বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৫:০৬ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৪০ বার
বুয়েটের এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর গবেষণা অনুযায়ী, দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ২০ ভাগই ঢাকা মহানগরীতে ঘটে এবং এর বেশির ভাগই পথচারী সংশ্লিষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনা দেশবাসীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় যান্ত্রিক যানের আধিক্য, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, পথচারীবান্ধব পরিবেশ না থাকা ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও ভয়াবহতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার মত অসংক্রামক রোগও বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭% এর কারণ হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোকের মত অসংক্রামক রোগ এবং এ ধরণের রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী। যান্ত্রিক যানের ব্যবহার কমিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ পরিবেশ নিশ্চিত হলে একদিকে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে যাবে তেমনি প্রতিদিনকার শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের আশঙ্কাও হ্রাস পাবে। আজ ৯ ডিসেম্বর ২০২১ সকাল ১০.০০ টায় খিলগাঁও এ সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, মালিবাগ শাখা, পল্লীমা সংসদ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
কর্মশালার উদ্বোধনী আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে দ্রুত অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে দেশের ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ৯৭ শতাংশ কমপক্ষে একটি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে আছে। অসংক্রামক রোগ মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হলেও প্রতিরোধযোগ্য। এজন্য প্রয়োজন জীবনাচার পরিবর্তন। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে এনে বায়ুদূষণ হ্রাসেও ভূমিকা রাখা সম্ভব।
সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের ইংলিশ মিডিয়ামের ভাইস প্রিন্সিপাল শাহানাজ বেগম বলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন সুঅভ্যাস গড়ে উঠুক যা তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে। আমাদের বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করে কিন্তু ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা ও ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং না থাকা, তথা হাঁটার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমি প্রত্যাশা করি আজকের এ কর্মশালার পরে সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে এডভোকেট হয়ে উঠবে।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, যানজট ও দূষণ হ্রাস, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসসহ বিভিন্ন উপকার পাওয়া সম্ভব। এসডিজি এর ৩.৬ লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু অর্ধেকে নামিয়ে আনা। হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে এক্ষেত্রে অনেকটাই সফল হওয়া সম্ভব। পাশাপাশি এসডিজির ৭, ১০, ১১ এবং ১৩ নং গোল অর্জনও সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা ও ইংলিশ ভার্সনের ভাইস প্রিন্সিপাল জেরিনা ফেরদৌস। তিনি বলেন, আজকের কর্মশালা থেকে শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ কিভাবে দূরে রাখা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবে। কর্মশালাটি তখনই সফল হবে যখন এখান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা তোমরা ব্যক্তিগত জীবনে কাজে লাগাবে। শুধুমাত্র হেঁটে যাতায়াত নয়, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিতের জন্য খেলাধূলা, বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে সামাজিকীকরণ, নিজের কাজটি করা, ছেলে—মেয়ে নির্বিশেষে ঘরের কাজে সহায়তা করা ইত্যাদি অভ্যাসও গড়ে তুলবে।
কর্মশালার মুলপ্রশিক্ষক ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকতার্ নাঈমা আকতার বলেন, অসংক্রামক রোগের জন্য শারীরিক পরিশ্রম না করা, বায়ুদূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তামাক পণ্য ও অ্যালকোহল গ্রহণ দায়ী। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে সহজেই শারীরিক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা পূরণ সম্ভব। শারীরিক পরিশ্রম আমাদের মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে যা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে যানবাহন থেকে ২৫% কার্বন নির্গমন হয়। যত বেশি মানুষ গাড়ির পরিবর্তে হেঁটে যাতায়াত করবে ততই কার্বন নির্গমন কমে যাবে ও দূষণ কমে যাবে।
কর্মশালায় ৫০ জন শিক্ষার্থী ৫টি দলে বিভক্ত হয়ে স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরে। হেঁটে যাতায়াতের সমস্যা হিসেবে শিক্ষার্থীরা গাড়ির গতি, গতিরোধক না থাকা, ফুটপাতে যান চলাচল, গাড়ির ধোঁয়া, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, জলাবদ্ধতা, আবর্জনা, ইভটিজিং, পরোক্ষ ধূমপান, ছিনতাই এর আশঙ্কা ইত্যাদি তুলে ধরে। সমাধান হিসেবে তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, হাঁটার পরিবেশ উন্নয়ন, জেব্রা ক্রসিং প্রদান, সাইকেল লেন প্রদান, ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং ও যানবাহন চলাচল বন্ধ, রাস্তা থেকে আবর্জনা ও নিমার্ণ সামগ্রী অপসারণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সরকার কর্তৃক নিয়মিত রাস্তা ও ফুটপাত মেরামত করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ইত্যাদি সুপারিশ তুলে ধরেন। এছাড়াও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরির জন্য তারা সুপারিশ করেন যারা এলাকাভিত্তিক হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করবে। পাশাপাশি তারা
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ উন্নয়নে এডভোকেট হয়ে ওঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকতার্ জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পল্লীমা সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি আওয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ডেভেলপমেন্ট অফিসার প্রমা সাহা, আহমেদ হোসেন এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।