ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০৮ বার
হাবশায় মুসলিমদের নিরাপদ জীবনযাপন মক্কার মুশরিকদের মর্ম বেদনার কারণ ছিল। নবুয়তের সপ্তম বছর তারা মুসলিমদের মক্কায় ফিরিয়ে আনতে বিপুল পরিমাণ উপঢৌকনসহ আমর ইবনুল আস (তখনো মুসলিম হননি) ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু রাবিয়াকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠায়। সমকালীন আরবে বিচক্ষণ ও বাক-কৌশলে তাদের বিশেষ খ্যাতি ছিল। তারা নাজ্জাশিকে বলে, হে বাদশাহ, ‘আপনার দেশে আমাদের কিছু নির্বোধ যুবক পালিয়ে এসেছে। তারা স্বজাতির ধর্ম-বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু আপনি যে ধর্ম-বিশ্বাস করেন সে ধর্ম-বিশ্বাসও তারা গ্রহণ করেনি। বরং তারা এক নব আবিষ্কৃত ধর্মবিশ্বাস গ্রহণ করেছে।
এ ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে আমরাও কিছু জানি না, আপনিও কিছু জানেন না। ওদের মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজন আমাদের ওদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তারা নিজেদের লোকদের ভালো-মন্দ সম্পর্কে ভালোভাবে বোঝেন।’ সভাসদরাও তাদের বক্তব্যে সমর্থন করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১১২; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩৪৩)
নাজ্জাসি মুসলিমদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলে জাফর ইবনে আবি তালিব (রা.) দলনেতা হিসেবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘হে বাদশাহ, আমরা ছিলাম এক মূর্খ জাতি, আমরা মূর্তি পূজা করতাম, মৃত জীব ভক্ষণ করতাম, সর্বপ্রকার নির্লজ্জতা ও পাপে লিপ্ত ছিলাম, আমাদের মধ্যে যারা সবল ও শক্তিশালী তারা দুর্বলদের ছিঁড়ে খেতাম। এমন সময় আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্য থেকে একজনকে রাসুল হিসেবে পাঠালেন, যার বংশমর্যাদা ও কৌলিন্য শ্রেষ্ঠ, যার সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, সচ্চরিত্র ও পবিত্রতা সম্পর্কে আমরা আগে থেকে জানতাম। তিনি আমাদের দাওয়াত দিলেন এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনতে এবং কেবল তাঁর ইবাদত করতে।
তিনি আহ্বান জানালেন, আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব মূর্তি ও পাথরের পূজা করতেন তা ছেড়ে দিতে এবং সে সবের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে। তিনি আমাদের সত্য কথা বলতে, আমানত আদায় করতে, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখতে, প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে, হারাম কথা-বার্তা, রক্তপাত ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। তাঁর কথা মান্য করায় আমাদের জাতিগোষ্ঠী আমাদের সঙ্গে শত্রুতায় কোমর বেঁধে নেমে পড়ে। তারা আমাদের নানা রকমের কষ্ট দেয় এবং তাঁর প্রচারিত ধর্ম থেকে বিচ্যুত করতে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠল।
তখন আমরা আপনার রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণের জন্য আসি এই আশা থেকে যে আমাদের ওপর অবিচার হবে না।’ জাফর (রা.)-এর কথা শুনে বললেন, তোমাদের নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা থেকে কিছু পাঠ করে শোনাও। জাফর (রা.) তখন সুরা মরিয়মের প্রথম দিকের আয়াতগুলো পাঠ করে শোনালেন। তিলাওয়াত শুনে নাজ্জাশি ও তাঁর দরবারে উপস্থিত পাদ্রিরা কেঁদে ফেললেন। এমনকি চোখের পানিতে সামনে থাকা ধর্মীয় গ্রন্থগুলো ভিজে গেল। এরপর বাদশাহ মুসলিমদের অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে বিদায় দিলেন, তাদের নিরাপত্তা ও অভয় দান করলেন। কুরাইশ দূতরা লজ্জিত ও অপমানিত হয়ে ফিরে আসে। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ১৪২)।
আশ্রয়দানের কৃতজ্ঞতা থেকে জোবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) নাজ্জাশির পক্ষে যুদ্ধ করতে ময়দানে অবতীর্ণ হন। হাবশার মুহাজিরদের মধ্য থেকে জোবায়ের, আবু উবাইদা, আবু সালামা, উম্মে সালামা, সাকরান, সাওদা (রা.) প্রমুখ অনেকেই নবীজি (সা.) মদিনায় হিজরতের আগেই মক্কায় ফিরে আসেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-সহ কেউ কেউ মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ফেরেন। সর্বশেষ আবদুল্লাহ বিন জাফর তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস ও অন্য মুহাজিরদের নিয়ে খাইবারের যুদ্ধকালীন মদিনায় ফেরেন। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩৪৮)
বিশুদ্ধ মতে, নাজ্জাসি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কেননা অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের আগে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) শোক প্রকাশ করেন, তাঁর জন্য দোয়া করেন, তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং সাহাবিদের দোয়া করতে বলেন। (সিরাতে মোস্তফা : ১/২৫১; আস-সিরাতুন নাবাবিয়াহ, পৃষ্ঠা ২০০)