ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ মার্চ, ২০২২ ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৬৫ বার
সালাম একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদিসহ প্রতিটি ধর্মেই অভিবাদনসূচক কিছু নির্দিষ্ট বাক্য নির্ধারিত থাকে। যার দ্বারা পরস্পর সাক্ষাতে একে অন্যের মঙ্গল কামনা করে। তদ্রুপ ইসলাম ধর্মেও অভিবাদনসূচক একটি নির্দিষ্ট বাক্য নির্ধারিত আছে। যা পৃথিবী সৃষ্টির আগেই মহান আল্লøাহ তায়ালা সর্বপ্রথম হজরত আদম আ:-কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তায়ালা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন। আর এখান থেকেই সালামের প্রচলন শুরু।
সালামের গুরুত্ব : সালাম অর্থ রহমত, শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, ইত্যাদি। হজরত আলী রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: বলেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। তার মাঝে সর্বপ্রথম হক হলো- কোনো মুসলমান যখন অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ হবে তখন তাকে আগে আগে সালাম দেবে।’ অর্থাৎ সালামের মাধ্যমে তার জন্য কল্যাণ বা মঙ্গল কামনা করবে। আগে আগে সালাম দেয়া এটা রাসূল সা:-এর আদর্শ। তিনি ছোট-বড়, ধনী-গরিব সবাইকে আগে আগে সালাম দিতেন। রাসূল সা: এক হাদিসে বলেন, ‘তোমরা সবাইকে খাওয়াবে আর পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’ সালাম একটি ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। অর্থাৎ কারো সাথে কোনো কথা বলতে হলে আগে সালাম দিয়ে তারপর কথা বলা রাসূল সা:-এর সুন্নত। হাদিসে আছে, ‘আগে সালাম পরে কালাম।’ সালামকে আল্লাহ তায়ালা অনেক পছন্দ করেন। তাই রাসূলের মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ রাসূল সা:-এর রওজা মোবারকে জিয়ারতে যাবে তাদের জন্য আবশ্যক হলো তারা রাসূল সা:-কে দূর থেকে সালাম করবে। শুধু তাই নয়, বরং সালাম এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যে, মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেও কখনো কখনো হজরত জিবরাইল আ:-কে দিয়ে রাসূলের কাছে সালাম পাঠাতেন। সালাম সব নবীর একটি সুন্নত আমল ছিল। প্রকৃত মুমিনের আলামত হলো মানুষকে বেশি বেশি সালাম দেয়া। রাসূল সা: সালামের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘সালাম শুধু জীবিত লোকদের নয় বরং তোমরা মৃত ব্যক্তিদেরও সালাম দেবে।’ অর্থাৎ যখন কোনো মুসলমানের কবরের পাশ দিয়ে যাবে তখন তাকে সালাম করবে (আস্সালামু আলাইকুম ইয়াহলাল কুবুর বলে) তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবে।’
সালামের ফজিলত : হজরত আবু দারদা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা সালামের খুব প্রচলন ঘটাও। তাহলে তোমরা উন্নত হতে পারবে। অর্থাৎ সালামদাতাকে আল্লাহ তায়ালা রহমত ও মাগফিরাত দিয়ে বা সুখ শান্তি দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেবেন।’ (তাবরানি) অন্য হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আগে আগে সালাম দেয় সে ব্যক্তির মাঝে কখনো অহঙ্কার থাকবে না। সে অহঙ্কার থেকে মুক্ত থাকবে।’ (বায়হাকি) হজরত ইমরান ইবনে হুসাই রহ. রাসূল সা: থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূল সা: মসজিদে নববিতে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে বসে আছেন। এমন সময় জৈনিক ব্যক্তি এসে রাসূল সা:-কে ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিয়ে মজলিসে সবার সাথে বসে গেলেন। তখন রাসূল সা: উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘সালামদাতাকে আল্লাহ তায়ালা ১০টি নেকি দিয়েছেন’।
এর কিছুক্ষণ পর অন্য এক সাহাবি এসে রাসূল সা:-কে আবার ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি’ বললেন। রাসূল সা: তখন সবাইকে বললেন, ‘এ ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা তার দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০টি নেকি দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর অপর এক ব্যক্তি এসে রাসূল সা:-কে পূর্ণ সালাম অর্থাৎ ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতু বললেন। রাসূল সা: এবার অনেক খুশি হলেন এবং বললেন, ‘এ ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’য়ালা ত্রিশটি নেকি দিলেন। এর পর সকলকে লক্ষ করে তিনি বলেন, তোমরা যখন কাউকে সালাম দেবে তখন পরিপূর্ণ সালাম অর্থাৎ ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহ’ বলবে। এতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ সওয়াবের হকদার বানিয়ে দেবেন। (সুনানে তিরমিজি)।
এ ছাড়াও সালাম দাদা ও সালাম গ্রহিতার ব্যাপার রাসূল সা: আরো অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সকলকেই বেশি বেশি সালাম দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।