ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ মে, ২০২৪ ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯২ বার
বরিশাল: বরিশালের গৌরনদীতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এক পক্ষের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
অপর পক্ষের কর্মী ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুইজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতার এ ঘটনা ঘটে বলে থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
আহতরা হলেন- গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক পৌর মেয়র চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমানের কর্মী দেলোয়ার হোসেন দিলু, প্রতিপক্ষ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরীর কর্মী মাহিলারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু এবং তার মোটর সাইকেলের চালক পলাশ হাওলাদার।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এতে দুই পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনো পক্ষের অভিযোগ পাইনি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, গৌরনদী উপজেলা নির্বাচনে পৌর মেয়র হারিছুর রহমান চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া রয়েছেন। তবে হারিছুর রহমান ছাড়া বাকি তিন প্রার্থী ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারণার কাজ শুরু করেন। যা নিয়ে উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের এক নেতা বৃহস্পতিবার মৃত্যুবরণ করেন। তার জানাজার নামাজে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডে যান চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পিকলু। সেখানে হারিছুর রহমানের সমর্থকরাও এলে দুইপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুই পক্ষের তিন-চারজন আহত হয়েছেন।
আহত পিকলুর স্ত্রী বিপাশা গুহ বলেন, একজনের জানাজা-দাফনে উপস্থিত থাকতে বাটাজোর এলাকায় যান সৈকত গুহ পিকলু। সেখানে বাটাজোর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রব হাওলাদারের ভাই দেলোয়ার হোসেন দিলু ও মাহিলারা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাসেল রাঢ়ীসহ তাদের অর্ধশতাধিক অনুসারী পিকুলসহ তার লোকজনের ওপর হামলা করে।
বিপাশা গুহ জানান, তার স্বামীসহ আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখানে নেওয়ার পর হারিছুর রহমানের অনুসারীরা হাসপাতাল ঘেরাও করে। তখন প্রধান গেট আটকে স্বামীকে রক্ষা করতে গেলে হামলাকারীরা গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এছাড়া হাসপাতাল কম্পাউন্ডে থাকা অ্যাম্বুলেন্সসহ সব যানবাহন সরিয়ে দেয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী ও পুলিশ সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন, গুলি করে ও কুপিয়ে জখম হওয়া পিকলুকে শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকজন হাসপাতাল ঘেরাও করে। তারা অ্যাম্বুলেন্সসহ সব যানবাহন আটকে দেয়। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে পিকলুকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছি।
এদিকে অপরপক্ষের আহত দিলুর ভাই বাটাজোর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, আমি অসুস্থ। কী ঘটেছে আমি জানি না। শুনেছি নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা হয়েছে। এতে দিলু গুলিবিদ্ধ হয়েছে ও পিকলুকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে শুনেছি।
আহত দিলু ও তার সঙ্গে শেবাচিম হাসপাতালে থাকা স্বজনদের দাবি, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান (পিকুল) সশস্ত্র অবস্থায় মহড়া দেন। ওই সময়ই তাকে ইউপি চেয়ারম্যান পিকলু গুলি করেন। এতে তিনি আহত হলে স্থানীয়রা এসে প্রতিরোধ করে। তখন হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন জানান, তারা আহতদের সুস্থ করতে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছেন। তবে সৈকত গুহের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত থাকায় তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। তার শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে কি না তা পরে নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে।