ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

নিঃশর্ত ঋণ দেওয়ার ফজিলত

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০২ বার


নিঃশর্ত ঋণ দেওয়ার ফজিলত

কাউকে ঋণ দেওয়া অত্যন্ত মহত্ কাজ। এর মাধ্যমে অন্যের প্রয়োজন পূরণ হয়, বিপদ দূর করা হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদগুলো দূর করবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২) পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ‘করজে হাসানা’-এর মাধ্যমে অপরের সাহায্য করার তাগিদ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কে সে, যে আল্লাহকে করজে হাসানা প্রদান করবে? তিনি তার জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৪৫)

করজে হাসানা মানে হলো, আল্লাহর সন্তুষ্ট ও সওয়াবের আশায় কাউকে নিঃশর্ত ঋণ দেওয়া। তাফসিরের কিতাবে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার এ অর্থও বলা হয়েছে যে তাঁর বান্দাদের ঋণ দেওয়া এবং তাদের অভাব পূরণ করা। ইসলামের দৃষ্টিতে করজে হাসানার উপকারিতা অপরিসীম। কেননা এর মাধ্যমে মানুষ অফুরন্ত সওয়াবের ভাগিদার হতে পারে। রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময় তাঁর প্রিয় সাহাবিদের করজে হাসানার প্রতি উত্সাহিত করেছেন। করজে হাসানার উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, কোনো একজন মুসলিম অন্য মুসলিমকে দুবার ঋণ দিলে এ ঋণদান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ একবার সদকা করার সমতুল্য। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৩০)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি (ঋণগ্রস্ত) অভাবী ব্যক্তিকে অবকাশ দেবে, সে দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি ঋণ শোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ও সময় বাড়িয়ে দেবে সেও প্রতিদিন দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪১৮)

তবে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে যে ঋণগ্রহীতা আদৌ কোনো যৌক্তিক কারণে ঋণ নিচ্ছে কি না, অপচয় কিংবা অনৈসলামিক কাজে খরচ করার জন্য ঋণ দেওয়া উচিত নয়। ঋণগ্রহীতারও যৌক্তিক কারণ ও সময়মতো ঋণ পরিশোধের দৃঢ় বিশ্বাস না থাকলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ঋণ নেওয়া উচিত নয়। রাসুল (সা.) অভাবীকে ঋণ দেওয়ার প্রতি যেমন উত্সাহ দিয়েছেন, তেমনি সময়মতো ঋণ পরিশোধের প্রতিও জোর দিয়েছেন। এমনকি তিনি নিজেও সর্বদা ঋণমুক্ত জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যে তার (ঋণের) হককে উত্তমরূপে পরিশোধ করে। (বুখারি, হাদিস : ২৬০৬)

এমনকি কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সময়মতো ঋণ পরিশোধে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শারিদ বিন সুওয়ায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে সচ্ছল ব্যক্তি কোনো দেনা পরিশোধ করতে গড়িমসি করে, তাকে অপমান ও শাস্তি দেওয়া আমার জন্য হালাল। আল আত-তানাফিসী (রা.) বলেন, অপমান করা অর্থ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে এবং শাস্তি দেওয়ার অর্থ তাকে জেলখানায় বন্দি করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪২৭)

কিন্তু ঋণগ্রহীতা যদি বাস্তবেই অক্ষম হয়, তাহলে সামর্থ্য থাকলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া অত্যন্ত সওয়াবের। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি লোকদের ঋণ দিত; যখন সে কোনো গরিবকে দেখত, তখন সে তার চাকরকে বলত, তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে আমাদের ক্ষমা করবেন। এরপর লোকটির মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত হলে, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (নাসায়ি, হাদিস : ৪৬৯৫)

সুবহানাল্লাহ! এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিভিন্ন পথ খুলে দিয়েছেন।


   আরও সংবাদ