ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১৭:১৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫ বার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদারের মৃত্যুর দায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ওপর চাপানো ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) অভিজিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ও পরে কয়েকটি কলেজে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইফফাত আরা।
তিনি বলেন, অভিজিতের মৃত্যুর রাতে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি ৯০ ভাগ সমাধান হয়। তারপরও বিষয়টি তার পরিবার এবং শিক্ষার্থীরা অন্যান্যদের জানানোয় এমন ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খবর থেকে প্রতীয়মান হয়, কোনো কোনো কুচক্রী মহল হাসপাতালের ওপর মিথ্যা দায়ভার দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। রোগীর মৃত্যু হলেই ভুল চিকিৎসা, দায়িত্বে অবহেলা বলে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের লাঞ্ছিত করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ইফফাত আরা বলেন, হাসপাতালের রোগীর চিকিৎসা সেবার সুস্থ পরিবেশ বিনষ্ট করা, হাসপাতালের সব স্তরের চিকিৎসক নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের ব্যাপক ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করা, অসুস্থ রোগীদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
ন্যাশনাল কলেজে হামলায় দশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। ইফফাত আরা এ ব্যাপারে বলেন, ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কলেজের প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ শিক্ষার্থী হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, দন্ত বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগে ব্যাপক ভাংচুর করে। এছাড়া ক্যাশ কাউন্টারে ভাঙচুর করে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি ছাত্র ছাত্রী, সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের আর্থিক সেবায় নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখায় ব্যাপক ভাঙচুর করে।
সংবাদ সম্মেলনে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কলেজের উপ-পরিচালক ডা. মো. রেজাউল হক বলেন, আমরা নিহতের পরিবারের অনুরোধে তাদের আইসিইউ বিল ৩৬ হাজার টাকার বিল স্থগিত রাখি। তার পরবারের কাছে অ্যাম্বুলেন্স বিল ছিল না। সেটার জন্য আমরা ১০ হাজার টাকা দিতে যাই। পরে তারা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের থেকে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে সক্ষম হয়। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, দশ হাজার টাকা দিয়ে কি মৃত্যুর ঘটনা চাপা দেওয়া সম্ভব?
রোগীর মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট না দেখানো, আইসিইউতে ভর্তি ও ডেথ সার্টিফিকেটে জোর করে পরিবারের নিকট থেকে জোর করে সইয়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রাতে আমাদের হাসপাতালে সিনিয়র কেউ থাকে না। সিকিউরিটি ইনচার্জ ও ইমার্জেন্সি ডাক্তার থাকে। তাদের (মোল্লা কলেজ) স্টুডেন্টরা যখন আসে তখন আমরা হাসপাতালে ছিলাম না। পরে আমরা আসি। আমরাই জিম্মি ছিলাম। পরে পুলিশ, আর্মির সাহায্যে রক্ষা পাই।
ন্যাশনাল মেডিকেল ও ডা. মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের বচসায় সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জড়িতের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, অভিজিতের মারার যাওয়ার ঘটনায় তার কলেজের ৩০/৪০ জন হাসপাতালে আসে। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হয়। সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এসেছিল তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে। তখন তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এটা আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা। আমরা তাদের ডাকিনি।
এদিকে অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও ডাক্তারের অব্যাহতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করি। সেখানে ডা. মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি রাখার জন্য বলা হয়। তাদের বলা হয় দেশের যেকোনো জায়গায় একজন রেজিস্টার্ড ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ রাখার জন্য। তারা দুদিন পার হলেও তাদের প্রতিনিধি দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানায়নি। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কর্তব্যরত ডাক্তার শেফাকে কর্ম থেকে বিরত থাকতে বলেছি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সমকালের সাংবাদিক ইমরান হোসাইনের ওপর চড়াও হন হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার ও শিক্ষার্থী। ইমরান বলেছিলেন, সোমবার তিনি তার প্রতিবেদনের জন্য হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বক্তব্য নিতে চান। কিন্তু ইমরান নামে ওই চিকিৎসক তাকে হুমকি দেন। তিনি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে কর্মরত।
একজন চিকিৎসক গণমাধ্যমকর্মীকে হুমকি দিতে পারেন কি না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক ইমরান। ন্যাশনাল হাসপাতালের সঙ্গে মাহাবুবুর রহমান কলেজের সংঘর্ষে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ কীভাবে জড়িত হলো প্রশ্ন করেন যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক রাব্বি সিদ্দিকি। কিন্তু প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সব সাংবাদিক সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন।
এ ঘটনার পরপরই ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও ডাক্তাররা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালসহ শিক্ষক, ডাক্তার ও শিক্ষার্থীরা এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।