ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

সালাতের আযান ও ইকামাত

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:১৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৭ বার


সালাতের আযান ও ইকামাত

 আযান অর্থ : সালাত আদায় করতে আসার জন্য আহ্বান বা ঘোষণা ধ্বনি।

আযানের গুরুত্ব
=========================
 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন : তোমরা যখন সালাতের জন্য আহ্বান কর তখন তারা একে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে। এটা এ জন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের বোধ শক্তি নেই। [সূরা ৫, আল মায়িদা-৫৮]
 হে মু’মিনগণ। জুমু‘আর দিন যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। [সূরা ৬২, আল জুমু‘আ-৯]
১। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন সালাতের সময় হয় তখন তোমাদের দুইজনের একজন আযান দিবে এবং ইকামাত বলবে। তারপর তোমাদের দুইজনের মধ্যে যে বয়োজ্যেষ্ঠ সে ইমামাতি করবে। [বুখারী/৬২৩]
২। আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর খুশি হন যে পাহাড়ের উচ্চশৃঙ্গে বকরী চড়ায় এবং সালাতের জন্য আযান দেয় ও সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তোমরা আমার এ বান্দাকে দেখ, সে আযান দিচ্ছে এবং সালাত কায়েম করছে ও আমাকে ভয় করছে। আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। [নাসাঈ/৬৬৯]
৩। যখন সালাতের আযান দেয়া হয় তখন শাইতান এত দ্রুত পলায়ন করে যে, তার পিছনের রাস্তা দিয়ে বায়ু নির্গত হতে থাকে এবং সে এতদূরে চলে যায় যেখানে আযানের ধ্বনি পৌঁছেনা। আযান সমাপ্তির পর শাইতান ঐ স্থানে পুনরায় আগমন করে। পুনরায় সে ইকামাতের শেষে প্রত্যাবর্তন করে। অতঃপর সে সালাত আদায়কারীর অন্তরে কু-মন্ত্রনার সৃষ্টি করে এবং তাকে এমন বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয় যা সে ভুলে গিয়েছিল। অনেক সময় সালাত আদায়কারী কত রাক‘আত সালাত আদায় করেছে তা সে ভুলে যায়। [আবূ দাউদ/৫১৬, বুখারী/৫৭৯]

আযান দেয়ার নিয়ম-কানুন এবং আযানের শব্দের উত্তর দেয়া
===========================
১। বিলালকে (রাঃ) আযানের শব্দ জোড়ায় জোড়ায় (দুই দুই বার) এবং ‘কাদকামাতিস সালাহ’ ছাড়া ইকামাতের শব্দগুলি বেজোড় করে বলার নির্দেশ ছিল। [বুখারী/৫৭৬, মুসলিম/৭২২, নাসাঈ/৬৩১]
২। আযান দেয়ার সময় শাহাদাত আঙ্গুল দুইটি দুই কানে রাখতে হবে এবং “হাইয়া ‘আলাস সালাহ” বলার সময় ডান দিকে এবং “হাইয়া ‘আলাল ফালাহ” বলার সময় বাম দিকে ঘাড় ঘুরাতে হয়। [বুখারী/৬০৪, তিরমিযী/১৯৭, ইবন মাজাহ/৭১১] 
৩। ফাজরের সালাতের আযানের সময় ‘‘হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্” বলার পর ২ বার “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম” বলতে হয়। [ইব্ন মাজাহ/৭১৬, আবূ দাউদ/৫০১]

@@ ক্রঃনং== আযানের শব্দসমূহ== কতবার বলতে হবে== আযানের শব্দের উত্তর
==============================
১।== আল্লাহু আকবার== ৪ বার== আল্লাহু আকবার
2।== আশহাদু আল্ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ== ২ বার== আশহাদু আল্ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
৩।== আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ=২ বার== আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ
৪।== হাইয়া ‘আলাস সালাহ্==২ বার==‘লা হাওলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’
৫।== হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্==২ বার==‘লা হাওলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’
৬।== আল্লাহু আকবার==২ বার== আল্লাহু আকবার
৭।== লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ==১বার== লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
৮।== আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম==২ বার== আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম।

  আযানের আগে বা পরে উচ্চস্বরে যিকির, হামদ, নাত, তাসবীহ, দুরূদ, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ, গযল ইত্যাদি শোনান উচিত নয়।
  আযান বা ইকামাত দেয়ার সময় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ এর জবাবে বলতে হয়- ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ।’ কিন্তু আমরা অনেকেই না জানার ফলে জবাব দিই- ‘সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়।
  যে সময় আযান বা ইকামাতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলা হয়। অনেকেই আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে ঘর্ষন করতে দেখা যায়। এরূপে চোখ ঘর্ষন করার পদ্ধতি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। 

আযানের জবাব দেয়ার পর দুরূদ ও আযানের দু‘আ পাঠ
===============================
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তোমরা যখন মুআযযিনকে আযান দিতে শোন তখন মুআযযিন যা বলে তোমরাও তা বলবে (আযানের জবাব দিবে) এবং এরপর আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে। [বুখারী/৫৮৫, মুসলিম/৭৩৩, ইব্ন মাজাহ/৭২২, নাসাঈ/৬৮৩, আবূ দাউদ/৫২৯, তিরমিযী/২১১] 

আযানের দু‘আ
=====================
  اللهم رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيْلَةَ وَ الْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا                         
مَحْمُوْداً الَّذِيْ وَعَدْتَهُ.
১। উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ্ দা’ওয়াতিত্ তাম্মাতি, ওয়াস সালাতিল কায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাতী ওয়াব ‘আছহু মাকামাম মাহ্মুদানিল্লাযী ওয়া ‘আদতাহ। [বুখারী/৫৮৫, মুসলিম/৭৩৩, ইব্ন মাজাহ/৭২২, নাসাঈ/৬৮৩, আবূ দাউদ/৫২৯, তিরমিযী/২১১]

রাতের শেষ প্রহরিতে বিলাল (রাঃ) সাহরীর ও তাহাজ্জুদ এর আযান এবং আবদুল্লাহ ইব্ন উম্মে মাকতুম ফাজরের আযান দিতেন
=============================
১। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : বিলালের আযান যেন তোমাদের কারো সাহরী খাওয়া বন্ধ না করে। যেহেতু সে রাত থাকতেই আযান দেয়, উদ্দেশ্য তোমাদের মাঝে তাহাজ্জুদ আদায়কারী যেন একটু বিশ্রাম নিতে পারে, অথবা ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দেয়। সে বলবে না যে, ফাজর হয়েছে বা সুবহে সাদিক হয়েছে। [বুখারী/৫৯৪]
২। বিলাল (রাঃ) রাত থাকতেই আযান দেয়, অতএব আবদুল্লাহ ইব্ন উম্মে মাকতুম যতক্ষণ আযান না দেয়, ততক্ষণ তোমরা (সাহরীর) পানাহার করতে পার। [বুখারী/৫৯৫]
৩। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : বিলাল রাত থাকতে (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ ও সাহরীর জন্য) আযান দেয়। তাই বিলাল আযান দিলেও তোমরা (সাহরীর) পানাহার করতে পার, যতক্ষণ পর্যন্ত আবদুল্লাহ ইব্ন উম্মে মাকতুম আযান না দেয়। [বুখারী/৫৮৬]

আযান ও ইকামাতের মাঝে দু‘আ কবূল হয়
==========================
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আযান ও ইকামাতের মাঝে দু‘আ কবূল হয়। [তিরমিযী/২১২, ৩৫৯৫, আবূ দাউদ/৫২১] 
২। নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : প্রত্যেক আযান ও ইকামাতের মধ্যে সালাত রয়েছে। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। তারপর বলেছেন : যে চায় তার জন্য। [বুখারী/৫৯৪, নাসাঈ/৬৮৪]
৩। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) বলেছেন : মুআযযিন যখন আযান দিত, তখন কতক সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বের হতে হতে (মাসজিদের) স্তম্ভের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেন এবং এ অবস্থায় মাগরিবের ফারয সালাতের আগে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। [বুখারী/৫৯৫] 

সালাতের ইকামাত
◈◈◈◈◈◈◈◈◈◈◈◈◈◈◈

 ইকামাত অর্থ : ফারয সালাতের শুরুতে উচ্চারিত শব্দাবলি যা শুনে মুসল্লীরা সালাতে দন্ডায়মান হন।

