ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৬৬ বার


একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

আজ ২০ মে ২০২১, বিকেল ৩ টায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে। ওয়েবিনারের বিষয়: ‘জামায়াত-হেফাজতের সন্ত্রাসের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ ঃ সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’। এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সংসদের ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাস’-এর সদস্য জনাব উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী এমপি, ‘জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সদস্য মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, রিজিওনাল এন্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অবঃ) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ-এর নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, সুইডেন প্রবাসী নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণ কান্তি চৌধুরী, সুইজারল্যান্ড প্রবাসী গণজাগরণ মঞ্চ-এর সংগঠক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল, নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডাঃ একরাম চৌধুরী ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা কাজী মুকুল।

সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে জঙ্গীদমনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য প্রদর্শন করেছে যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু জঙ্গীদের রাজনৈতিক দর্শনÑ ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রে কোনও সমন্বিত উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। জঙ্গীদের গ্রেফতারের পরও অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি চার্জশিটের দুর্বলতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও জঙ্গী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে ধর্মের নামে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের একটি রাজনীতি ও দর্শন রয়েছে, বাংলাদেশে যার প্রধান ধারক হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামী, যাদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি এবং সমচরিত্রের দলগুলো। দলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করে শুধু কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সন্ত্রাস নির্মূলন সম্ভব নয়।

‘২০১৩ সালেই হেফাজতে ইসলামের গ্রেফতারকৃত নেতারা জানিয়েছিলেন, বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে সন্ত্রাসী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অপসারণ করতে চান। ২০১৩ সালের মহাতাণ্ডব ও সন্ত্রাসী অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অন্য সব অপরাধের পাশাপাশি সরকার উৎখাতের রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা যদি না হয়ে থাকে নতুনভাবে চার্জশিট প্রদান করতে হবে। ২০১৩ সালের মহাসন্ত্রাসের পর সরকার যে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিল সেটি অব্যাহত থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার হেফাজতি তাণ্ডব ও হুমকি আমাদের দেখতে হতো না। বিলম্বে হলেও সরকার জামায়াত-হেফাজতের জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবার পাশাপাশি ব্যক্তির পাশাপাশি আমাদের দাবি হচ্ছেÑ সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের বিচার করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল এবং খেলাফৎ কাযেম করে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের আফগানিস্তান বানাবার হুমকি প্রদানের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রতিটি ধারা প্রয়োগ করে জামায়াত-হেফাজতের সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যায়। এ বিষয়ে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে মাদ্রাসায় সব রকম রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে তাদের মূলধারা শিক্ষাকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।’

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, ধর্মের নামে কোনও রাজনীতি চলবে না। রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম হতে পারে না। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর পরও রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ রয়ে গেছে। তবুও ২০০৯ সালের জঙ্গীবিরোধী আইনের ধারা অনুযায়ী শুধু জামায়াত নয়, হেফাজতসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় এবং দেশে-বিদেশে তাদের সম্পূর্ণ আর্থিক উৎস বাজেয়াপ্ত করা যায়। যুক্তরাজ্যের ‘ইসলামিক এইড’ এখনও বাংলাদেশের জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে জঙ্গী অর্থ সরবরাহকারী সঙগঠন ও দেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এছাড়া আমাদের দেশের প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনও প্রচুর একাত্তরের পরাজিত শক্তি অবস্থান করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই, বঙ্গবন্ধুর ‘লালঘোড়া’ দাবড়িয়ে এসব অপশক্তিকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী এমপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের জঙ্গী সন্ত্রাসী তান্ডবের বর্ণনা করে অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আমি আইসিটি অ্যাক্টে হেফাজতের বেশ কজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এদের মধ্যে সাজিদুর রহমান এবং ওবায়দুল্লাহ- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ দুজন হেফাজত নেতাও আছেন। তারা সামাজিক মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে এবং দলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করেছে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বাড়িঘর, কার্যালয়, ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ সঙ্গীতালয়, পৌরসভা, সরকারী অফিস আদালত, রেলস্টেশনসহ বেছে বেছে মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনার ওপর হামলা করেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিশ দিন হয়ে গেলেও হেফাজতের এই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে আমার মামলার কার্যক্রম আমলে নেয়া হয় নি।

‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি, আমাকে জানান- আমার মামলাটির কার্যক্রম আর কতদিন আটকে থাকবে। আমি বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও এই মামলা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। যে দুজন হেফাজত নেতার নাম বলেছি তাদের দুর্নীতি, জঙ্গী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তাদের মাদ্রাসা থেকে যেকোনও অজুহাতে সব সময় লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্রসহ সহ মিছিল বের হয় এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ঘটায়। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এসব মাদ্রাসাগুলোতে তল্লাশী চালানো হোক।’

মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, ‘জঙ্গী মৌলবাদীরা প্রথম থেকে ঢাকায় ঢোকার পথগুলোর দুইপাশে মাদ্রাসা স্থাপন করেছিল, যা ছিল তাদের সুদূরপ্রসারী জঙ্গী পরিকল্পনা। হেফাজত যে ১৩ দফা দিয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। তারপরেও কীভাবে জামায়াত-হেফাজতকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হয়Ñ আমার প্রশ্ন। সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ থাকতে পারে না। রাষ্ট্র মানুষ না। যারা বাংলাদেশে এসব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মাদ্রাসায় কোরাণ-হাদিস বাংলায় পড়াতে হবে। তা না হলে এসব ধর্মীয় জঙ্গীরা বিভিন্ন রকম ভুলব্যাখ্যা দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করবে। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে এখনও উর্দুতে কোরাণ-হাদিস পড়ানো হয়।’

মেজর জেনারেল (অবঃ) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, জামায়াত-হেফাজতসহ সমমনা ধর্মীয় সংগঠনগুলো মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। এদের শিকড় একই। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এসব সংগঠনগুলোর মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। এসব সংগঠন নিঃসন্দেহে জঙ্গীবাদে যুক্তÑ যার প্রচুর তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে। মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় না। রাষ্ট্রের ভিতর রাষ্ট্র থাকতে পারে না। মাদ্রাসার জন্য রাষ্ট্রীয় আইন থাকতে হবে এবং এই আইনে মাদ্রাসা চালাতে হবে। হেফাজতের তাণ্ডবে বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয়েছেÑ এজন্য কেনও তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই হেফাজতÑ জামায়াতের এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত। এসবের তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আছে। এই দানবের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। প্রশাসন থেকে এদের সমর্থিত ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’

প্রধান অতিথির ভাষণে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, ‘দুর্বল চার্জশিটের কারণে অনেক সময় জঙ্গীরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এবার আমাদের ধারণা ছিল না যে, হেফাজত এরকম নৃশংস ঘটনা ঘটাবে। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় তারা এই তাণ্ডব করেছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বাড়ি ভাঙচুর, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

‘ভিডিও ফুটেজ দেখে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরকারীদের অধিকাংশকে গ্রেফতার করেছি। হাটহাজারীতেও একই রকম ব্যবস্থা নিয়েছি। হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে মাননীয় সংসদ সদস্য উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীর মামলাটি অবশ্যই আমরা আমলে নেব। আমি দেখব কেন মামলাটি এখনও আমলে নেওয়া হয়নি।

‘হেফাজত সম্পর্কে বলতে হয়- এমন কোনও গ্রাম/পাড়া নেই যেখানে মাদ্রাসা নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি। এখানে সাতশ’র অধিক মাদ্রাসা আছে। কোনও ভবনে দুই তিনটি মাদ্রাসাও আছে। যত্রতত্র মাদ্রাসা স্থাপন বন্ধ করার জন্য আমরা আইন তৈরি করতে যাচ্ছি।

‘হেফাজত দাবি করে তারা কোনও রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কিন্তু তারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। হেফাজতের কার্যক্রম সবগুলো বেআইনী। যেসব মামলা হয়েছেÑ সেসবের সব আসামীকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করেছি। জামায়াত-শিবিরকে কোণঠাসা করার পর তারা হেফাজতের ব্যানারে চলে এসেছে। সব জায়গায় তাদের কর্মকাণ্ড জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ডকে মনে করিয়ে দেয়।

সবশেষে তিনি বলেন, আমরা যেকোনও জঙ্গী কর্মকাণ্ড, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’


   আরও সংবাদ