ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

উন্মুক্ত কারাগারে বনি ইসরাঈলের ৪০ বছর

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০৩ বার


উন্মুক্ত কারাগারে বনি ইসরাঈলের ৪০ বছর

ঘটনাটি মুসা (আ.)-এর যুগের। ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী যখন সমুদ্রে নিমজ্জিত হয় এবং মুসা (আ.) ও তাঁর সমপ্রদায় বনি ইসরাঈল ফেরাউনের দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করে, তখন মহান আল্লাহ তাদের কিছু নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তাদের পৈতৃক দেশ মুলকে শামকেও তাদের অধিকারে প্রত্যার্পণ করতে চান। সে হিসেবে মুসা (আ.)-এর মাধ্যমে তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে পবিত্র ভূমি শাম (বর্তমান সিরিয়া, ফিলিস্তিন তথা বাইতুল মুকাদ্দাস) এলাকায় প্রবেশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের আগাম সুসংবাদও দেওয়া হয় যে এ যুদ্ধে তারাই বিজয়ী হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা এ পবিত্র ভূমির আধিপত্য তাদের ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন, যা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।

কিন্তু বনি ইসরাঈল প্রকৃতিগত বক্রতার কারণে আল্লাহর সরাসরি সাহায্য ফেরাউনের সাগরডুবি ও তাদের মিসর অধিকার ইত্যাদি স্বচক্ষে দেখেও এ ক্ষেত্রে অঙ্গীকার পালনের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে সক্ষম হলো না। তারা যুদ্ধ সম্পর্কিত আল্লাহ তাআলার নির্দেশের বিরুদ্ধে অন্যায় জেদ ধরে বসে থাকে। তারা মহান আল্লাহকে ভয় না করে সামান্য কিছু মানুষকে ভয় করে। পবিত্র কোরআনে তাদের বক্তব্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলল, হে মুসা, নিশ্চয়ই সেখানে এক দুর্দান্ত সমপ্রদায় আছে এবং তারা সে স্থান থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনো সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করব না। অতঃপর তারা সেখান থেকে বের হয়ে গেলে তবে নিশ্চয় আমরা সেখানে প্রবেশ করব। যারা ভয় করত তাদের মধ্যে দুজন, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন, তারা বলল, তোমরা তাদের মোকাবেলা করে দরজায় প্রবেশ করো, প্রবেশ করলেই তোমরা জয়ী হবে এবং আল্লাহর ওপরই তোমরা নির্ভর করো যদি তোমরা মুমিন হও। তারা বলল, ‘হে মুসা, তারা যতক্ষণ সেখানে থাকবে ততক্ষণ আমরা সেখানে কখনো প্রবেশ করব না; কাজেই তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ করো। নিশ্চয়ই আমরা এখানেই বসে থাকব। (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২২-২৪)

পরিণতিতে মহান আল্লাহ তাদের শাস্তি দেন। তারা ৪০ বছর পর্যন্ত একটি সীমাবদ্ধ এলাকায় অবরুদ্ধ ও বন্দি হয়ে রইল। বাহ্যত তাদের চারপাশে কোনো বাধার প্রাচীর ছিল না এবং তাদের হাত-পা শিকলে বাধা ছিল না; বরং তারা ছিল উন্মুক্ত প্রান্তরে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের সেই শাস্তির বর্ণনাও স্পষ্টভাবে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, তিনি (মুসা) বলেন, ‘হে আমার রব, আমি ও আমার ভাই ছাড়া আর কারো ওপর আমার অধিকার নেই। সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক সমপ্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিন। তিনি (আল্লাহ) বলেন, যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার জন্য তাদের এই শাস্তি দেওয়া হয়েছিল যে তারা ৪০ বছর যাবৎ দিন-রাত সকাল-সন্ধ্যা তিহ ময়দানে উদ্দেশ্যহীনভাবে ভবঘুরে জীবন যাপন করবে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ২৫-২৬)

তারা স্বদেশে অর্থাৎ মিসর ফিরে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথও চলত; কিন্তু তারা নিজেদের সেখানেই দেখতে পেত, যেখান থেকে সকালে রওনা হয়েছিল। ইত্যবসরে মুসা ও হারুন (আ.)-এর মৃত্যু হয়ে যায় এবং বনি ইসরাঈল তিহ প্রান্তরেই উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের হিদায়াতের জন্য অন্য একজন নবী প্রেরণ করলেন। ৪০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বনী ইসরাঈলের অবশিষ্ট বংশধর তৎকালীন নবীর নেতৃত্বে শাম দেশের সে এলাকা তথা সিরিয়া ও বায়তুল মুকাদ্দাসের জন্য জিহাদের সংকল্প গ্রহণ করে এবং আল্লাহ তাআলার ওয়াদাও পূর্ণতা লাভ করে। (ইবন কাসির)

এভাবেই যারা মহান আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করেও তাঁর ওপর আস্থা রাখে না, তাদের জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে, হতাশা, ব্যর্থতা, গুনাহ ও দুঃখের অদৃশ্য বৃত্তে তারা আটকে পড়ে, দুনিয়ার সব শান্তির উপকরণ দিয়েও তাদের আত্মিক শান্তি অর্জন হয় না।


   আরও সংবাদ