ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ডাক দিয়ে যায় কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৫২ বার


ডাক দিয়ে যায় কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ

ঐতিহাসিকভাবে সত্য, প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। সাহাবি, পীর-দরবেশের দাওয়াতি মেহনতে এ অঞ্চলের মানুষ হয়ে ওঠে গুণে-মানে অনন্য। আর দিল্লিকেন্দ্রিক মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন মধ্যযুগীয় তুর্কি শাসক কুতুবুদ্দিন আইবেকের নেতৃত্বে। প্রথম মুসলিম সুলতান বিজয়স্মারক হিসেবে দিল্লিতে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম স্থাপত্য নিদর্শন কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ (ইসলামের শক্তিকেন্দ্র)। আজানের ধ্বনি দূর-বহুদুরে পৌঁছাতে ইট-পাথরের গাঁথুনিতে তৈরি হয় বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার। উপমহাদেশের বিশিষ্ট সুফি সাধক কুতুবুল আফতাব খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন বখতিয়ার কাকি (রহ.) [জন্ম ১১৭৩ হি. মৃত্যু ১২৩৫ হি.]-এর নামে নামকরণ হয় কুতুব মিনার।

বহুত্ববাদী চেতনার লীলাভূমিতে সাম্য-মানবতা, একত্ববাদের অনিন্দ্য সৌন্দর্যের রূপায়ণ বোঝাতে শিলালিপিতে আছে—‘সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ছায়া পূর্ব থেকে পশ্চিমে ফেলার জন্যই এ মিনার নির্মাণ করা হয়।’ কুতুব মিনারের আশপাশের প্রাচীন স্থাপত্য ও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ। এর আলাই দরওয়াজা বা মূল প্রবেশদ্বার ইলতুিমসের সমাধি ইত্যাদি। টঘঊঝঈঙ ঘোষিত ‘বিশ্ব প্রত্ন-নির্দশন’ (ডড়ত্ষফ যবত্রঃধমব) কুতুব কমপ্লেক্স এগুলোর সমষ্টিমাত্র।

কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ সুনিপুণ কৌশলে নির্মিত একটি আয়তাকার ধর্মীয় স্থাপনা। এখানে চিরায়ত মুসলিম রীতিতে পূর্ব প্রান্তের প্রবেশদ্বার হয়ে গম্বুজের ভেতর দিয়ে পশ্চিম প্রান্তে ইবাদতের মূল স্থান মসজিদে পৌঁছাতে হয়। তিন পাশে বারান্দা, সারি সারি স্তম্ভের ওপর সমতল ছাদ। মুসলিম স্থাপত্যশৈলীতে একে লিয়ন বলা হয়। কুতুবুদ্দিন আইবেকের সময়ে শুরু হওয়া এ মসজিদটি সুলতান শামসুদ্দিন আল-তামাস (ইলতুিমস), আলাউদ্দিন খলজি প্রমুখের কালানুক্রমিক প্রয়াসে পূর্ণতা ও বিশালত্বে সম্প্রসারিত হতে থাকে।

কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদের নির্মাণশৈলীতে আরব-তুর্কি ও ভারতীয় রীতির বিস্ময়কর সমন্বয় ঘটেছে। এ সংমিশ্রণ বিজীত ও বিজয়ীর সহাবস্থানের অনন্য দৃষ্টান্ত। মসজিদের উচ্চতা, সৌন্দর্য, বিশালত্ব প্রকাশে ভারতীয় প্রাচীন স্থাপত্যনিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ প্রতিস্থাপিত হয়েছে ইসলামী ঐতিহ্যে, নান্দনিকতার সঙ্গে ও ছন্দবৈচিত্র্যের মুনশিয়ানায়। মসজিদের স্তম্ভ ও দেয়ালে ভারতীয় ভাস্কর্যের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফুল, লতাপাতা, পদ্ম-শঙ্খ, ঘণ্টা-চক্র, চতুর্ভুজ নকশা ইত্যাদির প্রাণবন্ত অলংকরণে। মসজিদের খিলান, মাখসুরাহ ইত্যাদিতেও রয়েছে আরব-তুর্কি রীতি বিন্যাসের স্পষ্টতার প্রমাণ। কেন্দ্রীয় খিলানের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার ও স্প্যান ৬.৬ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ১১৭ মিটার। আছে ইবাদতের অনুপ্রেরণামূলক পবিত্র কোরআনের আয়াতের বক্ররেখাঙ্কিত আরবি ক্যালিগ্রাফি।

উপমহাদেশে মুসলিম স্থাপত্যের প্রথম নিদর্শন কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদের প্রধান ইমাম ছিলেন প্রিয় নবী (সা.)-এর বংশধারার সুফিসাধক সাইয়্যেদ জামিন (রহ.)। তাঁর আদি নাম মুহাম্মদ আলী। তিনি চিশতিয়া তরিকার ব্যক্তিত্ব। তিনি সুলতান সিকান্দর লোদির শাসনামলে তৎকালীন তুর্কিস্তান থেকে দিল্লি আগমন করেন।

আসলে ভারতে মুসলিম শাসন, স্মৃতির অকৃত্রিম দ্যুতি কুতুব মিনার। এ ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য গড়া হয় পৌত্তলিকতার উর্বরভূমিতে তাওহিদ-রিসালাতের বার্তা পৌঁছাতে। সবাই ওই আহ্বানেই সমবেত হতে থাকে ‘ইসলামের শক্তিকেন্দ্র’ তথা কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদে। ইতিহাসের বহতাধারায় বিবর্ণদশায় টিকে থাকা বিস্ময়কর কুতুব মিনারের দর্শনার্থী বেড়েই চলেছে। অথচ কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ ও ইমাম জামিনের গর্বিত স্মৃতি কেউ হাতরে বেড়ায় না! মানবজাতির ইতিহাসের মতোই সুপ্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় মুসলিম ঐতিহ্য শুধুই কি এক স্মৃতিময় দীর্ঘশ্বাস? নাকি পরাজয়, পরাধীনতার দুর্ভাগ্য রেখা ও কলঙ্কের ছাপ? নাকি ইতিহাসে আবার জ্বলজ্বল করবে দ্যুতি ও সম্মানের অনন্য উচ্চতায় কুতুব মিনার ও তারই উদ্দীপক কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ?


   আরও সংবাদ