ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪২ বার
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশ সনদের বাস্তবায়নকেই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলছে বলে অভিযোগ করেছে গণসংহতি আন্দোলন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের কিছু সুপারিশ কমিশনের নিজস্ব বৈঠকের আলোচনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, আবার কিছু সুপারিশ অগণতান্ত্রিক। এসব প্রস্তাব বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যা জুলাই সনদের বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে আশঙ্কার মুখে ফেলছে। শুধুমাত্র গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন বা ভিন্নমতের মীমাংসার বিষয়ে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এ ধরনের প্রক্রিয়া অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করবে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে ভিন্নমতের বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল। সেইসঙ্গে ভিন্নমত নিরসনের উপায় হিসেবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে এসব ভিন্নমত জনগণের সামনে তুলে ধরে মতামত নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশে ভিন্নমত বাস্তবায়নের কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মাসের পর মাস আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি, সেসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল না হয়েই গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাস্তবসম্মত নয়।
তারা আরও বলেন, ভিন্নমত চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়। এটি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং অনৈক্য বাড়িয়ে দেবে। নির্বাচিত সংসদের কর্তৃত্ব খর্ব করে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা আদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করা হলে সেটি টেকসই হবে না।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিতে প্রধানতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল জনগণের অনুমোদন গ্রহণ। জনগণের অভিপ্রায়ের প্রকাশ হিসেবে আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা প্রদানের জন্য এবং আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার জন্য আমরা বলেছিলাম শুরু থেকেই। কিন্তু তা কমিশন যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাব হিসাবে নিয়ে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করেনি। ফলে আমরা শুরু থেকেই সংবিধান সংস্কার পরিষদের প্রস্তাব করে আসলেও আগামী সংসদ-এর নাম যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হবে সে বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এই বিষয়েও রাজনৈতিক ঐক্য ও সমঝোতার পথ অনুসরণ করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।
তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী দলগুলোর মধ্যকার ঐক্য এই গণঅভ্যুত্থানের ও ঐকমত্য প্রক্রিয়ার ভিত্তি। সেই ঐক্যবদ্ধতার ভিত্তিতেই জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই সনদ বাস্তবায়নে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। আর এই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের পথরেখা বাস্তবায়নের জন্য আমরা বারবার বলেছি।
গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা দেখে মনে হচ্ছে, কমিশন সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। কোনো বিশেষ পক্ষকে খুশি করতে জাতীয় ঐকমত্যকে হুমকির মুখে ফেলছে বলেও জনগণের ভেতরে ধারণা তৈরি হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জাতীয় স্বার্থের জন্য উদ্বেগজনক।
নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করতে হবে।