ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৮০ বার
ইসলাম: মুমিনের আত্মশুদ্ধতায় আত্মসমালোচনার বিকল্প নেই। পরকালীন জবাবদিহিতার প্রতি লক্ষ্য রেখে নিজের ভালো-মন্দ নিয়ে নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বোঝাপড়া করার নামই আত্মসমালোচনা। নিজেকে নিয়ে সমালোচনার এই চর্চা মুমিনকে অনেক ক্ষেত্রে অধিক পাপে নিমজ্জিত হওয়া থেকে বিরত রাখে। চরম পদস্খলন থেকে রক্ষা করে। তাই আত্মিক পরিশুদ্ধতায় আত্মসমালোচনা একজন মুমিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অন্যের আলোচনা-সমালোচনায় আমরা যতটা আগ্রহী, নিজের আত্মোন্নয়নের বিষয়টিতে ততটাই উদাসীন। অথচ পবিত্র কোরআনে আত্মসমালোচনার প্রতি ইঙ্গিত করে ঈমানদারদের বলা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত আগামীকালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১৮)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) লেখেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আত্মসমালোচনাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলছেন, তোমাদের অবশ্যই চিন্তা করা কর্তব্য যে আখিরাতের জন্য তুমি যা প্রেরণ করেছ তা তোমার জান্নাতের পথ সুগম করছে, নাকি তোমাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? (মাদারিজুস সালেকিন, ১/১৮৭)
মুমিন প্রতিনিয়ত নিজ সমালোচনার মাধ্যমে ভালো কাজগুলো নিয়তের শুদ্ধতা যাচাই করে চালিয়ে নেবে এবং মন্দ কাজগুলো পরকালীন পরিণতির ভয়াবহতা চিন্তা করে তা থেকে সর্বোত বিরত থাকবে। এটাই আত্মসমালোচনা। আমরা কত অনর্থক কাজ করি। অন্যের আলোচনা-সমালোচনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখি, অথচ পরকালীন চিন্তার বাইরে দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কর্মব্যস্ততার সময়টুকুতেও সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের ঈমান নিয়ে সন্দিহান থাকতেন। মুনাফিক হয়ে যাওয়ার ভয় করতেন। হানজালা আল-উসাইদি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার তিনি কাঁদতে কাঁদতে আবুবকর (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবুবকর (রা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে হানজালা, তোমার কী হয়েছে? তিনি বললেন, হে আবুবকর, হানাজালা তো মুনাফিক হয়ে গেছে। আমরা যখন রাসুল (সা.)-এর দরবারে অবস্থান করি এবং তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নাম স্মরণে নসিহত করেন, তখন মনে হয় যেন আমরা সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসার পর স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজন ও সহায়-সম্পদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি এবং অনেক কিছুই ভুলে যাই। আবুবকর (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমাদেরও তো একই অবস্থা! চলো আমরা রাসুল (সা.)-এর নিকটে যাই। অতঃপর আমরা সেদিকে রওনা হলাম। রাসুল (সা.) তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হানজালা, কী খবর? তখন উত্তরে তিনি অনুরূপ বক্তব্যই পেশ করলেন। রাসুল (সা.) বললেন, আমার কাছ থেকে তোমরা যে অবস্থায় প্রস্থান করো, সর্বদা যদি সেই অবস্থায় থাকতে তাহলে ফেরেশতারা অবশ্যই তোমাদের মজলিসে, বিছানায় এবং পথে-ঘাটে তোমাদের সঙ্গে মুছাফাহা করত। হে হানজালা, সেই অবস্থা তো সময় সময় হয়েই থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৭৫০)
পরিশেষে আত্মসমালোচনা সম্পর্কে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর একটি ঐতিহাসিক বাণী উল্লেখ করছি। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ করো, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হওয়ার আগেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা পরিমাপ করে নাও চূড়ান্ত দিনে পরিমাপ করার আগেই। কেননা, আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আখিরাতের কঠিন মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই সেই মহাপ্রদর্শনীর দিনের জন্য তোমরা নিজেদের সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কিছুই সেদিন গোপন থাকবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)
আসুন, পরকালীন জবাবদিহিতার কথা ভেবে আত্মোন্নয়নের জন্য আত্মসমালোচনার চর্চা করি। আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।