ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

দুই শিক্ষার্থীকে পাঠদানে ৮ শিক্ষক, বছরে ব্যয় ২৭ লাখ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১৩:৫০ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪ বার


দুই শিক্ষার্থীকে পাঠদানে ৮ শিক্ষক, বছরে ব্যয় ২৭ লাখ টাকা

নেত্রকোনা: নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে’ বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে একজন করে মোট দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। ওই দুই বিভাগে তাদের পড়াশোনা করানোর জন্য শিক্ষক রয়েছেন চারজন করে মোট আটজন।

 

 

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানের আটজন শিক্ষকের বেতন ভাতা বাবদ সরকারের বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। যদিও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বিভাগে ন্যূনতম ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক।  

এদিকে শিক্ষার্থী কম থাকায় শিক্ষকদের অনেকে কলেজে হাজিরা দিয়ে বাড়ি চলে যান। আবার কেউ কেই বাজারে বসে আড্ডা দেন। অপরদিকে শিক্ষার্থীরাও একা একা ক্লাসে আগ্রহ না পাওয়ার কারণে তারাও আসে না নিয়মিত।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে সেরা কলেজের স্থান দখল করে রেখেছে ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়’। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া কলেজটিতে মানবিক শাখায় রয়েছে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী। আর বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় একজন করে দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া কলেজটিতে রয়েছে কারিগরি (বিএম) শাখা। কারিগরিতে ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।  

আরও জানা গেছে, জেলার হাওরাঞ্চল উপজেলা মোহনগঞ্জের আদর্শনগর বাজারের পাশে সাড়ে পাঁচ একর জায়গায় ২০১৫ সালে স্থাপিত হয় ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়’ নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পরের বছর থেকে পাঠদানের অনুমোদন পায় কলেজটি। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসান। এতে এইচএসসি পর্যন্ত বিজ্ঞান,  মানবিক ও বাণিজ্য এ তিনটি বিভাগে পড়াশোনা চালু আছে। পাশাপাশি রয়েছে বিএম (কারিগরি) শাখা।  

বিশাল মাঠ, দৃষ্টি নন্দন অ্যাকাডেমিক ভবন, ছাত্র হোস্টেল, ছাত্রী হোস্টেলসহ দ্রুত অনেক ভবন গড়ে তোলা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়। কলেজটিতে বর্তমানে বাণিজ্য বিভাগে একজন, বিজ্ঞানে একজন ও মানবিকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর কারিগরিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজটিতে ১৫ জন প্রভাষক ও একজন অধ্যক্ষ রয়েছেন। কলেজটি ২০২২ সালে ময়মনসিংহ বিভাগে শ্রেষ্ঠ কলেজ নির্বাচিত হয়। ২০২৩ সালে জেলা পর্যায়ে ও ২০২৪ সালে উপজেলা পর্যায়ে সেরা কলেজ নির্বাচিত হয়। শুরুতে কলেজটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী কমছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (২১ অক্টোবর) কলেজে গিয়ে বাণিজ্য বিভাগের দুইজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। আর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাউকেই পাওয়া যায়নি।

বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক চয়ন গোস্বামী বলেন, আমাদের এলাকায় একটি মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তারাই মূলত পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী কম। তাই আমাদের কলেজেও ওই দুই বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। এর মধ্যেও অনেক শিক্ষার্থী স্কুল পাশ করে শহরের কলেজে গিয়ে ভর্তি হয়। প্রাইভেট-কোচিংসহ পড়াশোনার নানা সুবিধার জন্য শহরের চলে যায়। যেহেতু হাওরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে বিজ্ঞান-বাণিজ্যর শিক্ষার্থী কম, তাই কলেজেও এর প্রভাব পড়ছে।

একই কথা বলেন বাণিজ্য বিভাগের অপর প্রভাষক মো. খায়রুজ্জামান মনি। তিনি বলেন, চেষ্টা করেও বিজ্ঞান-বাণিজ্যের শিক্ষার্থী বাড়ানো যাচ্ছে না। শিক্ষার্থী নাই তাই ক্লাসও হয় না। শিক্ষকরা কলেজে এসে বিভিন্নভাবে সময় কাটিয়ে চলে যান।

বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী মিম আক্তার জানায়, শিক্ষার্থী নাই তাই ক্লাশ করতেও আগ্রহ পাই না। একা একা কি ক্লাশ করা যায়? সহপাঠী থাকলে পড়াশোনায় একটা প্রতিযোগিতা থাকে। পড়াশোনাতেও মনোযোগ আসে। এখন নিজের আগ্রহে যতটুকু পড়াশোনা করছি তাতেই চলে যাচ্ছে।

বিজ্ঞান বিভাগের বিশাল ক্লাশ রুম, ল্যাব থাকলেও একজন মাত্র শিক্ষার্থী থাকাও তিনি আসেন না নিয়মিত। শিক্ষকদের অবস্থাও একইরকম। বিজ্ঞান শিক্ষক শিক্ষার্থী কাউকে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক বলেন, কলেজটিতে মানবিক বিভাগে ও কারিগরি শাখায় যথেষ্ট শিক্ষার্থী রয়েছে। শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে একজন করে দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর শিক্ষক রয়েছেন আটজন। শুরুর দিকে ওই দুই বিভাগে শিক্ষার্থী ১২-১৪ জন থাকলেও প্রতি বছর কমতে থাকে। শিক্ষার্থী না থাকায় ওই দুই বিভাগের শিক্ষকরা অলস সময় পার করছেন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বিভাগে ন্যূনতম ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে এখান থেকে শিক্ষকদের বদলি করে নিয়ে যে-সব কলেজে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে সেখানে দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। এ বিষয়টি কমিটির সভায় আলোচনায় তুলা হবে।

অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক আরও বলেন, কলেজটিতে বিশাল অ্যাকাডেমিক ভবনসহ ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। রয়েছে বিশাল দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ। হাওরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।  

বিষয়টি অবহিত করলে কলেজের সভাপতি ও মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজওয়ানা কবির বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


   আরও সংবাদ