ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:১১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪ বার
কলকাতা: বাংলা ভাষাকে দিনকয়েক আগেই ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়াকে কীভাবে দেখছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার, সাবেক আমলা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক সংসদ সদস্য জহর সরকারসহ বিশিষ্টরা।
এ স্বীকৃতিকে তারা কীভাবে ব্যাখ্যা করছেন।
এ বিষয়ে ৭০ বছর বয়সী শিক্ষাবিদ মিলাতুন নাহার বলেছেন, অবশ্যই বাংলা একটি ধ্রুপদী ভাষা। এর জন্য কোনো সরকারের স্বীকৃতির অপেক্ষায় রাখে না। বাংলা ভাষা যে অবহেলিত হচ্ছে তা শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের কারণে নয়, বা বর্তমান রাজ্য সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে অবস্থার বদল হয়েছে এমনটাও নয়। মানুষের নিত্যদিনের জীবনে বাংলা ভাষা এক ধরনের মৃত্যু ঘটেছে। ‘জীবিকা অর্জনের জন্য ভাষা’-এ বিষয়টি আজকে মানুষের জীবনে খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র ইংরেজি ভাষা ছাড়া জীবিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব ভাষাই গুরুত্ব হারাচ্ছে।
আশি ঊর্ধ্ব শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও মীরাতুন নাহারের মতো বাংলা ভাষাকে এ স্বীকৃতিতে খুব বেশি উচ্ছ্বসিত নন। তিনি বলেছেন, ভাষা বেঁচে থাকে তার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। ভাষা কোনো বিশেষণ দিয়ে বাঁচে না। ফলে প্রতিদিন আমরা কথা বলার সময় কতটা তা ব্যবহার করছি, আর কতটা খিচুড়ি ভাষায় বলছি, সেটাই হলো আলোচ্য বিষয়। মনে রাখতে হবে বাংলা ভাষা বলতে বলতেই কখন ইংরেজির দিকে চলে যাচ্ছি বুঝতেও পারবো না। তা হলে স্বীকৃতিতে আনন্দিত হওয়ার কী আছে? আগে বাঙালি কতটা সচেতন হচ্ছে সেটাই দেখার বিষয়। ভাষার স্বীকৃতি আছে অথচ ব্যবহার নেই, সেক্ষেত্রে স্বীকৃতির কী মূল্য থাকে? তবে এ স্বীকৃতিকে অস্বীকার করছি না। বাঙালি হিসেবে ভালো লাগে।
সেদিক থেকে সাবেক তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য জহর সরকার বলেছেন, সংসদে থাকাকালীন বাংলা ভাষার এ স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সংসদের ভেতরে বহুবার সরব হয়েছিলাম। এখন যখন কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষাকে এ স্বীকৃতি দিয়েছে তা সম্মানের বিষয়। ভারতে ২৪টি ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। তার মধ্যে আটটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলা ভাষার এ স্বীকৃতির বিষয়টা অবশ্যই গর্বের। এ আটটি ভাষা আদি বা পুরাতন ভাষা হিসেবে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাহিত্যিক সমর বিজয় চক্রবর্তী বলেছেন, বাংলা ভাষার ধ্রুপদী স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে একটি মাইলস্টোন। এর ফলে অনেকগুলো সুযোগের দরজা খুলে গেল। সরকারিভাবে বাংলার মূল্য অনেক গুণ বেড়ে গেল। রাজশক্তির বিশেষ স্বীকৃতি ছাড়া বাংলা এগোতে পারে না। বাংলা ভাষার বাণিজ্যিক মূল্য বাড়া চাই এবং তা সম্ভব রাষ্ট্র যদি পাশে এসে দাঁড়ায়।
ধ্রুপদী ভাষায় স্বীকৃতি পাওয়ায় কী কী লাভ পাওয়া যাবে তার তথ্য তুলে ধরে সময় বিজয় বলেছেন, প্রথমত সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণ হল; দ্বিতীয়ত নানা ভাষার সঙ্গে সমন্বয়ী কাজ করা, অর্থাৎ যোগাযোগের ভাষা হিসেবে কাজ করবে; তৃতীয়ত অ্যাকাডেমিক চর্চার উন্নয়ন বাড়বে; চতুর্থ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও চর্চা; পঞ্চম সাহিত্যে উন্নয়ন ও প্রচার বাড়বে; ষষ্ঠ সংস্কৃতি বিনিময়ের উন্নয়ন ও সহজলভ্যতা; সপ্তম ভাষা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির বৈশ্বিক ক্ষেত্রে বিস্তার ও উন্নতি; অষ্টম বিশিষ্ট পণ্ডিতদের জন্য পুরস্কার দেওয়া বাড়বে; নবম ধ্রুপদী ভাষার অধ্যয়নের জন্য উৎকর্ষ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান বাড়বে এবং দশম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধ্রুপদী ভাষার জন্য চেয়ার গঠন করা।
এ সমস্ত করতে গিয়ে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে এবং স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে এখন থেকে তা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। এর আগে এতদিন এ সুযোগ তামিল, তেলেগু, ওড়িয়া ভাষা পেয়ে আসছে। সেসব জাতি স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলেছে। কারণ ভাষা টিকলে তবেই তো জাতির অস্তিত্ব থাকবে। ফলে আমি মনে করি এ বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে একটি মাইলস্টোন।