ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

যে পাপে ডুবে যায় পৃথিবী

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৮২ বার


যে পাপে ডুবে যায় পৃথিবী

মহান আল্লাহ নুহ (আ.)-কে সুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় তাঁর উম্মতকে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সব পাপ ত্যাগ করে আল্লাহর দরবারে ফিরে যাওয়ার আহ্বান করেছেন। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অক্লান্তভাবে দাওয়াত দেওয়ার পরও তারা ঈমান আনেনি; বরং আল্লাহর সঙ্গে শরিক করেছে। কুফর শিরকে লিপ্ত হয়েছে।

তিনি তাঁর জাতিকে সত্যের পথে আনতে দীর্ঘ ৯৫০ বছর নিরলস চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু তারা নুহ (আ.)-এর দাওয়াত তাচ্ছিল্যভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। হুমকি-ধমকি দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের সেই ধৃষ্টতার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা তাঁকে বলেছিল, ‘হে নুহ, যদি তুমি বিরত না হও, তবে পাথর মেরে তোমার মস্তক চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ১১৬)

কিন্তু তার পরও নুহ (আ.) তাঁর দায়িত্ব থেকে একচুলও পিছ পা হননি। বহু চেষ্টায় অল্পসংখ্যক মানুষ তাঁর পথে এসেছিল। তাঁর সময়ের সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি। নুহ (আ.) তাদের আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেন। তবু তাদের চৈতন্যোদয় হয়নি; বরং তারা নুহ (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের কষ্ট দিতে লাগল। অবশেষে নুহ (আ.) আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দোয়া করলেন।

আল্লাহ তাআলা নুহ (আ.)-এর দোয়া কবুল করলেন এবং আমলের প্রতিফলের নিয়ম অনুসারে উদ্ধত ও অবাধ্য লোকদের অবধ্যতার শাস্তির ঘোষণা করে দিলেন। আর মুমিনদের রক্ষার জন্য প্রথমে নুহ (আ.)-কে নির্দেশ দিলেন যে একটি নৌকা নির্মাণ করো। যাতে বাহ্যিক উপকরণের বিবেচনায় তিনি এবং অনুগত মুমিনগণ সেই শাস্তি থেকে সুরক্ষিত থাকেন। অবাধ্য ও নাফরমান লোকদের প্রতি অচিরেই সেই শাস্তি নাজিল হবে। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অনুযায়ী নুহ (আ.) নৌকা নির্মাণ করতে শুরু করলে তারা হাসি-তামাশা ও উপহাস করতে লাগল। যখনই তারা নির্মাণাধীন নৌকার কাছ দিয়ে যাতায়াত করত তখনই বলত, বাহ চমৎকার! যখন আমরা পানিতে, ডুবতে শুরু করব তখন তুমি ও তোমার অনুসারীরা এই নৌকায় আরোহণ করে সুরক্ষিত থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। কী নির্বোধসুলভ কল্পনা। নুহ (আ.) তাদের পরিণাম সম্পর্কে অসতর্কতা এবং আল্লাহর অবাধ্যাচরণের প্রতি তাদের দুঃসাহস দেখে তাদেরই অনুরূপ জবাব দিতেন এবং নিজের কাজে মনোযোগ দিতেন। কারণ আল্লাহ তাআলা তাকে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি আমার তত্ত্বাবধানে এবং নির্দেশ অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ করো এবং যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না; (তাদের জন্য সুপারিশ করো না) তারা তো নিমজ্জিত হবে।’ (সুরা হুদ : আয়াত : ৩৭)

অবশেষে নুহ (আ.)-এর নৌকা প্রস্তুত হয়ে গেল। তখন আল্লাহর শাস্তি নাজিল হওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। নুহ (আ.) শাস্তির প্রথম নিদর্শন দেখতে পেলেন। এটা তাকে বলে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ভূ-গর্ভ থেকে পানি উথলে উঠতে শুরু করল। তখন আল্লাহর ওহি তাকে এই আদেশ শোনাল, তোমার বংশধরদের নৌকায় আরোহণের নির্দেশ দাও। আর সব প্রাণী থেকে এক-এক জোড়া করে উঠিয়ে নাও। (প্রায় ৪০ জনের) সেই দলটিকেও নৌকায় আরোহণ করতে আদেশ দাও, যারা তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। আল্লাহ তাআলার ওহি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হওয়ার পর আকাশের প্রতি আদেশ হলো পানি বর্ষণ করতে শুরু করো; আর জমিনের ফোয়ারাসমূহের প্রতি আদেশ হলো, পূর্ণ মাত্রায় উথলাতে থাকো। আল্লাহর আদেশে এ সব কিছু হতে থাকল এবং নৌকা তার হেফাজতে পানির ওপর ভাসতে লাগল। এ সময় সব অবিশ্বাসী ও অবাধ্য লোক পানিতে ডুবে গেল এবং আল্লাহ তাআলার বিধান কর্মের প্রতিফল অনুযায়ী নিজেদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করল।

এভাবেই মহান আল্লাহ অবিশ্বাসী জাতিকে ধ্বংস করে দেন। আর বিশ্বাসীদের রক্ষা করেন।

 


   আরও সংবাদ