ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ জুলাই, ২০২৪ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৫ বার
ব্যাংকে আর্থিক অনিয়ম রোধে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান, নীতিমালা ও নির্দেশনা মেনে ব্যাংকিং কার্যক্রম হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য বহিঃ নিরীক্ষক নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খেলাপি ঋণ, প্রভিশন সংরক্ষণ, সুদ মওকুফ, মুনাফার হিসাবায়ন, আমদানি রপ্তানির সঠিক হিসাবায়ন, প্রবাসী আয়ের প্রণোদনা বিতরণ থেকে শুরুর করে যাবতীয় ব্যাংকিং সঠিক ভাবে হচ্ছে কি না তা দেখবে এই নিরীক্ষক।
এ জন্য সংশ্লিষ্ট বছরের অষ্টম মাসে বহিঃ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। নিরীক্ষকের কর্মপদ্ধতিও বাতলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ‘ব্যাংক-কোম্পানি বহিঃ নিরীক্ষণ বিধিমালা, ২০২৪’ শীর্ষক এ সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বহিঃ নিরীক্ষক দ্বারা প্রণীত অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদনে যে সব বিষয়ে উল্লেখ থাকবে তা নিম্নরূপ:
* ঋণ শ্রেণিকরণ, ঋণের বিপরীতে রক্ষিতব্য সংস্থান ও মুনাফা হিসাবায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাসহ সংশিষ্ট ও ব্যাংকের নীতিমালার সঠিক ভাবে পরিপালিত হয়েছে কিনা;
* নিরীক্ষাধীন শাখাসমূহের অবলোপনকৃত, পুনঃ তফসিলকৃত বা পুনর্গঠিত ঋণ হিসাব, মওকুফকৃত সুদ সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে পর্যালোচনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রতিপালন হয়েছে কিনা;
* নিরীক্ষাধীন বছরের মোট অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ, যা হতে আদায়ের পরিমাণ এবং আদায়ের জন্য ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ কার্যকর কি না;
* রপ্তানি প্রণোদনা/রপ্তানি ভর্তুকি/নগদ সহায়তার আবেদনপত্র নিরীক্ষণে কোনো অনিয়ম বা নিদের্শনা পরিপালনে ব্যত্যয় হয়েছে কিনা;
* দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রযোজ্য রাজস্ব সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে কিনা;
* বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী নস্ট্রো হিসাব যথাযথভাবে সমন্বয় হয়েছে কি না;
* ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১৫গ অনুসারে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যথাযথভাবে কার্যকর হয়েছে কি না এবং তা ব্যাংক ব্যবস্থাপনা হতে স্বাধীন কি না;
* বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত বিশদ ও বিশেষ পরিদশর্নে প্রাপ্ত অনিয়মসমূহ নিষ্পত্তির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না;
* বিগত বছরের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এবং বিধিবদ্ধ অন্যান্য নিরীক্ষায় প্রাপ্ত অনিয়মসমূহ সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে কি না;
* ব্যাংকের সুশাসন ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়েছে কি না; এবং সর্বপরি
* ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নির্ধারিত সকল বিষয়াদি উপরে উল্লেখিত নির্দেশনা মোতাবেক গৃহিত ও বাম্তবায়ন হয়ে কি না তা নিরীক্ষা প্রতিবেদন উল্লেখ করতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন ও ঋণ সংক্রান্ত নিরীক্ষা ক্ষেত্রে যে সব বিষয়াদি সম্পর্কে বহিঃ নিরীক্ষক মতামত প্রদান করবে:
* আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দেশিত বিধি-বিধানের ব্যত্যয় হয়েছে কি না; বিশেষ করে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনাসমূহ পরিপালিত হয়েছে কিনা;
* রপ্তানি বিল ডিসকাউন্টিং/নেগোসিয়েশন/ক্রয় করবার ক্ষেত্রে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থায়ন করা হয়েছে কি না;
* আমদানির বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রায় এবং বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়নের ক্ষেত্রে পরিপালনীয় বিধি-বিধানের ব্যত্যয় হয়েছে কি না;
* অগ্রাধিকার ভুক্ত বা বিশেষ অনুমোদনের আওতায় বহির্মুখী রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে যথানিয়মে উৎসে-কর ও ভ্যাট কর্তনসহ নিদের্শিত বিধি-বিধানের ব্যত্যয় হয়েছে কি না;
*বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বাজার ঝুঁকি, তারল্য ঝুঁকি, ঋণ ঝুঁকি, পরিপালনগত ঝুঁকি, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত ঝুঁকি, সুনাম ঝুঁকি, পরিচালনগত ঝুঁকি, এবং সমন্বয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা যথাযথ কি না;
* আমদানি সংক্রান্ত দলিলাদি মোতাবেক পণ্য দেশে এসেছে কি না;
* রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদি বিধি মোতাবেক সঠিকভাবে সম্পাদন হয়ে কিনা কি না;
* প্রত্যাবাসিত রপ্তানি মূল্য দ্বারা সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাব সময় না করে সরাসরি গ্রাহকের হিসাবে জমা করার ঘটনা ঘটেছে কি না;
* অফশোর ব্যাংকিং লেনদেন সম্পর্কিত পরিপালনীয় আইন ও বিধি-বিধানের ব্যত্যয় হয়েছে কি না;
* বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন ও ঋণ সম্পর্কিত বিষয়ে কার্যকর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কি না এবং এই ক্ষেত্রে কোনো গুরুতর ত্রুটি বা দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে কি না;
* বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন ও ঋণ সম্পর্কিত নির্দেশনা এবং সংশিষ্ট ব্যাংকের এই সম্পর্কিত নিজস্ব নীতিমালা ব্যাংক কর্তৃক যথাযথভাবে অনুসৃত হয়েছে কি না; এবং
* প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রণোদনা যথাযথভাবে প্রদান, হিসাবভুক্তকরণ ও অধিক নেওয়া হয়েছে কিনা তা পর্যালোচনায় থাকবে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদন:
আর্থিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত বিধি-বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত মানসম্পন্ন হয়েছে কি না; মূলধন, সঞ্চিতি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিট সঙ্গতি, নগদ অর্থ ও তরল সম্পদ বিধি অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হয়েছে কি না; ব্যাংকের সম্পদ এবং দায়ের ম্যাচুরিটির মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্যতা রয়েছে কি না যা পরবর্তীতে ব্যাংকের তারল্যে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে এবং সর্বপরি ব্যাংক কোম্পানি আইন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা, হিসাবায়নসহ কার্যাবলি সঠিকভাবে পরিপালন হয়েছে কিনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘিত হলে, অসততা ও প্রতারণা-সংক্রান্ত কারণে কোনো ফৌজদারি অপরাধ ঘটলে, ব্যাংকের সংরক্ষিত মূলধন ওই ব্যাংকের আবশ্যক মূলধনের ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে, পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের নিশ্চয়তা বিঘ্নিত হলে, কোনো গুরুতর আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটলে বা পাওনাদারের পাওনা মেটানোর মতো ব্যাংকের সম্পদ যথেষ্ট কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হলে প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।