ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫৫ বার
বাংলাদেশের হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অস্ত্রের সন্ধানে অভিযান চলছে। সোমবার ভোর থেকে এই অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল।
ভারতীয় সীমান্তের অদূরে অবস্থিত এই সাতছড়ির বনাঞ্চলে এধরনের অভিযান নতুন নয়। গত কয়েক বছরে এখানে অনেকগুলো অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেশ কিছু ভারী অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে কামান বিধ্বংসী রকেট, রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, মেশিনগান এবং কয়েক হাজার হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব।
ওই বছরেই আরো দু'দফা অভিযান চালিয়ে আরো কিছু অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী।
এর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাতছড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০টি হাই এক্সপ্লোসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করা হয়।
তা ছাড়া ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ১৩টি রকেট লঞ্চারের শেলসহ কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
এ বছরই মার্চ মাসে সাতছড়িতে আরেকটি অভিযান চালিয়ে ১৮টি ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট শেল উদ্ধার করে বিজিবি।
এ এলাকায় সর্বশেষ অভিযানটি চালানো হয় গত ১৩ আগস্ট। সেদিন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন একটি ব্রিজের পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় নয়টি একনলা বন্দুক, তিনটি পিস্তল ও ১৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি।
সাতছড়িতেই কেন অস্ত্রের মজুদ?
প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশের এই একটি জায়গায় কেন বার বার এ ধরনের ভারি অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভৌগলিকভাবে হবিগঞ্জের সাতছড়ির অবস্থান এমন যে এটি অস্ত্র আনা, নেয়া এবং জমা করার জন্য নিরাপদ একটা জায়গা হতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান বলেন জিওগ্রাফিক্যালি এই এরিয়াটা বন-জঙ্গল ঘেরা এবং এখানে মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে কাজ করার অত্যন্ত সহজ।
ভারতের সীমানা ঘেঁষা এই সাতছড়িতে এর আগেও কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে যারা এখানে অস্ত্র, গোলাবারুদ রাখছে তারা কেন বার বার একই স্থানে অস্ত্র মজুদ করছে?
তিনি বলেন এটা একটা সাইকোলজিক্যাল গেস (মনস্তাত্ত্বিক অনুমান) যে, আচ্ছা কয়েকবারই তো ধরা গেল, আর বোধহয় এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। এই সুযোগটা তারা কাজে লাগাতে পারে। এমন একটা অনুমান থেকে তারা এটা করতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলছেন, অস্ত্রগুলো দেখলে বোঝা যাবে এটা নতুন করে মজুদ করা হয়েছে নাকি ২০১৪ সালে যে অস্ত্র মজুদ করা হয়েছিল সেটাই কয়েক দফায় উদ্ধার করা হচ্ছে সেটা অনুমান করা যাবে। যখন এই ধরণের একটা জায়গাতে সিলেক্ট করা হয় অস্ত্র মজুদ করার জন্য তখন এক জায়গায় রাখা হয় না। চারিদিকে টানেল করা হয়। বিভিন্ন টানেলে এগুলো মজুদ করা হয়। এমন হতে পারে অস্ত্রগুলো তখন বিভিন্ন টানেলে মজুদ করা হয়েছিল। সেটা অস্ত্রগুলো দেখলে বোঝা যাবে কতটা পুরাতন।
সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা
সাতছড়ি এলাকাটা এক সময় বন-জঙ্গলে ঘেরা একটা দুর্গম এলাকা ছিল। পরে এটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হলেও সাধারণ মানুষের এখানে অবাধ যাতায়াত নেই। বিশেষ করে বর্ষার সময় স্থানটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। এছাড়া এখানে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত এলাকার সাথে যুক্ত এমন অসংখ্য রাস্তা আছে। তাই অস্ত্র মজুদ করার এটা একটা আদর্শ স্থান বলে মন্তব্য করছেন তারা।
ত্রিপুরার কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠী কি এর পেছনে?
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এরকমও হতে পারে ত্রিপুরা লিবারেশন ফ্রন্টের একটা অংশ এখনো একটিভ আছে। অনুমান ভিত্তিক বলা যায় এই অস্ত্রগুলো তাদের এবং তারাই রেখেছে, মজুদ করেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এত বড় কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী নেই যারা এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল তারা ছিল বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে। সেই গোষ্ঠী এখানে অস্ত্র মজুদ করবে না বলে তারা মনে করেন। যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে তাতে এত ম্যাসিভ অস্ত্র ব্যবহার করা হয় না। সেই জায়গাটাতে ডেফিনিটলি এখানে হয়ত কোনো গ্রুপ আছে যারা পাহারা দিয়ে রাখছে। তাদেরকে টাকা দিয়ে রাখা হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রব খান বলেন, যদি বাংলাদেশের মধ্যে এই অস্ত্রের ব্যবহার কেউ করতে চায় তাহলে একটা হতে পারে। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবহার করা হবে এটা না চিন্তা করে নিরাপদ ভাবে রাখার কথা চিন্তা করেই রাখা হয়েছে। যেহেতু দেশের যেকোনো স্থানে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া সহজ হবে না তাই তারা আপাতত সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সূত্র : বিবিসি