ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:১৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৫ বার
ঢাকা: নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এখানকার নদী ও নৌপথ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
সাশ্রয়ী এ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে নৌযানের সঠিক পরিসংখ্যান ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
তবে বর্তমানে অনেক নৌযান রেজিস্ট্রেশনের আওতার বাইরে থাকায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং নৌযানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের নৌ সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে নৌযানের ডাটাবেজ তৈরি ও ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৪৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত ৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সোলেমান খানের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রকল্পের জরিপ ব্যয় ৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও পিইসি এ ব্যয়ের যৌক্তিকতা পুনঃপর্যালোচনা করার সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সোলেমান খান জানান, অনেক নৌযান রেজিস্ট্রেশন ও সার্ভে সনদ ছাড়া চলাচল করছে, যা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি এবং নৌপথের নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তাই ইঞ্জিনচালিত সব নৌযানের জন্য একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ ডাটাবেস তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানো এবং নৌযান পরিচালনাকারী ক্রুদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
প্রকল্পটি মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ, উপকূলীয় এবং সমুদ্রগামী নৌযানের ডাটাবেস তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে। ১৯৭৬ সালের অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ মোতাবেক নিবন্ধন ও জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৬ হর্স পাওয়ারের নিচের সব ইঞ্জিন ডাটাবেসের আওতায় আনার এবং ১৬ হর্স পাওয়ারের উপরের ইঞ্জিনগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মেরিটাইম ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও টেকসই করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন ও সার্ভে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে নৌযান পরিচালনাকারী নাবিকদের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
এতে নৌপথে দুর্ঘটনা কমবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ নিরাপদ হবে। পাশাপাশি দক্ষ নাবিক তৈরির মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলনের বিষয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এ প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী জরিপ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিনিধি জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানোর সুযোগ রয়েছে। পিইসি সভায় এ ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে কমানোর বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৪৬ লাখ টাকায় একটি জিপ কেনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রকল্পে যানবাহন কেনার কোনো সংস্থান রাখা সমীচীন হবে না।
প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথমত, প্রকল্প নেওয়ার যৌক্তিকতা সঠিকভাবে ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পটভূমিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে এর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ত, প্রস্তাবিত জরিপ কার্যক্রমের ব্যয় যৌক্তিকভাবে পুনঃপর্যালোচনা করতে হবে, যাতে প্রকল্পটি সাশ্রয়ী হয়। প্রকল্পের অন্যান্য রাজস্ব ও মূলধন খাতের ব্যয়গুলো পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌযান ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনয়ন এবং অর্থনীতিতে নৌপথের গুরুত্ব বাড়ানো সম্ভব হবে।