ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৪ বার
মহানবী (সা.) ছিলেন কুরাইশ বংশের সন্তান। কুরাইশ শব্দের অর্থ একতাবদ্ধ, বণিক বা বাণিজ্য কাফেলা।
তবে কোনো অর্থই চূড়ান্ত নয়। মহানবী (সা.)-এর পূর্বপুরুষ নদর বিন কিননার নামানুসারে কুরাইশ গোত্রের নাম করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে তাঁর পর্যন্ত বংশপরম্পরা হলো—মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হিশাম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররা ইবনে কাব ইবনে লুওয়াই ইবনে গালিব ইবনে ফিহির ইবনে মালিক ইবনে নদর ইবনে কিনানা। (আর-রাসুল, পৃষ্ঠা-২৯ ও ৩০; সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা-১)
আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত ও পবিত্র বংশধারায় প্রেরণ করেছিলেন। এটা ছিল আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ গোত্র ও বংশগুলো বাছাই করেন এবং আমাকে সবচেয়ে ভালো বংশে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি ঘরগুলো বাছাই করেছেন এবং আমাকে সবচেয়ে ভালো ঘরে সৃষ্টি করেছেন। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে থেকে ইসমাইল (আ.)-কে বেছে নিয়েছেন এবং ইসমাইলের বংশে কিনানা গোত্রকে বংশ বেছে নিয়েছেন, কিনানা গোত্র থেকে কুরাইশ বংশকে বেছে নিয়েছেন, কুরাইশ বংশ থেকে হাশিম উপগোত্রকে বেছে নিয়েছেন এবং বনি হাশিম থেকে আমাকে বেছে নিয়েছেন। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৫)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে মহানবী (সা.) নিজের বংশধারার শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হিসেবে বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে আমার পর্যন্ত আমার বংশে কোনো ব্যভিচার নেই। সবই বিয়ে। ’ (আল্লামা মুহাম্মদ ইদরিস কান্ধলভি, সিরাতে মোস্তফা : ১/২০)
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় বিবেচনায় কুরাইশ ছিল আরবের শ্রেষ্ঠ গোত্র। রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের সামনে আবু সুফিয়ান (রা.) (ইসলাম গ্রহণের বহু আগে) স্বীকার করেছিলেন, ‘তিনি আমাদের মধ্যে খুব সম্ভ্রান্ত বংশের লোক। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭)
ড. আবদুর রহমান সালিম লেখেন, ‘কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে আরব গোত্রগুলোর মধ্যে কুরাইশের বিশেষ মর্যাদা ছিল। ভৌগোলিক কারণেও মক্কা ছিল বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যে কুরাইশ গোত্র বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ’ (আর-রাসুল, পৃষ্ঠা-৩৬)
পবিত্র কোরআনেও কুরাইশের এই সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক বিশেষত্বের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কি তাদের এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি? যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানি হয় আমার দেওয়া জীবিকা হিসেবে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগ জানে না। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধারা আদম (আ.) পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়। তবে এর পুরোটা সমানভাবে সংরক্ষিত নয়। আল্লামা শফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহ.) লিখেছেন, নবী (সা.)-এর বংশধারাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রথম অংশের নির্ভুলতার ব্যাপারে সিরাত রচয়িতা এবং বংশধারা বিশেষজ্ঞরা একমত। তা হলো মহানবী (সা.) থেকে মাআদ ইবনে আদনান পর্যন্ত। দ্বিতীয় অংশ সম্পর্কে সিরাত রচয়িতাদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। তাহলো আদনান থেকে ইসমাঈল (আ.) পর্যন্ত। আর তৃতীয়াংশে নিশ্চিত ভুল রয়েছে। তাহলো ইবরাহিম (আ.) থেকে আদম (আ.) পর্যন্ত। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-৬৩)
মহানবী (সা.)-এর মায়ের বংশও ছিল অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত। কিলাব ইবনে মুররা পর্যন্ত গিয়ে তাঁর মায়ের বংশ ও বাবার বংশ এক হয়ে গিয়েছে। মায়ের দিক থেকে মুহাম্মদ (সা.) থেকে মুররা পর্যন্ত বংশপরম্পরা হলো—মুহাম্মদ ইবনে আমিনা বিনতে ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ ইবনে জুহরা ইবনে কিলাব ইবনে মুররা। (সিরাতে মোস্তফা : ১/২৪)
মহানবী (সা.)-এর আমগমনের মাধ্যমে কুরাইশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোরআন আপনার ও আপনার সম্প্রদায়ের জন্য সম্মানের বস্তু; তোমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। ’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৪৪)
আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-এর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। আমিন।