ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৬৫ বার
হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম সংস্কারক আলেম ও আধ্যাত্মিক রাহবার। লেখালেখি, পাঠদান, আধ্যাত্মিক পরিশোধনের মাধ্যমে তিনি মুসলিম উম্মাহকে পথ দেখিয়েছেন। সমকালীন আলেমরা তাঁকে ‘মুজাদ্দিদে মিল্লাত’ বা জাতির মহান সংস্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এখনো তাঁর শিষ্য ও অনুসারীরা উপমহাদেশের মুসলিম জাগরণ ও দ্বিনি শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন।
জন্ম ও পরিবার : আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) ৫ রবিউস সানি ১২৮০ হিজরি মোতাবেক ১৪ মার্চ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল হক ছিলেন একজন ধনী স্থানীয় মুসলিম নেতা। পিতার দিক থেকে তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.)-এর বংশধর আর মায়ের বংশধারা মিলিত হয়েছে আলী (রা.)-এর সঙ্গে। তাঁর পূর্বপুরুষরা দ্বিন প্রচার ও মুসলিম প্রশাসক হিসেবে উপমহাদেশে আগমন করেন।
শিক্ষাজীবন : হাকিমুল উম্মত (রহ.) প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন মিরাঠ নগরীতে। এখানেই তিনি ফারসির প্রাথমিক কিতাবগুলো পাঠ করেন। মরহুম হাফেজ হুসাইন আলীর কাছে কোরআন হিফজ করেন। এরপর থানাভবনে এসে মাওলানা ফাতাহ মুহাম্মদ (রহ.)-এর কাছে আরবির প্রাথমিক ও ফারসির মাধ্যমিক কিতাবগুলো অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দারুল উলুম দেওবন্দে এসে মাওলানা মানফাআত আলী (রহ.)-এর কাছে শিক্ষা কারিকুলাম সম্পন্ন করেন। ১২৯৫ হিজরি থেকে ১৩০১ হিজরি পর্যন্ত তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে অবস্থান করেন।
কর্মজীবন : শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর ১৩০১ হিজরিতে তিনি ভারতের কানপুরে অবস্থিত ‘মাদরাসায়ে ফরজে আম’-এ শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ যখন তাঁর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে চাঁদা সংগ্রহের অনুরোধ করলেন, তখন তিনি ফরজে আম মাদরাসা ত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে দুই হিতাকাঙ্ক্ষীর উদ্যোগে থানবি (রহ.)-কে কেন্দ্র করে টপকাপুর এলাকায় ‘জামিউল উলুম’ নামে একটি নতুন মাদরাসা গড়ে ওঠে। পাঠদানের ওপর যেন জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে এ জন্য তিনি কিছুদিন চিকিৎসাশাস্ত্র চর্চা করেন। কিন্তু সব কিছু ছেড়ে ১৩১৫ হিজরিতে থানাভবনে থিতু হন।
আধ্যাত্মিক সাধনা : দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়নের সময় আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.)-এর প্রতি শিষ্যত্ব গ্রহণের আবেদন করেন। কিন্তু গাঙ্গুহি (রহ.) শিক্ষার্থীদের বাইয়াত করানো সমীচীন মনে করতেন না, তাই তিনি নিষেধ করে দিলেন। ১২৯৯ হিজরি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.) হজের ইচ্ছা করলে থানবি (রহ.) তাঁর মাধ্যমে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.)-এর কাছে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি তাঁর বাইয়াতের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং গাঙ্গুহি (রহ.)-এর কাছে সুপারিশের অনুরোধ করেন। চিঠি পাঠ করে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.) নিজেই তাঁকে বাইয়াত করে নেন। ১৩০১ হিজরিতে থানবি (রহ.) হজে গেলে প্রিয় শায়খের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। ১৩০৭ হিজরিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রিয় শায়খের কাছে যান এবং ছয় মাস অবস্থান করেন। ১৩১১ হিজরিতে তিনি হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)-এর কাছে আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য অসংখ্য মানুষ বাইয়াত গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে ১৩৯ জনকে নসিহত করার এবং ৭০ জনকে অন্যদের মুরিদ বানানোর অনুমতি প্রদান করেন। বাংলাদেশে থানবি (রহ.)-এর খলিফাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—মাওলানা আতহার আলী (রহ.), মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর, মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব (রহ.), মাওলানা মাকসুদ (রহ.), সুফি নুর বকশ (রহ.), মাওলানা নাজির আহমদ (রহ.) প্রমুখ।