ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বসুরহাটে সংঘর্ষে প্রাণহানির পর ধরপাকড় চলছে

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৯৬ বার


বসুরহাটে সংঘর্ষে প্রাণহানির পর ধরপাকড় চলছে

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং মঙ্গলবার রাতে একজন নিহত হওয়ার পর বসুরহাট পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এর পর রাত থেকেই কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার বেলা ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ গতরাত থেকে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ২৮ জনকে আটক করেছে। তবে তাদের পরিচয় বা কোন গ্রুপের- এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আটকদের বিষয়ে যাচাই-বাচাই চলছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওসি আরো জানান, পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

আজ সারাদিন বসুরহাট পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা বহাল থাকছে। এখনো কাউকে সমাবেশ বা জমায়েত করতে দেয়া হবে না। রাত থেকেই শহরজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান ওসি মীর জাহেদুল হক।

অপর দিকে মঙ্গলবারের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা, জনসম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আবদুল কাদের মির্জা বনাম খিজির হায়াত খান ও মিজানুর রহমান বাদল গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের সময় আলাউদ্দিন নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ওসিসহ আরো শতাধিক।

নিহত মোঃ আলাউদ্দিন (৩২) উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মমিনুল হকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক। নিহতের স্বজনরা একটি হত্যা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ওসি জাহিদুল হক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, পুরো বসিরহাট এলাকায় এখন থমথমে পরিস্থিতি রয়েছে। গুটিকয়েক খাবারের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ১৪৪ ধারা থাকায় মানুষজনের চলাচলও অনেক সীমিত।

জানা গেছে, স্থানীয় সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের ওপরেই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, এতো দিন ধরে বসিরহাটে উত্তেজনা চলছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে যেমন এটি অবসানে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয় হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রাণহানি হলো। এখন ১৪৪ জারি করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির খানকে গত সোমবার পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ তোলা হয়। এর প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকরা মঙ্গলবার বিকেলে বসুরহাট পৌর এলাকার রূপালী চত্বরে সমাবেশ করছিল।

একপর্যায় বিবাদমান আওয়ামী লীগের দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বসুরহাট বাজারের পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় দু’গ্রুপের লোকজন ককটেল বিস্ফোরণ ও ছোড়াগুলি ছোঁড়ে। শহরের মাকসুদাহ স্কুল রোডে ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলিতে পুরো এলাকা তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

রাত ৮টার দিকে মেয়র কাদের মির্জার সমর্থকরা বসুরহাট বাজারে একটি মিছিল বের করলে আবারো সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষের একপর্যায়ে কাদের মির্জা সমর্থকরা বসুরহাট পৌরসভায় ঢুকে পড়ে। রাত ৯টার দিকে বাদল গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে পৌরসভা ভবনে গুলি বর্ষণ শুরু করে। তারা ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। রাত ১১টায় কাদের মির্জা সমর্থকরা লোহার পুল এলাকায় গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে।

বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সংঘর্ষে একজন নিহতসহ উভয়পক্ষের শতাধিক আহত হন। এ সময় ভাঙচুর করা হয় দোকানপাট ও অটোরিকশা। সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন মোঃ রাজিব, মাঈন উদ্দিন, শাহ আলম, আলা উদ্দিন, জাকির হোসেন হৃদয়, দেলোয়ার হোসেন, সোহেল, শাহদাত হোসেন, আরাফাত হোসেন, বেলাল হোসেন সেলিমসহ ১৫ জন।

এছাড়াও ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি, কনস্টেবল কালাম, আলাউদ্দিনসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য এবং উভয়পক্ষের মোঃ আজিজ খোকন, মোঃ করিম, মো: এমরান হোসেন ও জিংকু, সাহাব উদ্দিন, জনি, সেলিম, ওয়াহিদ কালাম, রিপন, রফিক চৌধুরী, পিনন চৌধুরী, দিপু, সুমন, আরিপিয়ান শিপন, শরীফ উল্যা টিপু, মানিক, শরীফ, আল মাহাদি, রাজিব হোসেন রাজু, নবায়ন হোসেন, আদনান শাহ, সালাউদ্দিনসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

আহতদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নোয়াখালী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা: সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান, গুলিবিদ্ধ একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। মোট ১৫ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নোয়াখালী সদর হাসপাতালে এসেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল জানান, নিহত আলাউদ্দিন তার সমর্থক ও যুবলীগ কর্মী। তিনি তার পাশের বাড়ির ছেলে বলেও দাবি করেন। এ হত্যার জন্য কাদের মির্জাকে দায়ী করেছেন মিজানুর রহমান বাদল।

এ বিষয়ে জানতে কাদের মির্জার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

 


   আরও সংবাদ