ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হরো কীভাবে?

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৯৯ বার


অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হরো কীভাবে?

দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা যখন প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সদ্য আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনের সন্ধান পেলেন তখন কতোগুলো বিষয় জানা গেল।

সবার আগে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি জানা গেল তা হচ্ছে- এই ভ্যারিয়েন্টের প্রচুর রূপান্তর ঘটেছে যা এর আগে কখনো কোনো বিশেষজ্ঞের চোখে পড়েনি।

`অমিক্রনে এমন কিছু পাওয়া গেল যা একেবারেই ভিন্ন,` বলেন ড. রিচার্ড লেসেলস, কাওয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। নভেম্বরের শেষের দিকে বিজ্ঞানীদের যে দলটি এই ভ্যারিয়েন্টকে প্রথমবারের মতো শনাক্ত করেছে তিনি তাদের একজন।

ড. লেসেলস এবং তার সহকর্মীরা বুঝতে পারেন অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটে গেছে।

তারা মনে করেন এই ভ্যারিয়েন্টটি সাহারা মরুভূমির আশেপাশের কোন একটি দেশে এক ব্যক্তির শরীরে রূপান্তরিত হয়েছে, যার রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা দুর্বল ছিল। তারা মনে করেন সম্ভবত ওই লোকটি এইচআইভিতে আক্রান্ত যার কোন চিকিৎসা হয়নি। এবং তার পরেই ভাইরাসটি ৪০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এই ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি সম্পর্কে অন্তত দুটো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানী এই `এক ব্যক্তি থেকে ছড়িয়ে পরার` তত্ত্বটিকেই সমর্থন করছেন। কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্ট কোত্থেকে এসেছে সেটি কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে এর জন্ম হয়েছে?

অমিক্রনের উৎপত্তি
আমরা এখনও নিশ্চিত করে জানি না কোথায় এবং কোন পরিস্থিতিতে অমিক্রনের উৎপত্তি হয়েছে। তবে এটুকু জানা যায় যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে প্রথম জানানো হয় ২৪শে নভেম্বর। তবে ভাইরাসটি কোথায় এবং কখন পাওয়া গেছে সেটি জানা বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব তথ্য থেকে তারা ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদিও এসব পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।

নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট যতো দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তাকে কতোটা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ততো বেশি সময় পাওয়া যায়। জানা যায় এই ভাইরাসটি কি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চাইতেও বেশি সংক্রমাক? আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এটি কি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে? গুরুতর অসুস্থ করে ফেলতে পারে? এটি কি মানুষের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে?

অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যদি আসলেই এমন একজন রোগী কাছ থেকে আসে যার দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা দুর্বল, তাহলে তার অর্থ হচ্ছে কোভিড মহামারি মোকাবেলায় এধরনের ব্যক্তিদের ওপর নজর রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

`এখন আমাদের কাছে আরো বেশি তথ্য আছে যা থেকে ধারণা করা যায়- যাদের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা দুর্বল, তাদের সাথে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে,` বলেন ড. ল্যারি কোরি যিনি সিয়াটলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের একজন ভাইরোলজিস্ট। 

`তবে কোভিড প্রতিরোধের কৌশলে এধরনের ব্যক্তিদের এখনও পর্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়নি,` বলেন তিনি।

এক ব্যক্তির দেহে কিভাবে এর জন্ম হতে পারে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন অমিক্রনের উৎপত্তি সম্পর্কে তাদের কাছে বেশ কিছু ক্লু রয়েছে যা থেকে তারা একটি ধারণা করতে পারেন।

ড. লেসেলস বলেন, বর্তমানে যেসব ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে সেগুলোর সাথে অমিক্রনের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। জেনেটিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে এটি একেবারেই ভিন্ন একটি শাখা থেকে এসেছে।

আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে এর সর্ব-সাম্প্রতিক রূপান্তর বা মিউটেশন সম্পর্কে কোন ট্র্যাক রেকর্ড থাকে না। বিজ্ঞানী লেসেলস বলেন, এই ভ্যারিয়েন্টের সবচেয়ে কাছাকাছি ধরনটি পাওয়া গিয়েছিল ২০২০ সালের মাঝামাঝি কোনো সময়ে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে কম্পিউটেশনাল বায়োলজি সিস্টেমসের অধ্যাপক ফ্রাঁসোয়া বালু বলেন, সময়ের এই ব্যবধান থেকে ধারণা করা যায় যে এটি কোত্থেকে এসেছে তা জানা কঠিন। এবং এটি খুব, খুবই ভিন্ন ধরনের।

অমিক্রনের ভ্যারিয়েন্ট বিশ্লেষণ করে জানা গেছে নতুন প্রজাতির এই ভাইরাসটিতে ৫০ বার পরিবর্তন ঘটেছে এবং তার মধ্যে ৩০টিরও বেশি ঘটেছে এর স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিন হচ্ছে ভাইরাসটির এমন একটি অংশ যার মাধ্যমে ভাইরাসটি সিদ্ধান্ত নেয় যে এটি কিভাবে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার সাথে লড়াই করবে।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন ঘটেছিল মাত্র সাতবার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের নজর এড়িয়ে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কিভাবে তার পূর্বসূরি ভাইরাসগুলো থেকে এতোটা বদলে গেল?

