নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০২ বার
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহ জেলার সকল মাঠের বোরো ক্ষেত গুলো কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে এখনও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। একদিন মাত্র আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখা দিলেও তা ছিল কিছুটা ঝড়ো বাতাস আর ধুলা শান্ত করা ছিটেছাটা বৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ। যে কারণে এলাকার ছোট বড় সব জলাশয় গুলো এখন শুকিয়ে ঠনঠনে। চৈত্রের তাপদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে অকেজো হয়ে পড়েছে বাসাবাড়িসহ মাঠের অসংখ্য গভীর ও অগভীর নলকুপ। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে বোরোর ভরা মৌসুমের সেচকাজ।
অবস্থাটা এমন চারিদিকে খাওয়ার ও গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত পানির সঙ্কটে জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। দুই একটি নলকূপে কিছুটা পানি মিললেও সেখানে থাকছে সব বয়সি মানুষের পানি সংগ্রহের ভীড়। শুধু শহর নয় গ্রামাঞ্চালের মানুষও পানির জন্য পড়েছেন মহা ভোগান্তিতে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গেলে দেখা যায়, সকল মাঠেই ভরা বোরো ক্ষেত। চলছে শেষদিকের সেচকাজ। কিন্তু স্যালোমেশিন গুলোতে ঠিকমত পানি উঠছেনা। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক গুলো বিকল হয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত খুড়ে স্যালোমেশিন বসিয়ে সেচকাজ চালাচ্ছেন। যে গুলো সচল আছে পানি উঠছে খুবই কম।
আবার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ নকলূপ বিকল হয়ে পড়েছে। গৃহিনীরা দূর থেকে পানি এনে চাহিদা মেটাচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের অফিসসূত্রে জানাগেছে, ২০০৩ সালের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও জরিপ মতে,কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৯ হাজার ৫’শ ৬৩ টি অগভীর নলকুপ রয়েছে। আর গভীর নলকূপ আছে ৩’শ ৮৪ টি। গ্রীষ্মের শুরুতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও পানির স্তর বেশ নেমে গেছে। ফলে অনেক নলকূপে পানি উঠছে না। বোরো চাষের কিছুকিছু এলাকাতে ৩৫ থেকে ৩৮ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নেমে গেছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, লকডাউনের সময়ে করোনার মহামারী থেকে বাঁচতে সকলেই চাচ্ছেন নিজ ঘরে অবস্থান করতে।
কিন্তু নিজ বাসা বাড়ির নলকূপ গুলোতে ঠিকমত পানি না থাকায় তারা পড়েছেন বেশ ঝামেলায়। সরকারী ও স্বাস্থ্যবিভাগের নির্দেশনা এখন বেশি করে হাত ধুয়ে পরিচ্ছন্ন পরিপাটি থাকার। পরিষ্কার রাখতে হবে পরিধান ও বিছানাপত্রের কাপড় চোপড় কিন্তু পানির অভাবে চরম বিপাকে তারা। এখনও যে সকল বাসাবাড়ির নলকূপে পানি উঠছে সেখান থেকে নিয়মিত পানির চাহিদা মেটানোও সকলের জন্যই ঝামেলা। মোট কথা একটি পরিবারের জন্য যে পানি প্রয়োজন হয় তার পরিমানটাও একেবারে কম নয়। এছাড়াও বোরো মৌসুমের শেষ পর্যায়ের সেচ কাজ চলছে। ডিজেলচালিত স্যালো মেশিনেও ঠিকমত পানি উঠছে না। অল্প পরিমান পানি উঠায় জ¦ালানীবাবদ তেল খরচ লাগছে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। আবার একদিন সেচ দিয়ে প্রচন্ড তাপদাহে পরের দিন ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে অসংখ্য নলকূপ অকেজোও হয়ে পড়েছে। ৮/১০ ফুট মাটি খুড়ে স্যালোমেশিন সেট করে কিছুটা পানি উত্তোলন করে সেচকাজ চালাচ্ছেন। ফলে এখন কৃষকদের জন্য বাড়ি ও মাঠে পানির অভাব সমানভাবে দেখা দিয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী জেসমিন আরা জানান, গ্রীষ্মের সময় এ অঞ্চলের পানির স্তর প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ ফুট নীচে নেমে যায়। এ অবস্থা হলেও পানি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এ বছর একটু আগে থেকেই পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। যে কারণে অনেক অগভীর নলকুপ অকোজো হয়ে পড়েছে। আবার গভীর নলকূপগুলোতেও এখন অপেক্ষাকৃত কম পানি উঠছে।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি উপজেলার একটি গ্রামে পানির স্তর মেপে দেখা গেছে ৩৬ ফুট নিচেই নেমেছে পানির স্তর। যে কারণে এ এলাকার অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। ফলে সঙ্কট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। অনেক গ্রামের কৃষকেরা স্যালোচালিত গভীর নলকুপগুলো মাটি খুড়ে বেশ গভীরে বসিয়ে ও তেমন একটা পানি পাচ্ছেন না এমন খবর তারাও প্রতিনিয়ত পাচ্ছেন। তবে অল্প দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।