ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৩:২৮ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৩৮ বার
।। মৌলভি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভুইয়া শিবপুরী।।
পবিত্র হাদীস শরীফে হযরত রাসূল (সাঃ) ফরমান যে, “সর্ব প্রথম আল্লাহ্ তায়ালা আমার নূর কে সৃজন করেছেন। আমি আল্লাহ্র নূর হতে আর সমগ্র সৃষ্টিরাজী আমার নূর হতে।” [ সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা-৩]
হাদীসে কুদসিতে এরশাদ করা হয়েছে, “আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” [সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা-৭০]
আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে, “আদম যখন পানি ও কাদার মধ্যে ছিলেন আমি তখনো নবী ছিলাম।” অর্থাৎ আদমের যখন অস্তিত্ব ছিলনা তখনো হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) নবী ছিলেন।
সুতরাং এই ৩টি হাদীস থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার যে আল্লাহ্র এই সৃষ্টি জগত সৃষ্টির মূলে ছিলেন আমাদের দয়াল নবী রাসূল (সাঃ) আর সেই জন্য তাকেই সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়েছিল। অথচ সব নবীর শেষ নবী হিসেবে এই ধুলির ধরায় তিনি আগমন করলেন হিজরীপূর্ব ৫৩ সালের ১২ই রবিউল আওয়াল রোজ সোমবার সুবেহ সাদিকের সময়। রাসূল কে তার আপন পরিচয়ে জগতে প্রেরনের পূর্বে আল্লাহ্ ১লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসূল প্রেরন করেছিলেন মূলত পৃথিবীতে তার আগমনের ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য। সৃষ্টির শুরুতেই সমস্ত নবী-রাসূলদের কাছ থেকে তিনি অঙ্গিকার নিয়েছিলেন প্রত্যেকেই যেন তার সজাতির কাছে রাসুল (সাঃ) এর কথা তুলে ধরেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি এরশাদ করেন, “স্মরণ কর!যখন আল্লাহ নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদের কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি এবং অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক রুপে যখন একজন রাসূল (মহাম্মদ-সাঃ) আসবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে ও তাকে সাহায্য করবে। তিনি (আল্লাহ্) বললেন, তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এ সম্পর্কে আমার অঙ্গিকার কি তোমরা গ্রহন করলে? সকল নবী-রাসূল বললেন, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি (আল্লাহ্) বললেন,তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাক্ষী রইলাম।” (আল ইমরানঃ ৮১)
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন উপলক্ষে আল্লাহর শুকরিয়ার্থে শরীয়ত সম্মতভাবে খুশি উদযাপন করাই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী (সা :)। নবী রাসূল প্রেরণের ক্রমধারায় শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা:) এর আর্বিভাব ছিল একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। হযরত ঈসা (আঃ)-এর পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ ধরায় নবী রাসূলের আগমন ঘটেনি।
সাইয়্যেদুল মোরছালিন খাতামুন্নাবীয়্যিন রাহমাতাল্লি আলামিন মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর থেকে পৃথিবীর সমস্ত জমিনই মসজিদে পরিণত হল। যার ফলে আমরা এখন মসজিদে ঘরে যানবাহনে পথে-ঘাটে সবখানেই নামাজ পড়তে পারছি। নবী করীম (সঃ) এর আগমনে আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হল আহলান ছাহলান, মারহাবান-মারহাবান! হযরত মা আমেনা বলেন তাঁর জন্মলগ্নের পর মুহূর্তেই একটা নূর প্রকাশিত হল যার আলোতে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের সবকিছু আলোকিত হয় এবং যার আলোতে সিরিয়ার শাহী মহল মা আমেনা দেখতে পান। (বায়হাকী দালায়েলুন নবুওত মুসনাদে আহমদ) রাসূলে পাক (সঃ) দুনিয়াতে তশরিফ আনার সাথে সাথে ক্বাবা শরীফ মাকামে ইব্রাহীমের দিকে ঝুঁকে পড়ে রাসূলেপাক (সঃ) এর বেলাদাতের তাজিম করেছিল। (মাদারেজুন্নবুয়ত) ঈদ অর্থ আনন্দ-খুশী, উৎসব। আর মিলাদ শব্দের অর্থ জন্ম বা জন্মবৃত্তান্ত।
ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাখ্যাই হচ্ছে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মদিন বা জন্মকাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট আলোচনা করা বা খুশি উদযাপন করা। এ মাসেই প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ধরার বুকে আগমন করেছেন। পবিত্র কোরআন-এর আলোকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম :এখানে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো। যা দ্বারা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর মিলাদ পালন করা শুধু বৈধ নয়, বরং উত্তম আমল হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।
০১. মহান আল্লাহ তায়াআলা পবিত্র কালামুল্লাহ শরিফে ইরশাদ ফরমান- হে মানবকুল! তোমাদের কাছে উপদেশ বাণী এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের ব্যাধির নিরাময়, হিদায়েত ও রহমাত মুসলমানদের জন্য। হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম আপনি বলুন, আল্লাহ’র অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়ায় সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হওয়া উচিত। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা তাঁরা সঞ্চয় করেছে। (সুরা ইউনুস : ৫৭-৫৮) অত্র আয়াতে কারিমায় হিদায়েত ও রহমাত পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। এবং এটি সমস্ত আমলের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। এখন বিচার এই যে, হিদায়েত ও রহমাত, দ্বারা উদ্দেশ্য কি? এ সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ‘তাফসিরে তাবায়ী’ শরিফের মধ্যে ইমাম ইবনে জারীর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ থেকে বর্ণনা করেছেন, হেদায়েত দ্বারা উদ্দেশ্য ইসলাম আর ‘রহমাত’ দ্বারা উদ্দেশ্য কোরআন।
হাফেজে হাদিস আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি তার বিশ্বনন্দিত তাফসির ‘আদদুরূল মানসুর’ এর মধ্যে একই সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন।‘রুহুল মায়ানি’তে আল্লামা নিসারুদ্দীন মাহমুদ আলুসী রাহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি এরুপ বর্ণনা করেন। তাফসিরের বর্ণনায় এ স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তোমরা মহামূল্যবান সম্পদ পেয়েছ এজন্য ঈদ পালন কর বা খুশি উদযাপন কর।
পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়াআলা বলেন, আর আমি আপনাকে জগৎসমূহের জন্য একমাত্র রহমাত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। এখানে রহমাত বলতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে বলা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, আর তোমরা সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ কর। যা আল্লাহ তায়াআলা তোমাদেরকে দান করেছেন। (সূরা আল ইমরান : ১০৩) আল্লাহ তায়াআলা দুনিয়াতে যত নিয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম নিয়ামত হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম।
এ দুটি আয়াতের আলোচনায় এ স্পষ্ট প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর দুনিয়াতে আগমনের দিন আনন্দ উৎসব তথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম পালন করা সর্বোত্তম আমল। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম উদযাপন করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর আনুগত্যের বহি:প্রকাশ।
সাহাবায়ে কেরাম ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করেছেন । নিচের আলোচনা থেকে বোঝা যায় ।
[১] হযরত আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে- তিনি বলেনঃ- আমি নবী করিম (ﷺ) -এর সাথে মদিনার আবু আনসারীর গৃহে গমন করে দেখি- তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজনকে নবী করিম (ﷺ) -এর জন্ম বৃত্তান্ত শিক্ষা দিচ্ছেন এবং বলেছেন- আজই সেই দিন । তখন তাদেরকে দেখে নবী করিম (ﷺ) – এরশাদ করলেনঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তায়ালা তোমার উপর রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং আল্লাহ্র ফেরেস্তাগণও তোমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন । ( কিতাবঃ- দোররে মুনাজ্জাম, আব্দুল হক এলাহাবাদী )