যদিও বেশিরভাগ মানুষের শরীর থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সার্স কোভ-২ ভাইরাস দূর হয়ে যায়, সারা বিশ্বে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে যেসব রোগীর দেহে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা দুর্বল তাদের দেহে এই ভাইরাসটি অনেক বেশি দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যেতে পারে।

এ ধরনের লোকের মধ্যে রয়েছে এইচআইভি অথবা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী অথবা যাদের শরীরে কোনো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

তাদের দেহে স্বল্প প্রতিরোধের মুখে পড়ার কারণে ভাইরাসটির মধ্যে অনেক পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়। সাধারণত এধরনের মিউটেশনের জন্য কোনো একটি ভাইরাসকে অনেক লোকজনের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে হয়।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যুক্তরাজ্যে কোভিডে মারা গেছেন এমন একজন ক্যান্সার রোগীর কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহের পর ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ওই রোগী মারা যায় অগাস্টে। গবেষকরা দেখতে পান ওই রোগীর দেহে যে ভাইরাস আক্রমণ করেছিল তাতে এমন একটি পরিবর্তন ঘটেছে যা আলফা ভ্যারিয়েন্টেও দেখা গিয়েছিল।

এই ভ্যারিয়েন্টটিকেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমবারের মতো `উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট` বলে উল্লেখ করেছিল যা যুক্তরাজ্যেই গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পাওয়া গিয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হওয়ার ১০১ দিন পরেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়।

`সাধারণত কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মাত্র সাতদিন স্থায়ী হয়। ভাইরাসটির মধ্যে পরিবর্তনের জন্য এই সময় যথেষ্ট নয়, কারণ ওই ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ভাইরাসটির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে,` বলেন অধ্যাপক রাভি গুপ্ত, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, যাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের দেহে সংক্রমণ ঘটলে ভাইরাসটির মধ্যে পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়। ভাইরাসটির বিকাশের জন্য এমন একটি রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা প্রয়োজন যা কার্যকরী নয় কিম্বা আংশিকভাবে কার্যকরী নয়।

ড. লেসেলস এবং তার সহকর্মীরা দক্ষিণ আফ্রিকায় এইচআইভিতে আক্রান্ত এক নারীর করোনাভাইরাসের নমুনার ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন। ওই নারীর এইচআইভির কোনো চিকিৎসা হয়নি। গত জুন মাসে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তারা বেশ কয়েকবার ওই নমুনার জেনেটিক বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে তার মধ্যে `বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন` ঘটেছে।

গবেষকরা সতর্ক করে দেন যে এর ফলে জনস্বাস্থ্যে সঙ্কটের সূচনা ঘটতে পারে।

ড. লেসেলস এবং তার সহকর্মীরা বিজ্ঞান সাময়িকী নেইচারে ১লা ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেন আফ্রিকাতে সাহারা মরুভূমির আশেপাশের দেশগুলোতে ৮০ লাখের মতো মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত যাদের বর্তমানে কার্যকরী অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি দেওয়া হচ্ছে না।

এদের মধ্যে আরো অনেকে রয়েছেন যাদেরকে এই রোগের ব্যাপারে কখনো পরীক্ষাই করা হয়নি।

ড. লেসেলস এবং অধ্যাপক গুপ্ত যদি সঠিক হন, তাহলে বলতে হবে যে সেখানে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের জন্ম ও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যান্য তত্ত্ব
বিজ্ঞানীরা বলছেন অমিক্রনের উৎপত্তির ব্যাপারে আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত আরো দুটো তত্ত্ব রয়েছে।

তার একটি হচ্ছে- অন্য কোনো প্রাণী থেকে অমিক্রনের উৎপত্তি ঘটেছে। যার অর্থ অজানা কোনো একটি প্রাণীর দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে এবং সেখান থেকে মানবদেহে আসার আগে ভাইরাসটির ভেতরে রূপান্তর ঘটেছে, যেমনটা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ক্ষেত্রেও হয়েছে।

তবে ড. ল্যারি কোরি বলছেন, অমিক্রনের জেনেটিক বিশ্লেষণ থেকে এখনও পর্যন্ত ধারণা করা যায় যে মানবদেহেই এর উৎপত্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, `যে তথ্য প্রমাণ আমরা পেয়েছি তাতে বোঝা যাচ্ছে প্রাণী থেকে এই ভ্যারিয়েন্টের মানুষের দেহে আসার সম্ভাবনা কম।` অধ্যাপক বালু বলেন তারাও এরকম কোনো ক্লু পাননি।

