ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

রমজানের হিকমাত ও করণীয়

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৪ এপ্রিল, ২০২২ ১০:০৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৮০ বার


রমজানের হিকমাত ও করণীয়

‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসকে পাবে, সে এতে রোজা রাখবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫) এ আয়াত থেকেই বোঝা যায়, রোজা আমাদের ওপর ফরজ। এটি আল্লাহর নির্দেশ যে, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ। আর এই রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর নয়, বরং পূর্ববর্তী নবী ও তাঁর উম্মতের ওপরও ফরজ ছিল, যদিও তাদের বিধান ছিল ভিন্ন। মুসা আ: ও তাঁর উম্মতরা আশুরার দিন রোজা রাখতেন। দাউদ আ: অর্ধ বছর রোজা রাখতেন। (সহিহ বুখারি) আর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে রমজানের রোজা রাখার ফরজ বিধান ধার্য হওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ সা: মুসলমানদের মাসে তিনটি রোজা ও আশুরার রোজা রাখার জন্য উৎসাহিত করতেন। তো রোজা রাখা মানে শুধু যে অভুক্ত থাকা, তা নয়। আমাদের বুঝতে হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না খেয়ে থাকায় কী কী শিক্ষা, জ্ঞান বা হিকমাত লুকায়িত আছে-

প্রথমত, মহান আল্লাহ পৃথিবীকে নিয়ামতের দস্তরখান হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সূরা তালাকের ৩ নম্বর আয়াতে ‘তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে’ অর্থাৎ মানুষের কল্পনাতীত উপায়ে নিয়ামতগুলো সরবরাহ করে মহান আল্লাহ তাঁর পরিপূর্ণ রুবুবিয়াত (প্রভুত্ব), রাহমানিয়াত ও রাহিমিয়াতকে উপস্থাপন করছেন। তবে মানুষ গাফিলতিতে নিমজ্জিত হওয়ায় এটা নিয়ে চিন্তা করে না। একইভাবে এই রমজান মাসকে আমরা বলতে পারি ঞযরং রং ঃযব সড়হঃয ড়ভ অষষধয’ং ইধহয়ঁবঃ. সত্যই, এ মাসে কল্পনাতীত উপায়ে আমাদের ইফতারের দস্তরখান ভরে যায়। অতএব, কৃতজ্ঞ কিংবা চিন্তাশীল মানুষ ছাড়া কে এই মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতে অংশগ্রহণ না করে থাকতে পারে?

দ্বিতীয়ত, রমজান আমাদেরকে সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। এখানে কোনো নিয়মের ব্যতিক্রম নেই, সবার জন্য এক নিয়ম। সাহরি একটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে হবে; এরপর আর কোনো পানীয় বা খাবার গ্রহণ করা যাবে না। তেমনি ইফতারের সময় হয়ে গেলে আর দেরি করা যাবে না। অতএব, এটা আমাদের সময়ের যথাযথ ব্যবহার, সময় অপচয় না করা, তেমনি সময়ের কাজ সময়ে করতে শিক্ষা দেয়।

তৃতীয়ত, রোজা হলো খালিস মনে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের কাছে শুকরিয়া আদায়ের চাবিকাঠি। আমরা নিয়ামতের মধ্যে ডুবে থাকলে বুঝি না, আল্লাহ প্রদত্ত কী পরিমাণ রহমতের মধ্যে আছি। বুঝি তখন, যখন সেই নিয়ামতটি থাকে না। তাই, অপরিমিত খাবারে অভ্যস্ত আমরা যখন রবের হুকুমে অভুক্ত থাকি, তখন বুঝি সামান্য পানিটা আল্লাহর কত বড় নিয়ামত! সুতরাং, আলহামদুলিল্লাহ!

