ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৫৯২ বার
রাষ্ট্রমালিকানাধীন দুই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে তাঁদের দুর্নীতির খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তাঁরা হলেন সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান ও অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। দুদক চিঠি দিয়ে তাঁদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য চেয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রূপালী ব্যাংকের এমডি থাকাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা খরচ করেছেন। আর অগ্রণী ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘুষ ও অবৈধ সুবিধা দিয়ে ঋণ প্রদানসহ নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্য করে অর্জিত অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এ জন্য অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দুদক। আর সোনালী ব্যাংকের এমডির বিষয়ে তথ্য চেয়ে রূপালী ব্যাংকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
দুজনই প্রায় ছয় বছর ধরে এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিন বছর রূপালী ব্যাংকের এমডি পদে দায়িত্ব শেষে ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট নতুন করে তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পান আতাউর রহমান প্রধান। একই দিনে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামকে দ্বিতীয় দফায় একই পদে বহাল রাখা হয়। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট তাঁরা এমডি হিসেবে প্রথম নিয়োগ পেয়েছিলেন।
সোনালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি ব্যাংকিং নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা কমিশন নিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন। এর মাধ্যমে ক্ষতিতে পড়েছে ব্যাংক। সেই টাকা পাচার করে বাড়ি কিনেছেন। এ জন্য রূপালী ব্যাংকের কাছে বেশ কিছু নথিপত্র চেয়েছে দুদক। তার মধ্যে রয়েছে ঢাবির সিনেট নির্বাচন উপলক্ষে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অফিস আদেশ ও নির্বাচন উপলক্ষে খরচের বিল, খুলনা শাখার গ্রাহক ক্রিসেন্ট জুট মিল এবং স্থানীয় শাখার গ্রাহক বিউটিফুল জ্যাকেট ও দি বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসের সব ধরনের নথিপত্র। এ ছাড়া আতাউর রহমান প্রধান এমডি থাকাকালে রূপালী ব্যাংকে যত কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে, সেই নথিও চেয়েছে দুদক।
এ সম্পর্কে আতাউর রহমান প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ঢাবির সিনেট সদস্য হয়েছিলাম। এখানে টাকা খরচের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সে জন্য এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এদিকে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন হাসান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘুষ ও অবৈধ সুবিধা দিয়ে ঋণ প্রদান ও বদলি-বাণিজ্য করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরে।
এ নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। যারা এমডি হতে আগ্রহী, তারা এসব অভিযোগ তুলছেন। মনে হচ্ছে তাদের আর তর সইছে না।’
সোনালী ব্যাংক রাষ্ট্রমালিকানাধীন সবচেয়ে বড় ব্যাংক। দেশজুড়ে ও দেশের বাইরে রয়েছে ব্যাংকটির শাখা ও নেটওয়ার্ক। হল–মার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটি অনেকটা চুপসে গেছে। বিনিয়োগের চেয়ে এখন ট্রেজারি ব্যবসার দিকেই বেশি মনোযোগ ব্যাংকটির।
আর অগ্রণী ব্যাংক দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যাংক। এই ব্যাংকেরও শাখা ও নেটওয়ার্ক রয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি শাখায় বিভিন্ন অনিয়মে ব্যাংকটির আর্থিক ক্ষতি হলেও ব্যাংকটি শিক্ষা নেয়নি। সব বড় প্রকল্প ঋণে মনোযোগ বাড়িয়েছে। বড় সিন্ডিকেট ঋণে নেতৃত্ব দিয়ে শুধু একা নয়, অন্য সরকারি ব্যাংকগুলোকেও যুক্ত করছে ব্যাংকটি।
সূত্র : প্রথম আলো