ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015
মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

বিশ্বনবীর প্রতি দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

বিনোদন ডেস্ক


প্রকাশ: ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:১১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০৯ বার


বিশ্বনবীর প্রতি দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

উম্মতে মুহাম্মদীর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরদ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠানো বাঞ্ছনীয়। উম্মতের কান্ডারি, কিয়ামতের কঠিন বিচারের দিনে স্বীয় গুনাহগার উম্মতের সুপারিশকারী, দরদি নবী, প্রিয় হাবিব রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়তে স্বয়ং মহান আল্লাহ নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) স্বয়ং এবং আমার ফেরেশতারা আমার পিয়ারা হাবিবের ওপর দরুদ পাঠপূর্বক সালাম পাঠিয়ে থাকি। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার ওপর দরুদ পাঠ কর এবং সালাম পাঠাও।’ সুরা আহজাব, আয়াত ৫৬। এ নির্দেশনাবলে প্রতিটি মুমিন নারী-পুরুষের ওপর নবীজির প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ সাব্যস্ত হয়েছে।

আল কোরআন ছাড়াও হাদিসে দরুদ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলতের বিশদ বিবরণ রয়েছে। দরুদ পাঠে অশেষ সওয়াব, রহমত, বরকত ও মাগফিরাত পাওয়া যায়। প্রিয় নবীর প্রতি মহব্বত নিয়ে দরুদ পাঠ করা উত্তম ইবাদত। বিশ্বনবী তাঁর উম্মতদের তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নবীর নাম শোনার পর যে উম্মত তাঁর প্রতি দরুদ পড়া থেকে বিরত থাকবে তাকে বখিল ও কৃপণ বলে ভর্ৎসনা করেছেন।
তাই মুসলিম ফিকাহবিদরা বলেন, জীবনে একবার প্রতিটি মুসলিমের জন্য নবীজির নাম শুনে বা উচ্চারণ করে তাঁর প্রতি দরুদ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করা ফরজ, কোনো মাহফিলে নবীর নাম শুনে প্রথম বার দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব এবং পরে বারবার তাঁর নাম শুনে দরুদ পড়া মুস্তাহাব ও উত্তম সওয়াবের কাজ। যদি একবারও পাঠ না করে তাহলে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। তাই নবীর নাম শুনে কোনো মাহফিলে সবাই উচ্চৈঃস্বরে দরুদ পাঠ করা উচিত। যাতে ভুলে যাওয়া শ্রোতামন্ডলী দরুদ আদায় করে নিতে পারে।

হাদিস শাস্ত্রের ছাত্ররা হাদিসের কিতাব পড়ার সময় নবীর নাম শুনে উচ্চৈঃস্বরে দরুদ পাঠ করেন। দরুদের সুমধুর উচ্চ আওয়াজে দরসগাহ বারবার গুঞ্জরিত হয়। কেননা যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করে সে আল্লাহর খাস বান্দা ও নবীর সৌভাগ্যবান উম্মত হিসেবে পরিগণিত হবে। দুনিয়ায় স্বপ্নযোগে প্রিয় নবীর দিদার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে এবং আখিরাতে নবীর শাফায়াতলাভে ধন্য হবে।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।’ মুসলিম। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় সে যেন তৎক্ষণাৎ আমার ওপর দরুদ পড়ে।’ হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দার দোয়া, মুনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝোলানো থাকে, তার কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না ও কবুল হয় না যতক্ষণ না প্রিয় নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করা হয়।’ তিরমিজি। যে ব্যক্তি নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাঁর ১০টি মর্যাদা দান করেন, ১০টি নেকি দান করেন এবং ১০টি গুনাহ মাফ করে দেন।

নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করবে কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের অন্ধকারে সে আলোকময় হবে এবং আমার সুপারিশের নিকটবর্তী হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর সেই বৈঠকে আমার প্রতি ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাঁর ৮০ বছরের সগিরা গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ 

নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি মহব্বতের সঙ্গে দরুদ পাঠ করবে তার বিনিময়ে আল্লাহ এমন একজন বিশালাকৃতির ফেরেশতা তৈরি করে দেন যে দরুদ পাঠকারীর ওপর কিয়ামত পর্যন্ত রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকবে।’ যে ব্যক্তি মহব্বতের সঙ্গে নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার দুনিয়ার সব পেরেশানি দূর করে দেবেন। রিজিকে বরকত দান করবেন, ইজ্জত-সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন, শান্তি ও নিরাপত্তা দান করবেন। সব আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে দেবেন এবং মহান রব্বুল আলামিন প্রিয় নবী (সা.)-এর অসিলায় তাঁর উম্মতের সব দোয়া ও ইবাদত কবুল করে নেবেন।

নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন আমার কোনো উম্মত মহব্বতের সঙ্গে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে আমার প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠায় তখন আল্লাহর নিযুক্ত একদল নুরের ফেরেশতা সেই দরুদ ও সালাম পাঠকারীর নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, পরিচয়সহ আমার কাছে পৌঁছে দেয়।’ সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং যাঁর অসিলায় কুল-কায়িনাত সৃষ্টি হয়েছে, আপনার আমার এ পৃথিবীতে, এ ধরায় আগমন আল্লাহর সেই প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বতে দরুদ-সালাম পেশ করে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে আমরা ধন্য হই। আল্লাহ কবুল করুন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা।


   আরও সংবাদ