ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:২৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৫ বার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): গ্রীষ্মের ছুটি...কোটা আন্দোলন...ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান; নানা ঘটনায় দীর্ঘ ১১২ দিন বন্ধ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। টানা সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি স্থবির হয়ে পড়েছিল শিক্ষার্থী সম্মিলিত কর্মকাণ্ডে মুখর পরিবেশ।
দীর্ঘ সময়ের অস্থিরতা কাটিয়ে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে ফের ক্লাসে ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্লাসে ফিরতে পারায় কলা, সামাজিক বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন অনুষদ ঘুরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যতা দেখা গেছে।
রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের শ্যাডোয় শিক্ষার্থীদের ভিড় জমেছে। বটতলা ও কলাভবন ফটকের সিঁড়িতে অনেকে বন্ধু-বান্ধবের সাথে আসরে মেতেছেন।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও হাকিম চত্বরে অনেকেই আড্ডায় দিচ্ছেন। কেউ কেউ ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে বসেছেন চায়ের আসরে। কেউ কেউ করছেন সকালের নাস্তা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মধুর ক্যান্টিনও বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে।
শিক্ষার্থীদের ফেরা উদযাপন করতে ‘ক্লাসে ফেরা উৎসব’ পালন করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ। দীর্ঘদিন পরে শ্রেণীকক্ষে ফেরা শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন বিভাগের শিক্ষকরা। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে তারা স্বস্তি বোধ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নমুক্ত এই পরিবেশ বজায় থাকবে বলেও তারা প্রত্যাশা করছেন।
অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রিদওয়ান আল হাসান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এতদিন মতপ্রকাশের সুযোগ ছিল না। ফলে যারা এতদিন সুযোগ পাননি, তারা সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত থাকার বাধ্যবাধকতা নেই।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদুর রহমান বলেন, অনেকদিন পর আবারও বন্ধুদের সাথে ক্লাস শেষে টিএসসি এলাম। রাষ্ট্রের চলমান অনেক বিষয়ে আমরা আড্ডা দিয়েছি। ক্লাস খুলে দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এভাবে ফিরতে পারা বেশ ভালো লাগার।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রহিম উল্লাহ রাফি বলেন, আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছেন। তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আগে রাজনৈতিক কারণে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে না পারলেও সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফেরা শুরু করেন। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার থেকে প্রথম বর্ষ বাদে সব বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রথম বর্ষের ক্লাস আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।
চলতি বছরের ২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ছুটি দেওয়া হয়। কোনো কোনো বিভাগে এই ছুটির মধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১ জুলাই থেকে ক্লাস খোলার কথা থাকলেও প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। শিক্ষকদের সাথে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়ে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ৭ জুলাই থেকে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস আর শুরু হয়নি। এরমধ্যে কোটা আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কোটা থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এদিকে সরকার প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রত্যাহার করলে ৪ আগস্ট তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেন।
২৭ আগস্ট উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। নিয়োগের পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হল, বিভাগ, অফিস প্রধান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করেন। এসময় অফিস কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও ক্লাস খোলেনি। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১০ বছরে কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস এতদিন বন্ধ ছিল না।