ইকামাতের গুরুত্ব
======================
১। প্রত্যেক ফারয সালাতের জন্য ইকামাত দিতে হবে। [নাসাঈ/৬৬৬, বুখারী/৫৬৬, ৬০০]
২। কাযা ফারয সালাত আদায়ের সময়েও ইকামাত দিতে হবে। [তিরমিযী/১৭৯, নাসাঈ/৬৬৫, মুসলিম/১৪৩৩]
৩। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন ইকামাত দেয়া হয় তখন ফারয সালাত ব্যতীত আর কোন সালাত নেই। [বুখারী/অনুচ্ছেদ-৮০, মুসলিম/১৫১৪, তিরমিযী/৪২১]

ইকামাতের শব্দগুলি বলার নিয়ম-কানুন
============================
১। বিলালকে (রাঃ) আযানের শব্দ জোড় সংখ্যায় এবং ইকামাতের শব্দ বেজোড় সংখ্যায় বলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। [বুখারী/৫৭৬, মুসলিম/৭২২, ইব্ন মাজাহ/৭৩০, তিরমিযী/১৯৩] 
  ইকামতের শব্দগুলি হল- আল্লাহু আকবার-২ বার, আশহাদু আল্ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-১ বার, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ-১ বার, হাইয়া ‘আলাস সালাহ-১ বার, হাইয়া ‘আলাল ফালাহ-১ বার, কাদ কামাতিস সালাহ-২ বার, আল্লাহু আকবার-২ বার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-১ বার। 
২। ইকামাতের সময় কাদকামাতিস সালাহ্ বাক্যটি দুইবার বলতে হবে। [আবূ দাউদ/৫০৮, ৫০৯]

ইকামাত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাদি
===========================
১। সালাতের ইকামাত হয়ে গেলে তখনও ইমাম কোন প্রয়োজনে অন্য লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। [বুখারী/৬১২]
২। যদি সান্ধ্যকালীন (রাতের) খাবার উপস্থিত করা হয় আর সালাতের জন্য ইকামাত বলা হয়, তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নিবে। [বুখারী/৬৩৬, মুসলিম/১১২৪]
৩। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন সালাতের ইকামাত দেয়া হয় তখন তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত দন্ডায়মান হয়োনা। অন্য এক বর্ণনায় আছে : আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দন্ডায়মান হয়োনা, বরং তোমরা এ সময়ে প্রশান্তির সাথে অপেক্ষা কর। [আবূ দাউদ/৫৩৯, বুখারী/৬০৭, মুসলিম/১২৪৫, তিরমিযী/৫৯২]
৪। আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) বলেছেন : সালাতের ইকামাত দেয়া হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে বলতেন : তোমাদের কাতারগুলো ঠিক করে নাও আর মিলিতভাবে দাঁড়াও। [বুখারী/৬৮৪]
৫। নাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামা‘আতে সালাত শুরু করার সময় সমবেত ব্যক্তিদের নিকট উপস্থিত হয়ে তিনবার বলতেন : তোমরা তোমাদের কাতার সোজা কর। আল্লাহর শপথ! তোমরা কাতার সোজা করে দন্ডায়মান হবে, অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করবেন। বর্ণনাকারী বলেন : অতঃপর আমি সালাত আদায়কারীদেরকে পরস্পর কাঁধে কাঁধ, পায়ে পা এবং গোড়ালির সাথে গোড়ালি মিলিয়ে দাঁড়াতে দেখেছি। [আবূ দাউদ/৬৬২, নাসাঈ/৮১৬]
  ইকামাত দেয়া শেষ হলে ইমাম মুক্তাদীদের দিকে ফিরে তিনবার বলবেন : তোমাদের কাতারগুলো সোজা কর আর পরস্পর মিলিতভাবে দাঁড়াও।
  বর্তমানে অধিকাংশ মাসজিদের ইমামেরা ইকামাত দেয়ার পূর্বে কাতার সোজা করার জন্য বলেন এবং ইকামাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে সালাত আরম্ভ করেন। যা হাদীসের বিপরীত পদ্ধতি। আর এ বিষয়ে আল্লাহ ভাল জানেন।

○○○   ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত আল কুরআন ও হাদীস গ্রন্থ হতে সংকলিত।
○○○  দীন প্রচারের স্বার্থে অন্যান্যদের নিকট শেয়ার করুন।


   আরও সংবাদ