ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

রমজানের প্রস্তুতির সময় এখনই

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৫ মার্চ, ২০২২ ১৩:০১ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৩১ বার


রমজানের প্রস্তুতির সময় এখনই

প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যই পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কাজটা তাহলে সুন্দর, সাবলীল ও আন্তরিকভাবে সম্পাদন হয়। ইবাদতের আগে প্রস্তুতি গ্রহণ করা নবিজির সুন্নত। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, নবি করিম (সা.) অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মতো পবিত্র রমজানেও পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং উম্মতকেও এ ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন। নিম্নে রাসূল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী রমজানের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক বেশকিছু করণীয় বিষয় উল্লেখ করা হলো।


রমজান প্রাপ্তির জন্য দোয়া করা

আমলের তাওফিকের জন্যও দোয়া করা নবিজির স্বভাব ছিল। রমজান প্রাপ্তির জন্য রাসূল (সা.) রজব মাস থেকেই দোয়া করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, যখন রজব মাস প্রবেশ করত তখন রাসূল (সা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন। (তাবারানি, হাদিস ৩৯৩৯)।

পূর্বসূরি অনেকে আলেম থেকে রমজান পাওয়ার জন্য দোয়া করার কথা বর্ণিত হয়েছে। মুয়াল্লা বিন ফজল (র.) বলেছেন, তারা ছয় মাস দোয়া করতেন রমজান মাস পাওয়ার জন্য এবং ছয় মাস দোয়া করতেন তাদের আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্য। ইয়াইয়া বিন কাসির (র.) বলেন, হে আল্লাহ, আমাকে রমজান পর্যন্ত নিরাপদ রাখুন। রমজানকে আমার জন্য নিরাপদ করুন এবং রমজানের আমলগুলো কবুল করে আমার কাছ থেকে রমজানকে বিদায় করবেন। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৪৮)।

রমজানের জন্য দিনক্ষণ গণনা করা

রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে রমজানের জন্য শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা এবং দিনক্ষণ গণনা করাও রমজানপূর্বক একটি সুন্নাতি আমল। প্রকৃত অর্থে এটা রমজানের জন্য বিভোর প্রতীক্ষার একটি নিদর্শনও বটে; কেননা মানবীয় স্বভাব অধিক প্রত্যাশিত বস্তুর প্রতি সময় গণনার ব্যাপারে অধিকতর তৎপর হয়। রমজানের আগমনের জন্য মহানবি (সা.) দিনক্ষণ গণনা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস ২৩২৫)।

এমনকি তিনি শাবানের হিসাব রাখার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন, যেন রমজান আগমনের বিষয়ে সন্দেহে পতিত হতে না হয়। তিনি বলেন, তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখ। (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, ২/১০৩)।

রমজানের আগের দিনগুলোতে রোজা না রাখা

রাসূল (সা.)-এর জীবন থেকে বোঝা যায়, রমজানে দীর্ঘদিন রোজা রাখার দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে অধিক হারে রোজা পালন করা সুন্নত। তবে তা পুরো শাবান মাসে নয়। বরং রাসূল (সা.) রমজানের ঠিক আগেকার দিনগুলোতে রোজা রাখতেন না; এ সময় তিনি রমজানের প্রস্তুতিকল্পে শরীর গঠনে মনোযোগ দিতেন।

রাসূলের (সা.) এ রোজা ত্যাগ করার বিষয়টি অন্য হাদিস থেকে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, শাবানের তুলনায় অন্য কোনো মাসে আমি তাঁকে এত অধিক হারে রোজা পালন করতে দেখিনি। তিনি শাবানের প্রায় পুরোটাই রোজায় অতিবাহিত করতেন, তবে (রমজানের প্রস্তুতির জন্য) কিছু দিন বাদ রাখতেন। (মুসলিম, হাদিস ১১৫৬)।

জনসাধারণকে রমজানের প্রতি উৎসাহী করে তোলা

রমজানের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিসগুলোর অধিকাংশই রমজানের আগের বিভিন্ন বৈঠকে রাসূল (সা.) সাহাবিদের জানিয়েছেন। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, রমজান বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস হতে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো (মহাকল্যাণ থেকে)। (নাসায়ি, হাদিস ২১০৬)।

আরও বলতেন, ‘রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের কপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; তার একটি দরজাও খোলা হয় না। উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো, বন্ধ করা হয় না তার একটিও। একজন আহ্বানকারী আহ্বান জানিয়ে বলেন, হে কল্যাণের প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। আর যে অকল্যাণের প্রত্যাশী, বিরত হও। আল্লাহ জাহান্নাম থেকে অনেককে মুক্তি দেবেন এবং তা প্রতি রাতেই।’ (তিরমিজি, হাদিস ৬৮৩)।

রমজানের বিধান সম্পর্কে জানাশোনা

রমজানবিষয়ক অনেক হাদিস ও হাদিসাংশ থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) নিজেও রমজান মাসে সাহাবিদের রোজার নানা বিধান সম্পর্কে অবগত করাতেন, সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে ঋজু পথ আঁকড়ে ধরতে উৎসাহিত করতেন। একইভাবে বর্তমান সময়ে, যারা উম্মতের মহান আলেম ও বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব ও সম্মানিত দায়ী, তারা সাধারণ মানুষকে রমজানের যাবতীয় হুকুম সম্পর্কে জ্ঞাত করাবেন এবং রমজানের পূর্ব ও মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন।

সাধারণ মুসলমানের কর্তব্য হলো, রমজানে পালিত যাবতীয় এবাদত ও জিকির-আজকারবিষয়ক বিধিবিধান সম্পর্কে পূর্ণ অবগতি লাভ করা। রমজানবিষয়ক বইপত্র অধ্যয়ন করা এবং অডিও প্রোগ্রাম শ্রবণ করে স্বচ্ছ ধারণা লাভে প্রয়াস চালানো। ইলম ও জ্ঞানের মজলিসগুলোতে হাজির হওয়া।

রমজানের আগমন সংবাদে আনন্দ প্রকাশ করা

রমজানের আগমনে মুমিন বান্দামাত্রই আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আর আনন্দিত হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। আল্লামা ইমাম সাদি (র.) বলেন, ইহকালীন ও পরকালীন বিপুল নেয়ামতরাজির সঙ্গে পার্থিব জগতের অর্জনের কোনো তুলনা নেই; পার্থিব সঞ্চয় তা যতই অঢেল ও বিচিত্র হোক না কেন, একদিন তা অবশ্যই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালা তাই তার প্রদত্ত ফজিলত ও করুণাকে আনন্দের উপকরণ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন এবং তাকে স্ফূর্তির মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-‘বল, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক। তারা যা সঞ্চয় করে এটা তার চেয়ে উত্তম।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত ৫৮)।

রাসূলে করিম (সা.) তাই নিজেও অতিশয় আনন্দিত হতেন এবং বিভিন্ন সময়ে রহমত-বরকত ও কল্যাণ বর্ষণ এবং অবতরণের উপলক্ষ্য ও অনুষঙ্গগুলোর কারণে ব্যাকুল হতেন। সাহাবিদের বলতেন, তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। (নাসায়ি, হাদিস ২১০৬)।

রমজান একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম। এবং নিজের গোনাহ্ খাতাকে কেটে আমলে সালেহ দ্বারা জীবনকে সাজিয়ে সেমতে সারা বছর চলার ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণ দেয় এই রমজান। অতএব, প্রত্যেক মুমিনের মাহেন্দ্রক্ষণ এ রমজানের সদ্ব্যবহারের উত্তম প্রমাণ হলো-এ ব্যাপারে নবিজি (সা.)-এর মতো করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা, মানসিক ও আত্মিকভাবে রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য ব্যাকুল হওয়া; তা যেন পূর্ণাঙ্গভাবে কল্যাণব্রতী হয় এবং সময়গুলো পরিপূর্ণ কাজে লেগে জীবন সুন্দর ও আলোকিত হয়।


   আরও সংবাদ