অমিক্রনের উৎপত্তির ব্যাপারে দ্বিতীয় ধারণাটি হচ্ছে-কোনো একজন ব্যক্তির দেহে এর জন্ম হয়নি, বরং কোনো একটি এলাকার লোকজনের ভেতরে সংক্রমণের মাধ্যমে এর উৎপত্তি ঘটেছে। আফ্রিকার কোনো একটি দেশে এটি হয়েছে এবং তার পর এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছে।

ব্রাজিলের জীববিজ্ঞানী ও গবেষক ড. আতিলা ইমারিনো বিশ্বাস করেন যে অমিক্রনের ক্ষেত্রে হয়তো এরকমটাই হয়েছে।

ড. ইমারিনো অমিক্রনের উৎপত্তির সাথে গামা ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তির মিল খুঁজে পান। ব্রাজিলের জনবহুল মানাউস শহরে এবছরের শুরুর দিকে এই গামা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছিল।

`যখন গামা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয় তখনও এই ধারণার কথা বলা হয়েছিল যে এক ব্যক্তির দেহে তার জন্ম হয়েছে যার দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা দুর্বল,` বলেন তিনি।

`কিন্তু পরে প্রমাণ হয়েছে যে মধ্যবর্তীও কিছু বাহক ছিল যা ধরা পড়েনি। এছাড়াও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সময় ভাইরাসটির ভেতরে পরিবর্তন ঘটেছে।`

ড. ইমারিনো মনে করেন আরো গবেষণা হলে অমিক্রনের বেলাতেও হয়তো একই চিত্র পাওয়া যাবে। এমন একটি মহাদেশে অমিক্রন প্রথম শনাক্ত করা হয়েছে যেখানে টেস্টিং ও মনিটরিং-এর ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যান্য জায়গার তুলনায় কম।

তিনি বলেন, `বর্তমানে আমরা যা মনে করছি অমিক্রন হয়তো তার চেয়েও বেশি সময় ধরে ছড়িয়ে পড়ছিল।`

প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে কি কখনো খুঁজে পাওয়া যাবে?
'এক ব্যক্তির দেহে উৎপত্তির তত্ত্ব' যারা সমর্থন করেন তারাও অন্যান্য ধারণাকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে তারা মনে করেন এখনও পর্যন্ত যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলো তাদের ধারণারই পক্ষে।

তাহলে আমরা কি কখনো ওই প্রথম ব্যক্তির কথা জানতে পারবো যার দেহে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছিল?

এই ব্যক্তিকে বলা হয় `পেশেন্ট জিরো` যিনি প্রথম কোনো একটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া-জনিত রোগে আক্রান্ত হন।

এ ধরনের প্রথম ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এথেকে অনেক জরুরি প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়। যেমন কিভাবে, কখন এবং কেন এই রোগের শুরু হয়েছিল।

আর এসব প্রশ্নের উত্তর জানা গেলে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে এই রোগ থেকে বহু মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত ওই পেশেন্ট জিরোকে চিহ্নিত করতে পারেনি। সেটা যে শুধু অমিক্রনের বেলায় তা নয়, বর্তমান ভ্যারিয়েন্টগুলোতে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তিকে এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

রিচার্ড লেসেলস মনে করেন অমিক্রনের পেশেন্ট জিরোকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। কিন্তু এইচআইভি নিয়ে যারা বসবাস করছেন তারা যেন এর ফলে কোন ধরনের বৈষম্যের শিকার না হন বা তারা যাতে লজ্জার মধ্যে পড়ে না যান সেটা আমাদের দেখতে হবে। 

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ড্যাটার নামের একটি দাতব্য সংস্থার হিসেবে এই নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আফ্রিকায় মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশেরও কম লোককে দুটো টিকা দেওয়া হয়েছে, যেখানে সারা বিশ্বে এই হার ৪০%।

যুক্তরাজ্যে সাদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মাইকেল হেড মনে করেন কোভিড ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঠেকাতে হলে টিকার এই অসাম্যের দিকে আমাদের এখন আরো বেশি নজর দিতে হবে। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট বের হয়ে আসার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু টিকার এই অন্যায্যতা এর অন্যতম প্রধান কারণ। আমি বিশ্বাস করি আফ্রিকায় এই অসাম্যের কারণেই অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব ঘটেছে।

ড. হেড বলেন অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সারা বিশ্বে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের `আরো একবার সজাগ` করেছে।

`যদি টিকা নেয়া না থাকে, তাহলে আপনার দীর্ঘ সময়ের জন্য এবং গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,` বলেন তিনি।

`এর অর্থ হচ্ছে নতুন নতুন মিউটেশনের জন্য ভাইরাসটি আরো বেশি সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে, একারণে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো আরো ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটার ঝুঁকি বাড়ছে।`

ড. লেসেলস মনে করেন `এক ব্যক্তির` ধারণার ফলে এখন আফ্রিকাতে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি আরো জোরালো হতে পারে। তার মতো আরো অনেকেই মনে করেন যারা এখনও টিকা নেননি তাদেরকে এখন অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সূত্র : বিবিসি


   আরও সংবাদ