ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৫ বার
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ হলো রাত জেগে ইবাদত করা। আর তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দারা রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবী (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থান- মাকামে মাহমুদে’। (সূরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৭৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাতে ওঠা প্রবৃত্তি দলনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল’। (সূরা: মুজজাম্মিল, আয়াত: ৬)
যুগ যুগ ধরে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরও প্রিয় অভ্যাস রাতের ইবাদত। আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই রাতে ইবাদত করবে। কারণ এটা তোমাদের আগের নেককারদের অভ্যাস এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় আর পাপের কাফফারাস্বরূপ’। (তিরমিজি: ৩৬১৯)
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি অধিক দয়াবান। তাই তিনি নবী করিম (সা.) এর মাধ্যমে আমাদের এমন কিছু আমল বলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে আমরা সহজেই রাতের ইবাদতের সওয়াব অর্জন করতে পারি।
ফজর ও এশা জামাতে পড়া: ফজর ও এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করলে সারা রাত জেগে নফল ইবাদতের সওয়াব লাভ হয়। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য অর্ধরাত (নফল) নামাজ আদায়ের সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে’। (তিরমিজি: ২২১)
রাতে ১০০ আয়াত পাঠ: পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে দিবসের শুরু ও শেষ করার অফুরন্ত পুরস্কার রয়েছে। রাতে ঘুমের আগে অন্তত ১০০ আয়াত তেলাওয়াতের চেষ্টা করা। এতে রাত জেগে ইবাদতের সওয়াব মেলে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলায় ১০০ আয়াত পড়ে, তার আমলনামায় সারা রাত ইবাদত করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে’। (ইবনে খুজাইমাহ: ১১৪২)
উত্তম চরিত্র: সুন্দর স্বভাব ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হলে রাতে ইবাদতকারীর মর্যাদা অর্জিত হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শরিয়ত অনুযায়ী আমলকারী হয়, পাশাপাশি সুন্দর স্বভাব ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়, এ কারণে সে ওই ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে, যে রাত জেগে নফল নামাজে অনেক বেশি পরিমাণ কোরআন পাঠ করে এবং অনেক বেশি রোজা রাখে (মুসনাদে আহমাদ: ৬৬৪৮)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন তার সুন্দর চরিত্র দ্বারা রোজাদার ও রাতভর ইবাদতকারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ: ৪৭৯৮)
বিধবা নারীকে সাহায্য করা: সমাজের অসহায় বিধবা নারী ও অভাবীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে নফল নামাজে দণ্ডায়মান ও দিনে নফল রোজা পালনকারীর মতো’। (বুখারি: ৫৩৫৩)
জুমার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া: জুমা মুসলমানদের বিশেষ পবিত্র দিন। এদিনের রয়েছে অনেক ফজিলত। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জুমার জন্য বিশেষ আন্তরিকতার সঙ্গে প্রস্তুতি গ্রহণ। হজরত আউস ইবনে আউস আস-সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করবে এবং সকাল-সকাল জুমা আদায়ের জন্য যাবে, জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয় বরং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনবে, সে (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি কদমের বিনিময়ে এক বছর রোজা পালন ও রাতভর সালাত আদায়ের সমান সওয়াব পাবে’। (আবু দাউদ: ৩৪৫)
সীমান্ত পাহারা দেওয়া: সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর পথে এক দিন বা এক রাত সীমানা পাহারা দেওয়া, এক মাসের সিয়াম পালন ও সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর ওই প্রহরী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তা হলে তার আমলের সওয়াব অবিরত পেতে থাকবে, তার জন্য সর্বক্ষণ রিজিক (জান্নাত থেকে) আসতে থাকবে এবং সে কবরের কঠিন পরীক্ষা থেকে মুক্তি পাবে’। (মুসলিম: ১৯১৩)
তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমানো: রাতে ঘুমের সময় তাহাজ্জুদে ওঠার জন্য পূর্ণ নিয়ত ও প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও যদি ঘুম না ভাঙে তবু কেবল নিয়তের কারণে আল্লাহ দান করবেন সারা রাত ইবাদতের সওয়াব। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে, কিন্তু তার চক্ষুদ্বয় নিদ্রাপ্রবল হয়ে যাওয়ায় ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লেখা হবে, আর আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিদ্রা তার জন্য সদকাস্বরূপ হয়ে যাবে’। (নাসায়ি: ১৭৮৭)