ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৮৬ বার
নেত্রকোনায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে খলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্ত্রীর চুল কেটে ও গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুরের গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ভাদুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে নির্যাতনের শিকার নারী গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) নেত্রকোনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামী খলিলুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে খলিলুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ওই নারী। বিয়ের ৪-৫ বছর পর থেকেই খলিলুর রহমান ব্যবসা শুরু করার নামে স্ত্রীর পরিবারের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে এক লাখ টাকা নেন। কিন্তু টাকা পেয়েও ব্যবসা শুরু না করে বিভিন্ন খাতে অহেতুক টাকা খরচ করতেন এবং বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য স্ত্রীর ওপর আবার চাপ সৃষ্টি করতেন। স্ত্রী টাকা দিতে না পারায় একপর্যায়ে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায় খলিলুর।
পরে স্বামীর নির্দেশে শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন ওই নারী। কিন্তু অল্প আয় হওয়ায় তাতেও সন্তুষ্ট হননি খলিলুর। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে দিয়ে অসামাজিক কাজের সঙ্গে লিপ্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তবে স্বামীর এমন কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই নারীর ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এর মধ্যে করোনার কারণে রোজগার কমে গেলে আবার নেত্রকোনায় ফিরে যায় সবাই। কিন্তু যৌতুকের টাকার জন্য নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
এরই মধ্যে গত ২৬ জুন রাতে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন খলিলুর। বেধড়ক মারধরের একপর্যায়ে ওই গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন খলিলুর। নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে কাচি দিয়ে গৃহবধূর চুল কেটে দেন তিনি। পরে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর বাবা খোরশেদ আলী বলেন, মেয়ে সুখে ঘর করবে বলে বিয়ে দিলাম। কিন্তু সুখ হলো না। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর নির্যাতন সইতে হচ্ছে তাকে। মেয়েকে স্বামীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে এ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রায় এক লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনও আরও ৫০ হাজার টাকা চাইছে। আমি কীভাবে দেব এত টাকা? এত টাকা আমার নেই। টাকার জন্য আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলার অবস্থায় নিয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমি স্বামীর নির্যাতন সইতে সইতে এখন প্রায় মৃত্যুর পথযাত্রী। এত দিন আমার সন্তানদের দিকে চেয়ে থেকে তাকে কিছুই বলিনি। তিনি যেভাবে বলেছিলেন আমি সেই ভাবে চলার চেষ্টা করেছি। তারপরও প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। গত কিছুদিন আগে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে সিগারেটের আগুন দিয়েছে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার চুলগুলো কেটে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই । গাঁওকান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোতালেব জানান, এর আগে বেশ কয়েকবার খলিলুরের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন দেনদরবার হয়েছে। আমরা তাকে বেশ কয়েকবার সতর্ক করেছি।
কিন্তু উশৃঙ্খল ও সারাক্ষণ ঝামেলার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এসেছে এটি পুরোপুরি সত্য। আমরাও চাই তার সঠিক বিচার হোক । এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ওসি শাহ নুর এ আলম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা অভিযোগের কোনো কপি হাতে পাইনি। অভিযোগের কপি হাতে পাওয়ামাত্রই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।