদের কোনো দায়ভার নেই।

সাইমন সরকার নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, টিম লিডারদের কথা শুনে বিনিয়োগ করেছিলাম। ৫০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করার পর রাতারাতি ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়। অ্যাপের সঙ্গে জড়িত প্রতারকচক্রকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে টিম লিডার গোলাম মাওলা টিটু বলেন, ‘আমি তো আর এই অ্যাপের মালিক না। এই অ্যাপের মালিক একটি বিদেশি কোম্পানি। যারা এখানে ইনভেস্ট করেছে, তারা বুঝে-শুনে করেছে। সব ব্যবসায় লাভ-লস রয়েছে।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আহমেদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে যুবকরা প্রতারিত হয়েছে, এ রকম কোনো বিষয় আমার জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করে, তাহলে খোঁজখবর নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ।


   আরও সংবাদ