[২] একদিন হযরত ইবনে আব্বাস কিছু লোক নিয়ে নিজগৃহে রাসূল করিম (ﷺ) -এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করে আনন্দ উৎসব করছিলেন এবং প্রশংশাবলী আলোচনাসহ দরূদ ও সালাম পেশ করেছিলেন । এমন সময় নবী করিম (ﷺ) সেখানে উপস্থিত হয়ে এ অবস্থা দেখে বললেনঃ- তোমাদের সকলের জন্যে আমার শাফায়াত অবধারিত হয়ে গেল” । {কিতাবঃ- ইবনে দাহইয়ার আত-তানভীর, ৬০৪ হিজরী}সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, নবী পাকের মিলাদ শরীফ পাঠে রাসূলে পাকের শাফায়াত নসীব হবে ।
[৩] হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) মিম্বারে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পাঠ করেছিলেন । দীর্ঘ কবিতার একাংশ অর্থ দেওয়া হলো ।
“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি সর্ব দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই জন্ম গ্রহন করেছেন। আপনারা এই বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছা আনুযায়ীই সৃষ্টি হয়েছে । আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন । এর প্রমাণঃ- যখন মুযাজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাজের জন্য “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে আজান দেয় । আল্লাহ্ তায়ালা আপন নামের আংশ দিয়ে নবীজীর নাম রেখেছেন- তাঁকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে । এর প্রমান হচ্ছে- আরশের অধিপতির নাম হলো “মাহমুদ” এবং ইনির নাম হলো “মুহাম্মাদ” (ﷺ) । { সুত্রঃ- দিওয়ানে হাসসান }
[৪] হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি হুযুর পাক (ﷺ) -এর মীলাদ শরীফ পাঠ বা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে । {আন নি”মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম, পৃষ্ঠাঃ- ১০ , আল্লামা ইবনে হাজার হাইছামী (রহঃ) / জাওয়াহেরুল বিহারঃ- ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠায়ঃ- ৩৫০, প্যালেষ্টাইনের আল্লামা ইউসুফ নাবাহানী (রহঃ)}
[৫] হযরত ওমর (রা) বলেন, ” যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলতঃ ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করল । {আন নি”মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম, পৃষ্ঠাঃ- ১০ , আল্লামা ইবনে হাজার হাইছামী (রহঃ) / জাওয়াহেরুল বিহারঃ- ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠায়ঃ- ৩৫০,প্যালেষ্টাইনের আল্লামা ইউসুফ নাবাহানী (রহঃ)}
[৬] হযরত ওসমান (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনায়েন যুদ্ধে শরীক থাকল । {আন নি”মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম, পৃষ্ঠাঃ- ১০ , আল্লামা ইবনে হাজার হাইছামী (রহঃ) / জাওয়াহেরুল বিহারঃ- ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠায়ঃ- ৩৫০, প্যালেষ্টাইনের আল্লামা ইউসুফ নাবাহানী (রহঃ)}
[৭] হযরত আলী (রাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করল সে ব্যক্তি অবশ্যই ইমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে । {আন নি”মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম, পৃষ্ঠাঃ- ১০ , আল্লামা ইবনে হাজার হাইছামী (রহঃ) / জাওয়াহেরুল বিহারঃ- ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠায়ঃ- ৩৫০, প্যালেষ্টাইনের আল্লামা ইউসুফ নাবাহানী (রহঃ)}
হযরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ.) তাইতো তাঁর রচিত ‘মা সাবাতা মিনাসসুন্নাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন : ‘হাজার মাসের চেয়ে উত্তম লাইলাতুল কাদর, ফজিলতের রাত্রি শবে বরাত, শবে মেরাজ, দুই ঈদের রাত এ সবই রাহমাতুল্লিল আলামীনকে দান করা হয়েছে। যাঁকে দান করা রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, স্বয়ং তাঁর আগমন দিবস যে কত লক্ষ-কোটি দিবস-রজনীর চেয়ে উত্তম তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।’
