ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর, ২০২৫ ১৬:৪৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫ বার
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মানুষকে বোকা বানানো ইসলামের শিক্ষা নয়। জান্নাতের টিকেট বিক্রির কথা বলে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না।’
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মউশিক কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষায় কেয়ারটেকারগণের দেশ ও জাতি গঠনের অগ্রণী ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি আজ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক না। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে নেওয়া, এটা কখনোই ইসলাম কথা বলে না। এই কথাগুলো আমি এই জন্যই বলছি যে এগুলো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কথাগুলো বলছে সবাই। এই কথাগুলো আজকে জনগণের সামনে আসা উচিত, বেশি করে আসা উচিত।’
পিআর প্রশ্নে একটি রাজনৈতিক দল এতোদিন জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি রাজনৈতিক দল সমানে চিৎকার করেছে, পিআর দিতে হবে, পিআর না হলে নির্বাচন হবে না। অনেক হুঙ্কার- টুংকার হয়েছে, তাই না? এখন আবার সুর নরম হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের জন্য সব চতুর্দিকে দৌড়, ঢাক-ঢোল চলছে। এই জিনিসগুলো ঠিক না। মানুষকে যেটা বলবেন, সেটা সঠিকভাবে বলা উচিত এবং সেই পথে যাওয়া উচিত। কিন্তু মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করা ইসলাম ধর্মের কোথাও বলেছে, এটা আমার জানা নাই।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, এই মহল কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে দাঁড়াতে পারছিল না। আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব তাদেরকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার সুযোগ করে দেন। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ-আইডিএল নামে প্রথম তারা এসেছিলো।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, তারপর যারা কাজ করেছেন, তারা আমাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন, আমরাও তাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১০ বছর আমরা তাদেরকে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য দৃশ্যমান কোন কাজ করতে দেখিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে শুনতে পাই, ছাত্রলীগের মধ্যে তারা ঢুকেছিল, ছাত্রলীগ সেজে তারা সেখানে ছিল। এই ধরনের কাজ তো আমরা করতে পারি না। আমরা সরাসরি সামনাসামনি লড়াই করেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে পিআর, এটা কয়জন মানুষ বুঝে? আপনারা তো সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করেন। এটার সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত না। তারা বুঝে, ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট। একজন ব্যক্তি দাঁড়াবে, তার মার্কা থাকবে, আমি ভোট দেব, এটাই আমরা সব সময় সেই আদিকাল থেকে দেখে আসছি।’
তিনি আরো বলেন, এখন এটাকে পরিবর্তন করবেন। তার জন্য গণভোট করবেন। গণভোটে থাকবে আবার ‘হ্যাঁ’ ‘না’। এখন গণভোটের নাকি চারটা প্রশ্ন থাকবে। চারটা প্রশ্ন একটা গণভোটের ব্যালটে থাকবে। এটা এখন পর্যন্ত কেউ বুঝতেই পারছে না, শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না। দেখবেন শেষদিন পর্যন্ত কেউ বুঝতেও পারবে না।
বিএনপি’র এই নেতা বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে যখন আলাপ করছিলাম, তখন আমি বলেছিলাম, আপনারা এইভাবে জিনিসগুলোকে আনেন, যেন মানুষ আস্তে আস্তে ধাতস্থ হতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘পরিবর্তন তো আমরা চেয়েছি। বিএনপি ২০১৬ সালে প্রথম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ২০২০ সালে, ২০৩০ সালে কিভাবে দেশ চলবে সে সম্পর্কে তিনি ধারণা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর দুইবারের বেশি হওয়া উচিত না এগুলো তিনিই দিয়েছিলেন। এরপরে ২০২৩ সালে আমরা প্রথমে ২৭ দফা এবং পরে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে আমরা ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি, ওখানে সংস্কারের সবকিছু আছে।’
তিনি বলেন, সুতরাং আমরা সংস্কার চাই এবং সংস্কার চেয়েছি। পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সুপারিশগুলো সরকারের কাছে দিয়েছে, তা ‘ঠিক হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
নির্বাচন প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে। আসুন আমরা সবাই মিলে অন্তত এই জায়গাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই যে, একটা সুন্দর, সুষ্ঠ নির্বাচন, সকলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ একটা নির্বাচন করে আমরা একটা গণতান্ত্রিক সরকার ও গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট গঠন করি। যার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সমস্ত সমস্যাগুলোকে তুলে ধরতে পারবো। পার্লামেন্টে আলাপ হবে। সেই পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত হবে, সেটাই হবে জনগণের সিদ্ধান্ত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ থেকে ১৬ বছর একটা ভয়াবহ দানবীয় সরকার ছিল। নিজের লোক, দলের লোক বসাতে গিয়ে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্র দেশে থাকলে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা থাকে। কিন্তু সেটা না থাকায় শেখ হাসিনার সরকার সব মানুষের অধিকারে পাশাপাশি ধর্ম পালনের অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। অথচ সে সময়ে কিছু আলেম হাসিনাকে কওমি জননী উপাধি দিয়েছিল। বিগত সরকার সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদেরকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, এত মুসলমানের দেশ, এত মাদ্রাসা, মসজিদ, এত ইমাম, উলামা, বিদ্বান পণ্ডিতরা থাকা সত্ত্বেও দেশে এত অন্যায় কেন? এত পাপ কেন? কেন মানুষ এত চুরি করে? এত দুর্নীতি করে? আমি তা বুঝতে পারি না। একটি মসজিদ তৈরির ব্যাপারে আমাদের মানুষের যে আগ্রহ— সেই আগ্রহ কোথায় যায়, যখন একটি ভালো মানুষ তৈরির কথা আসে?
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মউশিক কেয়ারটেকার কল্যাণ পরিষদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।
আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নতুন না, এ যুদ্ধ অবিরাম করতে হবে। ভারতের আধিপত্যবাদ পাকাপোক্ত করতেই আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সংকট এখনও কাটেনি, গণতন্ত্র এখনও ফিরেনি, মানুষ এখনও মুক্তি ফিরে পায়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারেক রহমানকে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী করতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বিজয় হবে না।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্ণরসের গভর্ণর প্রিন্সিপাল শাহ মো. নেছারুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মাওলানা মো. জুবাইদুর রহমান, মাওলানা মাহফুজুর রহমান প্রমূখ বক্তৃতা করেন।