ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ঋণ কমলেও বেড়েছে খেলাপি

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৩০ জুলাই, ২০২৪ ১০:২২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৭ বার


ঋণ কমলেও বেড়েছে খেলাপি

দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা উচ্চমাত্রায় খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি। খেলাপি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সুবিধা দিলেও তা কোনোভাবেই কমানো যায়নি। উল্টো বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু তাই নয়, কনভেনশনাল ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি বিদেশি ব্যাংকিং ইউনিটেও (অফশোর ব্যাংকিং) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যদিও একই সময়ে এই ইউনিটে ঋণ কমেছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের অভ্যন্তরে পৃথক এক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণদান ও বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। এতে স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয়। ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ে প্রয়োগ করা হয় না। শুধু মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি ৪২টি ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ডলারের সরবরাহ বাড়াতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানতে বিভিন্ন আর্কষণীয় পণ্য তৈরি করেছে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশও সেই পথেই হেঁটেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকের অফশোর ইউনিটগুলোর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। আগের বছরের (২০২৩ সাল) একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৮ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণ কমেছে ৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মার্চে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অফশোর ব্যাংকিংয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৭৪ কোটি টাকা বা ৩৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনুসর কালবেলাকে বলেন, এ খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ারই কথা। কারণ বছরের ব্যবধানে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এখন যারা এই ইউনিটগুলো থেকে ঋণ নিয়েছেন, তারা ঋণ পরিশোধ করতে গেলে টাকায় ৩৫ শতাংশ বেশি দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি সুদের হারও বেড়েছে। এজন্য অনেকেরই ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খেলাপি ঋণে।

অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণের মাধ্যমে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু—জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ যদি পাচার করতে চায়, তাহলে করতে পারে। কিন্তু এ খাত থেকে ঋণ নিয়েই পাচার করে, এটা বলা ঠিক না। কারও যদি পাচারের ইচ্ছা থাকে, সে তো হুন্ডি বা অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করেই পাচার করবে। আর কারও উদ্দেশ্য ভালো থাকলে সুযোগ থাকার পরও করবে না।

প্রচলিত আইনের বাইরে ব্যাংকিংয়ের সুযোগ থাকায় ২০২০ সালের পর অনেক ব্যবসায়ী অফশোর ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে টাকার অবমূল্যায়ন, ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিকারকরা এ খাত থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। এতে অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণ কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চে অফশোর ব্যাংকিংয়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে অফশোর ব্যাংকিংয়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ঋণ কমেছে ৮০২ কোটি টাকা। তবে এসব ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিংয়ে কোনো খেলাপি নেই।

মার্চে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বেসরকারি ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণ কমেছে ২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। যদিও একই সময়ে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিংয়ে খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৮৮৪ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, বছরের ব্যবধানে বিদেশি ব্যাংকগুলোর অফশোর ঋণ কমেছে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চে বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ১৬ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। একই সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ কমলেও খেলাপি বেড়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালের মার্চে যা ছিল ৫১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি বেড়েছে ১৬১ কোটি টাকা।


   আরও সংবাদ