ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মুমিনজীবনে বরকতের ধারণা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৮৬ বার


মুমিনজীবনে বরকতের ধারণা

ইসলাম: ‘বরকত’ একটি ইসলামী পরিভাষা। বাংলা ভাষায় বরকতের সর্বাধিক প্রচলিত অর্থ ‘প্রাচুর্য’ হলেও ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত বরকত শব্দের অর্থগত ব্যাপ্তি আরো বিস্তৃত। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, বরকতের ধারণা শুধু বস্তুর পরিমাণগত ধারণায় আবদ্ধ নয়, বরং বরকত হলো যথাযথভাবে কোনো বিষয়ের কল্যাণ ও তৃপ্তি লাভ করা। পবিত্র কোরআনে যেমনটি ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব ফেনা তো শুকিয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এভাবে দৃষ্টান্তগুলো বর্ণনা করেন।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৭)

আল্লাহ সব বরকতের উৎস

ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে সব বরকতের উৎস মহান আল্লাহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলি সব কিছুকেই বরকতময় বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বরকতময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। যিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘কত বরতকময় আপনার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহিমাময় ও মহানুভব।’ (সুরা : আর-রহমান, আয়াত : ৭৮)

তাফসিরবিদরা বলেন, আল্লাহর সত্তা ও নাম বরকতময় হওয়ার অর্থ হলো, তিনি সব বরকত তথা প্রাচুর্য ও কল্যাণের অধিকারী, নিয়ন্তা। তিনি যাকে ইচ্ছা বরকত দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা থেকে বঞ্চিত করেন।

মুমিনজীবনে বরকতের ধারণা

কেবল সম্পদের প্রাচুর্য, সন্তান-সন্ততির আধিক্য ও দীর্ঘ জীবন লাভ মুমিনের কাছে ‘বরকত’ নয়, যদি তা উপকারী ও কল্যাণকর না হয়। এ জন্য মহানবী (সা.) সম্পদ বৃদ্ধির দোয়া না করে প্রাপ্ত সম্পদের কল্যাণ ও সুফল বৃদ্ধির দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তার মধ্যে আমার জন্য বরকত দিন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪২৫)

অন্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, কোনো কিছুতে পরিতৃপ্তি লাভ করাও বরকতের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে অনধিকার চর্চা করে কোনো কিছু গ্রহণ করল তার দৃষ্টান্ত হলো ওই ব্যক্তির মতো, যে খাবার গ্রহণ করল কিন্তু তৃপ্তি পেল না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪২৭)

ইসলামী মূল্যবোধ অনুযায়ী ‘বরকত’ হলো ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের উত্তম জীবনের সন্ধান লাভ করা। আর তা অর্জিত হয় আল্লাহর নৈকট্য, ইবাদত ও প্রার্থনার মাধ্যমে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওঝি (রহ.) বলেন, ‘বরকতময় কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং পরকালে অফুরন্ত প্রতিদান লাভ করে। আর তা হলো অন্তরের পবিত্রতা, আত্মার পরিশুদ্ধি ও উত্তম চরিত্র লাভ করা।’

সবাই বরকতের মুখাপেক্ষী

বরকতের সঙ্গে যেহেতু কল্যাণ ও উত্তম জীবনের ধারণাও জড়িত, তাই কোনো ব্যক্তিই বরকত থেকে অমুখাপেক্ষী নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একদিন আইয়ুব (আ.) কাপড় খুলে গোসল করছিলেন। তখন তাঁর ওপর সোনার পঙ্গপাল এসে পড়ছিল এবং তা কুড়িয়ে কাপড়ে নিচ্ছিলেন। তাঁর প্রতিপালক তাঁকে ডেকে বললেন, তুমি যা দেখেছ আমি কি তা থেকে তোমাকে অমুখাপেক্ষী করিনি। তিনি বললেন, আপনার সম্মানের কসম! অবশ্যই করেছেন। কিন্তু আপনার বরকত থেকে আমি অমুখাপেক্ষী নই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৯)

বরকতময় জীবনের দৃষ্টান্ত

নবী-রাসুলরা (আ.) ছিলেন বরকতময় জীবনের দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তাঁদের জীবনকে বরকতময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি যেখানেই থাকি তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যত দিন জীবিত থাকি, তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে। আর মায়ের প্রতি অনুগত থাকতে। তিনি আমাকে উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৩১-৩২)

বরকতময় জীবনের প্রার্থনা

মুমিনের কাছে বরকতময় জীবন প্রার্থিত। নবী-রাসুল (আ.) আল্লাহর কাছে বরকত লাভের দোয়া করতেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আরো বলো, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে বরকতময়ভাবে নামিয়ে দিন। আপনি শ্রেষ্ঠ অবতরণকারী।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ২৯)

বরকত লাভের উপায়

মানুষের নেক আমলের মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন আল্লাহর বরকত লাভ করে, তেমনি মন্দ কাজে তা নষ্ট হয়। হাদিসে বর্ণিত এমন কিছু আমলের কথা তুলে ধরা হলো—

১. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা : মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি চায় তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৬)

২. বেচাকেনায় সততা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের (গ্রহণ ও বর্জনের) এখতিয়ার রয়েছে। যদি তারা সত্য বলে ও পণ্যের দোষত্রুটি স্পষ্ট করে, তবে তাদের বেচাকেনায় বরকত দান করা হয়। আর যদি তারা মিথ্যা বলে এবং দোষত্রুটি গোপন করে, তাদের বেচাকেনার বরকত কেড়ে নেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২১১০)

৩. মহর নির্ধারণে সহজতা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে স্ত্রী বরকতের দিক থেকে উত্তম, যে মহরের বিবেচনায় বেশি সহজ (বা কম)।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫১১৩)

৪. সালাম দেওয়া : আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, ‘হে বৎস! যখন তুমি ঘরে প্রবেশ করো সালাম দাও, তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য বরকত হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৯৮)

৫. দান করা : আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি খরচ করো, তোমার জন্য খরচ করা হবে (অর্থাৎ প্রাচুর্য আসবে)।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৫২)

৬. মিলেমিশে খাওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা খাবারে একত্র হও, আল্লাহর নাম স্মরণ করো, তাতে তোমাদের জন্য বরকত দেওয়া হবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৪২৫২)

পাপ জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে

নেক কাজে যেমন মানুষের জীবন-জীবিকায় বরকত আসে, তেমনি পাপ কাজ জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেবল দোয়াই ভাগ্য প্রতিহত করে, নেক কাজে আয়ু বাড়ে আর বান্দা পাপের কারণে জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৪১৩)

আল্লাহ আমাদের জীবনকে বরকতময় করুন। আমিন।


   আরও সংবাদ