হযরত ইমাম বুখারী (রহ.) বর্ণনা করেন : ‘আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার বংশের একজন স্বপ্নে তাকে খুবই খারাপ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করল, আপনার অবস্থা কি? সে জবাবে বলল, তোমাদেরকে ছেড়ে আসার পর আমার কল্যাণজনক কিছুই হয়নি, হ্যাঁ, এই আঙ্গুল (শাহাদাত অঙ্গুলি) দ্বারা পানি পাই। কারণ, এ আঙ্গুলের ইশারায় আমি দাসী সুয়াইবাকে মুক্তি দিয়েছিলাম।’
হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) তাইতো বলেছিলেন :
روشن زوجود تست کونین
ای ظاهر و باطنت همه نور
‘আপনার অস্তিত্বের আলোয় উভয় জাহান আলোকিত, হে মহান! আপনার জাহের ও বাতেন সবই নূর।’ (কাসিদায়ে গাউসুল আজম)
তাইতো আল্লামা বুছিরী (রহ.) বলেছেন :
لو لاه ما خلق الافلاک خالقها
لو لاه ما خرج الانسان من عدم
‘তিনি না হলে আসমান স্রষ্টা তা সৃষ্টি করতেন না, তিনি না হলে মানবজাতি অনস্তিত্বের গ-ি হতে বের হয়ে আসত না।’
তাঁর মহান সত্তা সম্পর্কে শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন :
بلغ العلی بکماله
کشف الدجی بجماله
حسنت جمیع خصاله
صلوا علیه و آله
‘মানবতার শীর্ষে তুমি হলে উপনীত,
রূপের ছটায় দূর করলে আঁধার ছিল যত-
সকল গুণের সমাবেশে চরিত্রে মহান,
তুমি ও তোমার বংশ পরে হাজারো সালাম।’
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝার জন্য উপরোক্ত হাদীসই যথেষ্ট। এর জন্য সামান্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- বেহেস্তে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর সাথী হওয়া, ইসলামকে জীবিত রাখা, বদর ও হোনাইনের মত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সমতুল্য নেকী অর্জন করা এবং পৃথিবী থেকে ঈমানের সাথে বিদায়ের নিশ্চয়তা ও বিনা হিসাবে বেহেস্তে প্রবেশ করার মত সৌভাগ্য লাভ হয় এই ‘মিলাদুন্নবীর মাহফিলে’। খোলফায়ে রাশেদীনের অভিমত ও আমল আমাদের জন্য একটি শক্ত দলীল।
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপকারিতা সম্পর্কে জুরকানী শরীফে রয়েছে, যা আবু লাহাব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- অর্থাৎ- হযরত ছুয়ায়লি (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, হযরত আব্বাস (রাঃ) এরশাদ করেন যে, যখন আবু লাহাব মারা যায় তার এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে বড়ই খারাপ অবস্থায় আছে এবং সে বলছিল, তোমাদের কাছ থেকে আসার পর আমার কোনো শান্তি নসীব হয়নি। হঁ্যা এতটুকু অবশ্যই যে, প্রত্যেক সোমবার আমার আযাব হালকা করে দেয়া হয়। তা শুনে হযরত আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটি এ জন্যই যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার দিন দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন। আর ছোয়াইবা নামী জনৈকা ক্রীতদাসী তাকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আগমনের শুভ সংবাদ দিয়েছিল বিধায় সন্তুষ্টি চিত্তে আবু লাহাব তাকে আজাদ করে দিয়েছিল।
আজকের সমাজে বিদ্যমান সকল অন্যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে র্শিক থেকে মুক্ত করার জন্য মুসলিম বিশ্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক মাত্র পথ হলো আল-কুরআনকে আঁকড়ে ধরা, রাসূলে খোদা (সা.)-এর সুন্নাহকে বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাসূলের এ চিরন্তন দাওয়াত পৌঁছানোর এবং তাঁর সাথে ভালোবাসা গড়ে তোলার মোক্ষম সময়। আমরা রাসূলের সাথে যত বেশি মহব্বতের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব, যত বেশি দরুদ ও সালাম পাঠাব ততই বাতিল, তাগুত আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। আসুন ঘরে ঘরে রাসূলের জীবন চরিত্র আলোচনা ও বাস্তবে তা পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। ঈদে মিলাদুন্নবী সবার জন্য হোক মুবারক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন হচ্ছে জান্নাত পাওয়ার মাধ্যম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল। তাই সাহাবায়ে কেরামের সাথে একমত পোষন করে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাহফিল করা ঈমানদারদের জন্য একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন যেন মোনাফিকদের খপ্পর থেকে আমাদের ঈমানকে হেফাজত করেন। “আমীন” বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।