ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০৯:২২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১০৭ বার
ঢাকা: ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও সেবা ও সক্ষমতার বিচারে ব্যাংক খাত পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি ভুল ডাটা ব্যাংক খাতে।
উইন্ডো ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে এ খাতকে ভালো দেখানো হচ্ছে। এভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতকে আমরা ঘুণে ধরিয়ে দিয়েছি। টাকা ছাপিয়ে অচল ব্যাংক সচল রাখা হচ্ছে। এতে কেবল সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়েছে তেমন না; সরকারেরও ধার নেওয়ার সক্ষমতা কমেছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) পল্টনে ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরাবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, টাকা ছাপিয়ে অচল ব্যাংক সচল রাখার দরকার নেই। আবার রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। ডলারের দর বাজারভিত্তিক হয়েছে, সুদহার বেড়েছে। ফলে এখন আর প্রণোদনার দরকার নেই। রেমিট্যান্সের প্রণোদনা দুবাই ভিত্তিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী খেয়ে যাচ্ছে। আবার ইসলামী ব্যাংকগুলো উদ্ধারের নামে যদি টাকা ছাপানো অব্যাহত থাকে, তাতেও মূল্যস্ফীতি কমবে না। এছাড়া ধার করে রিজার্ভ সাময়িক বাড়ানো যাবে। তবে এটা স্থায়ী সমাধান না। বরং সঠিক নীতির মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। তা না হলে ১৩ বিলিয়ন রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন জিডিপির দেশ ঠিক রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, রপ্তানি খাতের ডাটা নিয়ে এখন কথা হচ্ছে। তবে যদি বলা হয়, কোন খাতের ডাটায় সবচেয়ে বিভ্রান্তি, সেটা ব্যাংক খাত। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১১ শতাংশ বলা হলেও আসলে তা ২৪-২৫ শতাংশ। এ খাতের সব ধরনের তথ্যে বিভ্রান্তি আছে। এটা কার্পেটের নিচে ময়লা রেখে পরিস্থিতি ভালো দেখানোর মতো। তবে ময়লা যেহেতু আছে গন্ধ ছড়াবেই। নির্বাচনের আগে আর্থিক খাতে অনেক ধরনের সংস্কারের কথা বলা হলো। কিন্তু ৬ মাস পার হলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ তো দেখা গেল না।
ব্যাংক খাতের তারল্য সমস্যার কারণে সরকার ঋণ নিতে পারছে না উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। তবে নিতে পেরেছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এখন যদি আমানতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তারপরও বাড়বে এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এখন এর অধিকাংশই যদি সরকার নিয়ে যায় বেসরকারি খাতের ঋণ বাড়বে কী করে?
নিজেদের পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য কৃষি উৎপাদন বেশি দেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন এই গবেষক। তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে। ডাটার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন দেখানো হচ্ছে। আবার আমদানিও হচ্ছে। এত চাল কোথায় যায়, কারা খায়? আমরা এখন মাছ উৎপাদনে নাকি বিশ্বের দ্বিতীয়, অথচ মাছের দাম তো কমে না। ইলিশ মাছ উৎপাদনে আমরা নাকি বিশ্বের প্রথম। তাহলে এক কেজি কিনতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। আমি নিজেই তো ইলিশ মাছ কিনতে পারি না। এসব মাছ কোথায় যায়, কারা খায়?