ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১৩:৪৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩০ বার
ঢাকা: একটা সময়ে কসমেটিকস পণ্যের ব্যবহার অভিজাত শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে বর্তমান সময়ে ধনী-গরিব, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকল বয়সের মানুষ কসমেটিকস পণ্য ব্যবহার করছে।
অবস্থার পরিপেক্ষিতে প্রসাধনী সামগ্রী এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী বেড়েছে প্রসাধনী সামগ্রীর বাজার।
লাইট ক্যাসেল পার্টনারস এবং অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চের মতো গবেষণা সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের স্কিন কেয়ার বা পারসোনাল কেয়ার শিল্পের আনুমানিক বাজার ছিল ১.২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে কসমেটিকস পণ্যের বাজার ২.১২ বিলিয়নে পৌঁছাবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ৮.১ শতাংশ হারে এই শিল্প বৃদ্ধি পাবে। ২০২০ সাল থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই খাত থেকে ৯৬০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ২০২২ সালে কালার কসমেটিকস শিল্পের বাজার ছিল প্রায় ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কালার কসমেটিকস শিল্পের প্রসার ৫.৫৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩২ সাল নাগাদ ১৪৪ বিলিয়ন ডলার হবে।
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী কসমেটিকস পণ্যের শীর্ষ আয়ের পাঁচটি দেশ হচ্ছে, আমেরিকা ১৯ হাজার ৯২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাপানের ১৭ হাজার ৭৮০, চায়নার ১৫ হাজার ৬২০, ইন্ডিয়ার ৭ হাজার ৫৯৬, সাউথ কোরিয়ার ৭ হাজার ২৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত কসমেটিকস পণ্যকে বিশ্বমানের মানের করতে পারলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কসমেটিকস পণ্য রপ্তানি করে বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব।
পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোতে হালাল কসমেটিকস ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওষুধ ও গার্মেন্টস শিল্প অনুকরণীয় হতে পারে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে গার্মেন্টস, ওষুধ, চামড়া, হিমায়িত মৎস্য এবং প্লাস্টিক শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার স্থানীয় নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করার জন্য আর্থিক প্রণোদনা এবং বিশ্বব্যাপী দেশের প্রসাধন সামগ্রীর প্রচারণামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সরকারকে উদ্যোগী হলে কসমেটিকস পণ্য রপ্তানি সহজতর করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিও করা যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, দেশীয় কসমেটিকস শিল্পের প্রসারে সরকারকে সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান দেশে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদন করছে, তারা যেন বিশেষ নীতি সহায়তা পান, তাও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেশীয় শিল্পের প্রসারে আগ্রহী হয়ে অনেকে এগিয়ে আসবেন। ফলে দেশে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানির আয়েরও সুযোগও বাড়বে।
অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশেও এখন ইউরোপ আমেরিকায় রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু আমাদের আমাদের তেমন কোন পলিসি সাপোর্ট নেই।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আসা বেশির ভাগই কসমেটিকস পণ্যই চোরাইপথে আসে এবং এগুলো নিম্নমানের। চোরাইপথে পণ্য আসার ফলে যারা দেশে উৎপাদন করছে, তারা টিকতে পারবে না। যারা পণ্য আমদানি করছে, তারা আবার ডিকলারেন্স ভ্যালু কম দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে এতো বড় কসমেটিকস পণ্যের বাজারে মাত্র পৌনে ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে। অথচ এটা কয়েক হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিৎ। এখানেই বড় একটা দূরত্ব আছে। এখানে সরকারকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশি উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা দিতে হবে। তাহলে দেশি কসমেটিকস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকবে, পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, যখন পলিসি ঠিক হবে, তখন কসমেটিকস পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। রপ্তানি আয় বাড়লে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে, মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য বড় বড় কোম্পানিও এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। যা সামগ্রিক দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সয়াহক হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, কসমেটিকস পণ্যের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। কসমেটিকস পণ্যের বাজার ক্রমবর্ধনশীল। বাংলাদেশের যারা কসমেটিকস পণ্য রপ্তানি করছেন, তারা ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক বাজার বুঝতে পারছেন। রপ্তানিও বাড়ছে।
তিনিও আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে গেলে মার্কেটিংয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে যে বাণিজ্য শাখাগুলো রয়েছে তারাও সহায়তা করতে পারে। বিভিন্ন মাধ্যমের প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে। কসমেটিকস ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্যাকেজিং খুব গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি আমাদের পণ্যের গুণগত মানও বৃদ্ধি করতে হবে।
(সিপিডি) সম্মানীয় এ ফেলো বলেন, আমরা এখন ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করার কথা ভাবছি, ফ্রি ট্রেড মার্কেটে যেসব জায়গায় হবে, সেখানে যেন আমাদের কসমেটিকস পণ্য প্রথম থেকেই শূন্য শুল্কে যেতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। কসমেটিকস পণ্যের আন্তর্জাতিক মানের করে তৈরি করতে হলে প্রযুক্তিগত বিষয়েও উন্নয়ন করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, আমাদের দেশেও এখন বিশ্বমানের কসমেটিকস পণ্য তৈরি হচ্ছে। আমাদের উৎপাদিত এসব কসমেটিকস পণ্য উন্নত যে কোনও দেশের পণ্যের সাথে তুলনা করা যায়। এখন আমার দাবি বাংলাদেশের সরকারকে আমাদের কসমেটিকস পণ্য ব্রান্ডিং করতে সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের কসমেটিকস পণ্যের বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি আমরা আমাদের পণ্যের মান নিশ্চিত করতে পারি বিশ্বব্যাপী কসমেটিকস পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে যেহেতু হালাল পণ্য উৎপাদন করতে পারে, তাই বিশ্বে যেসব ইসলামি রাষ্ট্র আছে, সেখানে আমাদের পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে আমাদের তৈরি হালাল পণ্যের গুণগত মানের নিশ্চয়তা, মান বৃদ্ধি, পাশাপাশি ক্রেতাদের মধ্যে প্রচারণা বাড়াতে আমাদের ঐসব দেশের দূতাবাসকে নির্দেশনা দিতে হবে। তাহলে আমাদের দেশের কসমেটিকস পণ্যের বিদেশে চাহিদা বাড়বে, একই সাথে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও আসবে।