চতুর্থ হিকমাত হলো- এ মাসটি যেন দরিদ্রদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে আহ্বান করে। কারণ অভুক্ত না থাকলে দরিদ্রদের যন্ত্রণা, কষ্ট হয়তো বুঝা সহজ হতো না। অথচ নফসের পূজারী ধনীরাও রমজানের এই তাৎপর্য বুঝতে বাধ্য হয়।

পঞ্চম হিকমাত হলো- নফসের নিয়ন্ত্রণ। আমাদের নফস সবসময় স্বাধীন ও মুক্ত থাকতে চায়। সব কিছুতে নিজের রুবুবিয়াত (প্রভুত্ব) দেখতে চায়, কোনো কিছুতে সে অন্যের বাধা মানতে রাজি হয় না, কিন্তু এই রমজানে নফসকেও বুঝতে হয় যেÑ সামান্য কিছুও আমার পালনকর্তার মর্জি ছাড়া, এমনকি পান কিংবা খাওয়াও যাবে না। আর এই নিয়ন্ত্রণ আমাদের জিহ্বা, চোখ, কান ও পেটকেও প্রভাবিত করে। জিহ্বার রোজা হয়Ñ মিথ্যা, গিবত ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে। চোখের রোজা হয়Ñ হারাম থেকে বিরত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলোতে দৃষ্টি নিবন্ধনের মাধ্যমে। কানের রোজা হয়Ñ অশ্লীল কিছু শ্রবণ থেকে বিরত থেকে কুরআন ও সত্যকে শ্রবণের মাধ্যমে। একই সাথে খাবার থেকে বিরত থাকায় আমাদের শরীরের বড় কারখানা এ পাকস্থলীও তার যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখে এবং নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ পর্যায়ে রমজান মাসের করণীয় নিয়ে বলতে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটাকে কদরের রাতে নাজিল করেছি।’ (সূরা কদর, আয়াত-১) সুতরাং, এ মাসে আমাদের চেষ্টা থাকবে আমরা যাতে কুরআনের বাণী বুঝতে পারি, এর হক আদায় করতে পারি। পুরো মানবজাতির জন্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে যে নির্দেশিকা এসেছে- সেটি না পড়ায় অনেক মুসলমানই আজ হতাশা আর বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। তারা জানে না সত্য-মিথ্যার পার্থক্য, জানে না জীবনের মানে। আবার এমনও দেখা যায়- কুরআন পড়তে চায় কিন্তু কোন লেখকের বই থেকে এর অর্থ পড়বে, কোন তাফসির পড়বেÑ এটা নিয়েও চিন্তা। তাদের উদ্দেশে বলবÑ যারা জানে, তাদের জিজ্ঞেস করুন। আর তাও সম্ভব না হলে হাতের কাছে যে বই আছে তা দিয়েই শুরু করুন। কুরআন বুঝতে দরকার একটি পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা; যা এ কুরআনের মাস থেকেই শুরু করা যায়।
 
দ্বিতীয়ত, এ মাসে আমরা যাতে আমাদের অধীনস্থদের প্রতি দয়া করি। অনেক পরিবারে অধীনস্থ তো দূর, পরিবারের সদস্যের ওপরও অতিরিক্ত কাজের চাপ ফেলা হয়। অতএব, এসব করা থেকে আমরা যাতে বিরত থেকে তাদেরও বেশি বেশি ইবাদতের সুযোগ দিই। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা জমিনবাসীর ওপর রহম করো, আসমানবাসী তোমাদের ওপর রহম করবেন।’ (তিরমিজি)

তৃতীয়ত, রমজান মাসে লাভ কম করা উচিত। আল্লাহর রহমতের মাসে আসুন আমরা একে অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করি। ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ঋণ দাও, তবে তিনি তোমাদের জন্য এটি বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা তাগাবুন, আয়াত-১৭) অর্থাৎ খালিস নিয়তে আন্তরিকতার সাথে এবং সন্তুষ্ট মনে যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হয় তাহলে তা বৃথা যাবে না, বরং তা ঋণের মতো পরিশোধ করা হবে। আর সেই সাথে গুনাহগুলোও মার্জনা করা হবে।

সবশেষে বলব, পবিত্র কুরআনের সূরা আরাফের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তোমরা খাও, পান করো কিন্তু অপচয় করো না’। সুতরাং ইফতার হোক কী অন্য সময়েও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যাতে অপচয়কারী না হই। কারণ, অপচয় হলো শুকরিয়ার বিপরীত। আর মিতব্যয়িতা হলো বরকত লাভের এবং সুন্দরভাবে জীবন যাপনের সুনিশ্চিত মাধ্যম।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন এবং তাকওয়ার সাথে রোজা পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।


   আরও সংবাদ