ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৫১ বার
পৃথিবীতে আসার পর প্রত্যেক প্রাণীকেই সুনিশ্চিত যে বিষয়টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সেটা হলো মৃত্যু। মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, অতঃপর তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সূরা আনকাবুত-৫৭)
আর মানবজাতির মৃত্যু মানেই হলো পৃথিবীর সব সাধ বিনষ্ট করে চিরস্থায়ী নতুন এক জীবনের শুরু। যাকে আমরা পরকালের জীবন বলে থাকি; যে জীবনের শুরু থাকলেও শেষ বলতে কিছুই নেই। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকো, অথচ আখিরাতের জীবন হলো উত্তম ও চিরস্থায়ী।’ (সূরা আলা : ১৬-১৭)
দুনিয়ার জীবনটা খুব সংক্ষিপ্ত। এ প্রসঙ্গেও কুরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘মহান রব জিজ্ঞেস করবেন তোমরা কতদিন ছিলে দুনিয়ার জমিনে? তারা (আমরা) বলবে. একদিন বা একদিনের কিছু সময় মাত্র।’ (সূরা মুমিন : ১১২-১১৩)
এ সংক্ষিপ্ত জীবনে আমরা পরকালের জন্য যা অর্জন করব তা নিয়েই মহান রবের সামনে দাঁড়াব। কিন্তু এতেও আমাদের দাম্ভিকতার কমতি হবে না, আমরা তো সরাসরি বলে দেবো বিচার দিবসে যে, আজ আমি আমার বিষয়ে কারো সাক্ষ্য প্রমাণ মানব না! ঠিক তখনই মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, ‘পড়ো তুমি তোমার আমলনামা। আজকের হিসাবের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।’ (সূরা বনী ইসরাইল-১৪)
যখন পড়া শুরু করে দেবো তখন আমাদের জবান আফসোসের সুরে বলতে থাকবে- ‘হায় এটা কেমন ধরনের আমলনামা! ছোট-বড় কোনো কর্মই বাদ দেয়নি। সবই সংরক্ষণ করে রেখেছে।’ (সূরা কাহাফ-৪৯)। সেদিন আমাদের মুখ বন্ধ করে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে। আর আমাদের হাত মহান আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দেবে। পা-ও সাক্ষ্য দেবে। আমরা যা করেছি তার সব বলে দেবে।’ (সূরা ইয়াসিন-৬৫)
এমনিভাবে আমাদের যতেœ রাখা শরীরের চামড়াও আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া শুরু করবে। আমরা তখন বলব, কি হলো তোমাদের? কেন আজ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছো? তারা উত্তরে বলবে, ওই আল্লাহ আমাদের কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, যিনি সব কিছুকেই কথা বলার শক্তি দান করেছেন এবং তিনি তোমাদেরকেও সৃষ্টি করেছেন প্রথমবার। আর তার দিকেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সূরা হামিম সিজদা-২১)
অতঃপর সর্বশেষে গুনাহগারদেরকে যখন বাম হতে আমলনামা দেয়া হবে, তখনকার আর্তনাদ কতই না লাঞ্ছনাদায়ক আর্তনাদ হবে! চিৎকার করে বলতে থাকবে- ইস! যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হতো! আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো উপকারে এলো না! আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল!
ফেরেশতাদেরকে বলা হবে- ধরো! একে গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর নিক্ষেপ করো জাহান্নামে। অতঃপর তাকে শৃঙ্খলিত করো ৭০ গজ দীর্ঘ এক শিকলে। নিশ্চয় সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না এবং মিসকিনকে খাবার দিতে উৎসাহিত করত না। অতএব, আজকের দিন এখানে তার কোনো সুহৃদ নেই এবং কোনো খাদ্য নেই, ক্ষত-নিঃসৃত পুঁজ ব্যতীত। গোনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না।’ (সূরা হাক্বাহ : ২৫-৩৭)
কেমন হবে ওই দিনের অবস্থা! একটু ভাবলেই উপলব্ধি করা সম্ভব। বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ বহু গুনাহ করে তার পাশের ব্যক্তি জানে না। স্বামীর গুনাহের কথা স্ত্রী জানে না। বোনের গুনাহের কথা জনে না তার পাশে থাকা ভাই! যদি কোনোভাবে জেনে যায় তখন তো লজ্জায় দিশেহারা হয়ে বহুলোক আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। কিন্তু ওই দিন যখন বিচার হবে, তখন গোটা দুনিয়ার সব মানুষ জেনে যাবে পৃথিবীতে আমি আপনি কেমন ছিলাম। আর তখন কেবল আফসোস-ই হবে একমাত্র সম্বল! জালিম তথা গুনাহগার লোকেরা নিজের হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম। দুর্ভোগ যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সূরা ফুরকান : ২৭-২৮)। কিন্তু এ আফসোস কোনো কাজে আসবে না। বরং মহান রবের দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতেই হবে।
প্রিয় নবীজী সা: বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ (সহিহ বুখারি)
অতএব আসুন আর দেরি নয়, আর অপেক্ষা নয়, বরং এখন থেকেই পৃথিবীর সব মোহ, ভোগবিলাসের পেছনে না দৌড়ে, প্রিয় রাসূল সা:-এর সুন্নাহ মোতাবেক স্বীয় জীবনকে পরিচালিত করার মাধ্যমে মহান রবের দেয়া সিরাতে মুস্তাকিমের উপর চলতে শুরু করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবুল করুন।
মুফতি আনিছুর রহমান
গবেষক, ইমাম ও খতিব