ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বিধ্বস্ত ঘর-বসতি, ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম ফেনীর বানভাসিদের

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৩০ অগাস্ট, ২০২৪ ১০:২৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৮ বার


বিধ্বস্ত ঘর-বসতি, ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম ফেনীর বানভাসিদের

ফেনী: ফেনীতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পর ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ ফিরতে শুরু করলেও কাটেনি দুর্ভোগ।

রেখে আসা ঘর-বসতির পুরোটাই যেন ধ্বংসস্তূপ। বানভাসি পরিবারগুলো সব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম। জনপদের নানা প্রান্ত ঘুরে বন্যার ক্ষত চিহ্ন তুলে ধরেছেন সহকর্মী সোলায়মান হাজারী ডালিম।  

 

বানের পানি কমার খবরে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে হাসি মুখে বাড়ি ফেরেন ফুলগাজীর ষাটোর্ধ্ব সগুরা খাতুন। কিন্তু সেই হাসি ফিকে হয়ে গেল মুহূর্তেই। সাজানো-গোছানো ঘরটার কিছুই যে অক্ষত রইলো না। খাট, পালঙ্ক, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, দলিল-দস্তাবেজ বানের পানি ধ্বংস করে দিয়ে গেল ঘর-গৃহস্তির সব।  

মনির-সাবিনা দম্পতির জমজ কন্যা সন্তান নৌকা থেকে পড়ে ডুবেছে বানের পানিতে। মিনিট কয়েক পর উদ্ধার কর্মীরা কোলে ফিরিয়ে দিলেও এখনও গুরতর অসুস্থ। সব হারিয়েও সন্তানদের বুকে রাখতে পেরে সান্ত্বনা খুঁজে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা।  

ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার ওষুধ দোকানি কার্তিক বাবু। দোকানে ছিল ৬ লক্ষাধিক টাকার ওষুধ। বন্যার পানি কমার পর দোকান খুলে দেখে দোকানের অধিকাংশ আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। ওষুধগুলোও আর বিক্রির যোগ্য নেই। সব হারিয়ে যেন শূন্য থেকে শুরু তার।  

সব হারানোর এমন গল্প একটা দুটো নয় শত শত। ঘর-বসতির আসবাব, কাপড়চোপড় থেকে ব্যবসার পুঁজি। সব হারিয়ে দিশেহারা মানুষগুলো।  

বানের পানি যতই কমছে মানুষের বেঁচে থাকার সহায় সম্বলগুলোর ক্ষত চিহ্ন যেন ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে একদম নিঃস্ব বানভাসি মানুষগুলো।  

কৃষিখাতে ইতোমধ্যে প্রায় হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতি নিরূপণ করা গেলেও রাস্তা-ঘাট অবকাঠামো এবং মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সার্বিক ক্ষতি এখনও নিরূপণ করা যায়নি। তবে বিভিন্ন মহল থেকে ধারণা করা হচ্ছে এ বন্যায় ফেনীতে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে ২০ হাজার কোটির বেশি।  

এদিকে বন্যা পরবর্তী স্থানীয়দের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে মাঠে কাজ করছে সেনা, নৌ বাহিনী। অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে এ বন্যায় দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনীকে মাঠে দেখেছে স্থানীয়রা।  

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বন্যার শুরুর দিন থেকে সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। উদ্ধার তৎপরতা থেকে ত্রাণ বিতরণ সব ক্ষেত্রে রেখেছে ভূমিকা।  

নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, যখন কোনো ধরনের সড়ক যোগাযোগ ছিল না তখন থেকে নৌবাহিনী উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। এখনও বন্যা পরবর্তী চিকিৎসা সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।  

চলতি বছরের তৃতীয় দফার এ বন্যায় ফেনীর সবকটি উপজেলার বিভিন্ন জনপদ আক্রান্ত হয়। মাইলের পর মাইল রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। হাঁটার পরিস্থিতি নেই অনেক রাস্তায়। কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রিসহ সার্বিক ক্ষতি হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ঝরেছে প্রাণ।

জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ফেনীতে বন্যায় সর্বমোট ১৭ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়ে তিনি জানান, সরকারের নির্দেশনা পেলে তারা কাজ শুরু করবেন।  

চলতি বর্ষা মৌসুমে তৃতীয় দফার এ বন্যা ফেনী জেলা প্রশাসনের হিসেবে মতে পানিবন্দি হয়েছে ১১ লক্ষাধিক মানুষ। দেড় লক্ষাধিক মানুষকে উদ্ধার করেছে বিভিন্ন বাহিনী। ১ লাখ প্যাকেটের বেশি শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনী। এছাড়া সারা দেশের কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক লাখ লাখ প্যাকেট ত্রাণ দিয়েছে দুর্গতদের।  

ফেনীর ইতিহাসে এ বন্যাকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বলে মনে করছেন জনপদের নবীন-প্রবীণ সব বয়সের মানুষ। ২৪’র এ বন্যা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো ফেনীকে।  


   আরও সংবাদ